ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মধ্যরাতে জ্বালানির রেকর্ড লাফ

স্টাফ রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ৫ আগস্ট ২০২২, শুক্রবার, ১১:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

mzamin

মধ্যরাতে ফিলিং স্টেশনে ভিড়। ছবি- জীবন আহমেদ

মধ্যরাতে রেকর্ড পরিমাণে বাড়লো জ্বালানি তেলের দাম। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম বেড়েছে ৩৪, অকটেন ৪৬ এবং পেট্রোল ৪৪ টাকা। গতরাত ১২টার পর থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে। এর আগে রাতে অনেকটা আচমকা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কথা জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়ে প্রতি লিটারের দাম হয়েছে ১৩০ টাকা। আর অকটেনের দাম বেড়েছে ৫১.৬৮%, প্রতি লিটার কিনতে গুনতে হবে ১৩৫ টাকা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, বৈশ্বিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) পরিশোধিত এবং আমদানি করা ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে আগে কখনও জ্বালানি তেলের দাম একসঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি। এবার ভারতের সঙ্গে দামের পার্থক্য পুরোপুরি দূর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একেবারে কমিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি। সরকার আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।

বিজ্ঞাপন
আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সে শর্ত পূরণ করা হচ্ছে বলেও অনেকে বলছেন। 

এর আগে গত বছরের ৪ঠা  নভেম্বর থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করে সরকার। তবে অকটেন ও পেট্রোলের দাম অপরিবর্তিত ছিল। এবার এত বেশি  দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম। তিনি বলেছেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।
দাম বৃদ্ধির ঘোষণা চাউর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাতে চারদিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। ফিলিং স্টেশনে গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে ভিড় করতে থাকেন অনেকে। তবে ফিলিং স্টেশনগুলো বিক্রি বন্ধ করে দেয়। মূল্যস্ফীতির চাপে এমনিতেই কাবু মানুষ। এখন পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকে। 
 

প্রতিমন্ত্রী যা বলেছিলেন
গতকালই দিনের বেলায় জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ‘যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার সময় এসেছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল রাজধানীর বারিধারায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বিদ্যুৎ-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এই ইঙ্গিত দেন। ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ভাবনার কথা গত সপ্তাহ থেকেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ-জ্বালানি বিষয়ে এফবিসিসিআই’র আলোচনায় প্রয়োজনে দাম বাড়িয়ে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি উঠেছিল কয়েকজন ব্যবসায়ীর কণ্ঠে। তার পরদিনই প্রতিমন্ত্রীর কথায় বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। গত ৫ই জুন গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন খুচরায়ও দাম বেড়েছিল। 

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গত মে মাসে, যার ওপর এ মাসেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের প্রাইসের অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপারে আমরা অপেক্ষায় আছি। গ্যাসের ব্যাপারে আমরা আরেকটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে চাচ্ছি। তেলেও একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হবে। তেলের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, যেহেতু বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম ঊর্ধ্বমুখী, সেই জায়গায় আমাদের খুব চিন্তাভাবনা করতে হবে। এটার সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ওপর। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন এগুলো যেন একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। দেশ ও দশের কথা চিন্তা করে আমরা একটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যাবো। বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মিতভাবে জ্বালানির দাম সমন্বয় করার পক্ষে মত দিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘যদি বাড়তির দিকে থাকে, তবে বাড়তি, যদি কমতির দিকে থাকে তাহলে কমতির দিকে। এখন যেহেতু বাড়তির দিকে, তাই পার্শ্ববর্তী দেশ ও বিশ্বের অবস্থা বিবেচনায় একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়া উচিত। যদি বিশ্ববাজারে দাম কমে আসে, আমরাও চেষ্টা করবো সেই অনুযায়ী দাম কমাতে।’ 

কিছুদিন আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে দামটা বাড়িয়েছি সেটা গত বছরের ডিসেম্বরের পরিস্থিতি বিবেচনায়। সে কারণে আমি মনে করি গ্যাসে আমাদের আরেকটা অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়া উচিত। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৭০ ডলারের ওপরে উঠে গেলেই আমরা লোকসানের মধ্যে পড়ে যাই।’ ইতিমধ্যে বিপিসি নিজের থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার মতো লোকসান দিয়েছে। তাই আমি মনে করি বিশ্ব বাজারের সঙ্গে একটা অ্যাডজাস্টমেন্ট থাকা উচিত। না হলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই এভাবে সমন্বয় করতে হচ্ছে মন্তব্য করে নসরুল হামিদ বলেন, আমরাই কেবল বসে আছি। তেলের মার্কেটে এখন পুরোপুরি লস দেয়া হচ্ছে। পাশের দেশে তেলের দাম বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এমন হচ্ছে। ডিজেলসহ অন্যান্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে জনজীবনে যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও সরকার চিন্তাভাবনা করছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী; দাম বাড়ালেও কৃষি খাতে দাম অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত দেন। 

ডিজেলের ক্ষেত্রে কৃষিতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি তেল ব্যবহার হয় পরিবহন খাতে। খুব বেশি পরিবর্তন হবে না বলে আমরা হিসাব করে দেখেছি। এজন্য আমরা বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করার চিন্তা করছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি ডিজেলের দাম বাড়লে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ে ১ টাকা থেকে ২ টাকা। বিষয়টা যদি ওই রকমভাবে সমাধান করা যায়, অবশ্যই অ্যাডজাস্টমেন্ট করা উচিত। দেশীয় চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকায় দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে আমদানি বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান নসরুল হামিদ। আবার দেশীয় উৎপাদনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে একেক সময় একেক ধরনের তথ্য পেয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির শিকার হওয়ার কথাও বলেন নসরুল হামিদ। গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে আমরা দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে যাবো। যারা আমাদের কাছে প্রস্তাব করেছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। যারা এখনো প্রস্তাব করেনি, তাদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। বিশেষ করে কাতার এখনো প্রস্তাব পাঠায়নি। তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আমাদের আলোচনা এবং চুক্তিতে যেতে হবে। এর বাইরে গ্যাসকূপ খননে বাপেক্সসহ বিদেশি কোম্পানিগুলোকে কাজে লাগাবো। এজন্য আমরা টেন্ডার করবো।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status