শেষের পাতা
সিলেট নগর বিএনপি নেতাদের ঢাকায় তলব
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৬ আগস্ট ২০২২, শনিবার
সিলেট মহানগর বিএনপি’র ২৭টি ইউনিট। এরমধ্যে ১৭টিতে এপ্রিলেই দেয়া হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। সম্মেলনের জন্য কয়েকটি ওয়ার্ড প্রস্তুত। কিন্তু এখনও ১০টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি হয়নি। বলা হচ্ছে; সাংগঠনিক নেতারা কাজ না করার কারণে মাঝপথে থেমে গেছে সাংগঠনিক গতি। অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে নগর নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সর্বশেষ আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি ও সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে- গত বৃহস্পতিবার সদস্য সচিবকে ছাড়াই সাংগঠনিক সভা করেছে মহানগর বিএনপি। তবে- এতে বেশির ভাগ নেতা অনুপস্থিত ছিলেন। এই অবস্থায় সিলেট মহানগর বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ বিরোধ ও কার্যক্রমে স্থবিরতা নিয়ে চিন্তিত দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার মতো মহানগর বিএনপি’র নেতৃত্ব বাছাই করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করতে পারেননি নেতারা। উল্টো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। মুখোমুখি অবস্থানে নেয়া দুই অংশের মধ্যে একাংশের দাবি হচ্ছে- নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের জন্য ১০টি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে বাকি থাকা ওয়ার্ডের সাংগঠনিক টিমের নেতারা দলের গতি মন্থর করতে ওয়ার্ড পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেননি। উল্টো এ নিয়ে তারা নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করেন। এ কারণেই মহানগরের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে গতি কমেছে। উল্টো দিকে আবার দেখা গেছে, সম্পন্ন হওয়া ১৭ ওয়ার্ডের সাংগঠনিক নেতারা ছিলেন সক্রিয়। এতে করে অনেক আগেই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা এবং এখন কয়েকটি ওয়ার্ড সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। নেতারা জানিয়েছেন; সিলেট মহানগর বিএনপিতে বিরোধ কয়েক মাস ধরেই বিরাজমান। এই বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বিক্ষোভ শেষ করে সমাবেশ না করেই সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী চলে যান। আর তার ফিরে আসার মধ্য দিয়ে বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে।
এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার বিকালে আহ্বায়কের ভাতালিয়াস্থ বাসায় মিফতাহ সিদ্দিকী ছাড়াই সাংগঠনিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও আগামী কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করতে জরুরি সভা হয়েছে। সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ও সাবেক প্যানেল মেয়র আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকির সভাপতিত্বে ও ১ম যুগ্মআহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহীনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় যুগ্মআহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, নজীবুর রহমান নজীব, সদস্য- আমির হোসেন, মো. আফজল উদ্দিন, হুমায়ুন আহমদ মাসুক, নুরুল আলম সিদ্দিকী খালেদ, সৈয়দ সাফেক মাহবুব, মুকুল মুর্শেদ, মো. আবুল কালাম, আক্তার রশীদ, শামীম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। তবে- সভায় মিফতাহ সিদ্দিকীসহ বেশির ভাগ নেতাই উপস্থিত হননি। নেতারা জানিয়েছেন- গত মঙ্গলবার সমাবেশ শেষ না করে ফিরে আসা যেমনি মিফতাহ সিদ্দিকীর জন্য শুভ হয়নি, তেমনি মিফতাহ সিদ্দিকীকে ছাড়া সাংগঠনিক সভার আয়োজনও নেতাকর্মীরা ভালোভাবে মেনে নেননি। দু’দিকেই গলদ রয়েছে।
এই অবস্থায় মহানগর বিএনপিতে গতি আনতে ঐক্যের বিকল্প নেই জানিয়েছেন কয়েকজন যুগ্মআহ্বায়ক ও সদস্য। তাদের মতে- মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি হওয়ায় অনেকেই বিব্রত। কেউ কেউ নীরব। তবে- মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকি জানিয়েছেন- ‘সিলেট বিএনপি একটি পরিবারের মতো। এখানে সংগঠনের স্বার্থে ব্যক্তি পর্যায়ে বিরোধ জড়ানো ঠিক নয়। আমরা দলের স্বার্থে সবাই ঐক্যবদ্ধ। আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি। আবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সিলেট মহানগর বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’ সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকীও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এজন্য মহানগরের নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করবেন বলে জানান। তিনি বলেন- ‘রোববার সিলেট মহানগর নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। ওইদিন বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক হবে। এতে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকের মাধ্যমে সিলেট মহানগর নেতাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।’