শেষের পাতা
স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালার দাবিতে মেট্রোরেল বন্ধের হুমকি
স্টাফ রিপোর্টার
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, বুধবার
স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালা প্রণয়নের জন্য আগামীকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে হুমকি দিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরমধ্যে দাবি মানা না হলে শুক্রবার থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের হুমকি দেন তারা। তবে এই হুমকি দাবি আদায়ে সরকার ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিতেই দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল সূত্র। শুক্রবার থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের কর্মসূচিতে যাবেন না দাবি জানানো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের কোনো সুযোগ নেই। স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালা প্রণয়নের জন্য ডিএমটিসিএল কাজ করছে। ইতিমধ্যে চাকরির বিধিমালার একটি খসড়াও প্রকাশিত হয়েছে।
ডিএমটিসিএলে সরাসরি উন্মুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা-কর্মচারীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন করতে গত ১২ই সেপ্টেম্বর নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে বিধিমালা প্রণয়ন করে সড়ক বিভাগে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আসে ডিএমটিসিএলের ৬০তম বোর্ড সভায়। এরপর পাঁচ মাস পার হলেও ‘রহস্যজনক কারণে’ সেই বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা না থাকায় ডিএমটিসিএলের ২০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, আগামী ৩ কর্মদিবস অর্থাৎ ১৮-২০শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন না হলে, আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) থেকে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ থাকবে এবং ঢাকাবাসী মেট্রোরেল সেবা থেকে বঞ্চিত হলে ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে দায় থাকবে।
মেট্রোরেল সূত্র জানিয়েছে, সড়ক উপদেষ্টার নির্দেশনার পরও মেট্রোরেলের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি ঝুলে আছে। কারণ হিসেবে ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রকল্পের কেউ সরাসরি কোম্পানিতে যোগ দিতে পারে না। তাকে একটা সার্কুলার হয়ে আসতে হয়। তবে মেট্রোরেল প্রকল্পের কর্মকর্তারা চায়, কোনো পরীক্ষা না দিয়ে সরাসরি প্রকল্প থেকে ডিএমটিসিএল কোম্পানিতে যোগ দেয়ার। চাকরির বিধিমালা হয়ে গেলে সেটি তারা পারবেন না।
ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানায়, আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি ডিএমটিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফের শেষ কর্মদিবস। তার বিদায়ে নতুন এমডি আসায় এই বিধিমালা প্রণয়নের বিষয়টি আরও ঝুলে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন দাবি জানানো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই তারা আবদুর রউফ থাকাকালীন বিধিমালাটি প্রণয়নের জন্য চাপ দিচ্ছেন। এজন্য গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি এমডিকে অবরুদ্ধও করে রেখেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরপর চাকরির বিধিমালার একটি খসড়া প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত চাওয়া হয়।
মেট্রোরেল বন্ধের যে হুমকি দেয়া হয়েছে সেটি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিধিমালা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চাপে রাখার জন্য দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিধিমালা প্রণয়নে দাবি তোলা ডিএমটিসিএলের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে আমাদের সার্ভিস রুল প্রণয়ন করার কথা ছিলো। কিন্তু ৬০ কর্মদিবস পাড় হওয়ার পর পাঁচ মাস চলে গেছে। এরমধ্যে সার্ভিস রুলের খসড়াই প্রণয়ন করতে পারে নাই। আমরা চাপ দেয়ার পর সেটি করেছে। আমরা মূল বেতন ছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা পাই না। কোম্পানিরগুলোর অনেক ভাতা-সুযোগ, সুবিধা থাকে। আমাদের তার কিছুই নেই। চাকরির নিশ্চয়তা নেই। মেট্রোরেল বন্ধ রাখার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি জানান, মেট্রোরেলে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। এই মুহূর্তে মেট্রোরেল বন্ধ করা মানুষের জন্য ভোগান্তির কারণ হবে। সেটি তারা চান না। বলেন, আমাদের কাজ অনেক এগিয়েছে। তবে আমরা আশাবাদী দ্রুতই আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে।
এদিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালা প্রণয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি শুধু ডিএমটিসিএলের এখতিয়ারে নেই। ইতিমধ্যে তারা একটি খসড়াও প্রণয়ন করেছে। ডিএমটিসিএলের কোম্পানি সচিব খোন্দকার এহতেশামুল কবীর মানবজমিনকে বলেন, মেট্রোরেল বন্ধের কোনো বিজ্ঞপ্তি ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। কে দিয়েছে সেটিও আমাদের জানা নেই। মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ডিএমটিসিএল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরির বিধিমালা প্রণয়নের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা যে দাবি জানিয়েছে সেই কথা আমরা শুনছি। আমরা এটার একটা খসড়া ওয়েবসাইটে দিয়েছি। সেটার ওপর মতামত নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।