প্রথম পাতা
রাতের ভোটের অনুসন্ধানে দুদক
স্টাফ রিপোর্টার
২৩ জানুয়ারি ২০২৫, বৃহস্পতিবার২০১৮ সালে ‘রাতের ভোট’ আয়োজনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের
নেতাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দুদকে একটি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ র্যাবসহ জড়িত সকলের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আক্তার হোসেন বলেন, ওই রাতের নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হবে। দুদক সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়ম যেমন- দিনের ভোট রাতে করা, ব্যালট জালিয়াতি, কিছু কিছু কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট দেখানো, ব্যাপক আর্থিক লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রার্থীকে জেতানো বিষয়ে দুদকে কিছু অভিযোগ জমা হয়েছে। অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে প্রতিটি মহানগর, জেলা, বিভাগীয়, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মী নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা যেমন- পুলিশের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, র্যাব’র প্রধান বেনজীর আহমেদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, তৎকালীন জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, জেলা প্রশাসক, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, থানার অফিসার ইনচার্জ, জেলা/উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তার যোগসাজশের উল্লেখ রয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদ এবং নির্বাচনের ফলাফল সিট পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করে অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেএম নূরুল হুদার কমিশনের অধীনে। সেই কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার বিদায় বেলায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেনি। জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-এর অস্তিত্ব ছিল না। যদিও সিইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে বলে দাবি করেন।
তিনি বলেছিলেন, জেলা প্রশাসকরা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সিটিং এমপিদের বিষয়ে তাদের নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা সম্ভব ছিল বলে মনে করি না। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, এতেই বোঝা যায় নির্বাচন কেমন হয়েছে? এভাবে না-অবাধ, না-সুষ্ঠু, না-নিরপেক্ষ, না-আইনানুগ, না-গ্রহণযোগ্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। সে অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই পরের তিনটি নির্বাচন হয়। প্রশ্নবিদ্ধ ওই তিন নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করে যায়। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।
এদিকে দুদক সূত্রে জানা গেছে, শুধু ২০১৮ সালের নির্বাচন নয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। বিতর্কিত ও সাজানো নির্বাচন আয়োজন করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। চলতি অনুসন্ধানের সঙ্গে বাকি নির্বাচনে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্রটি। এর আগে গত ১৭ই জানুয়ারি মানবজমিন-এ ‘সাবেক ইসিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করবে দুদক’- শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনে সাবেক তিনটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকা সিইসি ও ইসিসহ নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে বলে জানানো হয়।
২০১৮ রাতের ভোট করেছে প্রতিটি ওয়াডে পদধারী ছাত্র লীগ যুব লীগ নেতারা