শেষের পাতা
ভ্যাটের লম্বা জাল
মোহাম্মদ রায়হান
২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার
ভ্যাট নিয়ে আলোচনা দেশ জুড়ে। চলতি অর্থ বছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। অধ্যাদেশ জারি করে ভ্যাট বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারে লেগেছে ভ্যাটের আছড়। এমনিতেই সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তার ওপর শতাধিক নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট আরোপ করায় সংসার খরচে ধাক্কা লেগেছে। মোবাইল রিচার্জ থেকে শুরু করে লন্ড্রি পর্যন্ত কোথায় দিতে হয় না ভ্যাট? কিন্তু এ ভ্যাটের টাকা যায় কোথায়? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কতটুকু আদায় করতে পারছে ভ্যাট। কিন্তু সাধারণ মানুষের পকেট থেকে ঠিকই নেয়া হচ্ছে ভ্যাট।
মহাখালীর রাজভোগ সুইটস অ্যান্ড বেকারিতে লতিফ নামে একজন এসেছেন মিষ্টি কিনতে। এসে দেখেন মিষ্টির দাম বেড়েছে। কারণ সরকার ভ্যাটের পরিমাণ বাড়িয়েছে। তিনি মিষ্টি কিনলেন। অতিরিক্ত দাম রাখা হলো। কিন্তু তাকে কোনো রশিদ দেয়া হলো না। এখানে রয়েছে বিরাট ফাঁকি। কর্তৃপক্ষ মিষ্টি বিক্রি করেছেন, গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট নিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। এই অতিরিক্ত ভ্যাট কর্তৃপক্ষের তহবিলেই থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বলেন, আমরা প্রতি মাসেই ভ্যাট দেই। ভ্যাট অফিস থেকে মেশিন দিয়ে যায়। আমরা রিসিট কাটি। কিছু টাকা ব্যাংকে দিই, কিছু ভ্যাট অফিসে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার সময় মুঠোফোন সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করেছিল বিগত সরকার। এ কারণে মোবাইল অপারেটরগুলো তাদের সেবার দামও বাড়িয়ে দেয়। ২০ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সব মিলিয়ে কর দিতে হতো ৫৪ দশমিক ৬ টাকা। নতুন অধ্যাদেশ অনুযায়ী ৩ শতাংশ বাড়ালে ১০০ টাকায় কর হয় ৫৬.৬ টাকা। বেসরকারি গণমাধ্যমে কাজ করেন তাওসিফ মাইমুন। তিনি বলেন, পাশের দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের দেশে ইন্টারনেট খুবই ধীরগতির। কিন্তু আমাদের চড়া মূল্যে ডেটা কিনতে হয়। তাছাড়া অপারেটরগুলোর কল রেটের যে হার তার অবস্থা আরও খারাপ। আরোপিত ভ্যাটের চাপে অপারেটরগুলো দাম বাড়াচ্ছে, এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে মোবাইল ফোন চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর যারা আছে যেমন- কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি পেশার লোকদের জন্য মোবাইল ফোনের খরচ চালানো কষ্টকর।
সম্প্রতি সরকারের জারিকৃত অধ্যাদেশে দেখা যায় যান্ত্রিক লন্ড্রিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীর একাধিক লন্ড্রি দোকানে কথা বলে জানা গেছে তারা জানেন-ই না লন্ড্রিতেও ভ্যাট দেয়ার প্রয়োজন হয়। মগবাজার এলাকার শান্তা লন্ড্রি কর্তৃপক্ষ বলেন, ভ্যাট নাই কোথায়? সব কিছুতেই ভ্যাট দেয়া লাগে। আমাদের কাপড়গুলো বড় কারখানায় পাঠিয়ে দিই। সেখানে তারা দেয় ভ্যাট। আমাদের সরাসরি ভ্যাট দিতে হয় না।
মগবাজার সিগন্যালে কথা হয় রিকশাচালক আল ইমরানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা যে ভ্যাট দেই তা দিয়েই সরকার চলে, সরকারি লোকজনের পরিবার চলে। আমরা এক বোতল পানি কিনে যে খাই ওটাতেও ভ্যাট দিই। এই যে রিকশার পার্টস কিনা লাগে, এখানেও ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু এই ভ্যাট সরকার কতটুকু পাচ্ছে সেটাই বিষয়। মগবাজার এলাকায় জুতা মেরামতের কাজ করেন গৌর। সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে কাজ করছিলেন। ভ্যাটের ব্যাপারে তিনি বলেন, কি করবো, সবার যে গতি, আমারও সে গতি। ভ্যাট বাড়ছে শুনছি। মহাখালী এলাকার হোটেল জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালের এক কর্মী জানান, আমরা সরকারকে ভ্যাট দিই। তবে বর্ধিত ভ্যাট আমাদের এখানে এখনো কার্যকর হয়নি। কথা হলো- ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। এই ভ্যাটের জালে বন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। কিন্তু কোম্পানিগুলো থেকে সরকার ভ্যাট আদায় করে কীভাবে? সংশ্লিষ্টরা জানান, এখানে চলে শুভঙ্করের ফাঁকি। সরকারকে পণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় করতে নির্ভুল পদ্ধতি বের করতে হবে। তবেই সরকার লাভবান হবে। অন্যথায় কোম্পানিগুলোই ভ্যাটের টাকায় আরও বড় হবে।
পাঠকের মতামত
শুধু মোবাইল ফোন কোম্পানী গোলোর টেক্সের টাকা দিয়েই দেশ ছলার কথা। মিনিট হিসেব করে টেক্স নেয়। আর সরকার কে কি দেয় তা তো দেখাই যাচ্ছে। গ্রামীন ফোন কে কোর্টে যেতে হয়। বাকিটা ইতিহাস।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শপিংমল, দোকান বাজারে একটি চকোলেট কিনলেও ট্যাক্স দিতে হয় । এটি একটি সিস্টেমে পরিণত হয়েছে । আমাদের দেশে চালু হোক, সকলে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। বড় বড় শপিং মলে ক্রেতার কাছ থেকে ট্যাক্স নিয়ে সরকারের কাছে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করছে। এন বি আরের সাথে শেয়ারিং করে পার পেয়ে যাচ্ছে। শুধু ভ্যাট বসালে হবে ঠিক ভাবে আদায় করলে সরকার দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে, এখন যা ব্যক্তি উন্নয়নে সহায়ক হচ্ছে।