শরীর ও মন
শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশি
ভালোবাসায় সেরে উঠুক আপনার সোনামণি
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবারআপনার কোলের সেই ছোট্ট মুখটা যখন ক্লান্তিতে ঢলে পড়ে, কিংবা বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে, তখন আপনার হৃদয়ের ভেতর যেন কেমন এক অজানা শঙ্কা ঢুকে পড়ে, তাই না? ‘কেন এমন হচ্ছে?’ প্রশ্নটা কেবল মাথায় ঘুরপাক খায়। শিশুর জ্বর, সর্দি, কাশি তো সাধারণ ব্যাপার, তবুও মায়ের চোখে সেটি যেন বিশাল এক ঝড়। আসুন, আজ জেনে নিই কীভাবে এই ঝড় সামলাবেন, কীভাবে আপনার ভালোবাসার স্পর্শে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।
জ্বর: গোপন বার্তার মতো একটি উপসর্গ
জ্বর কি তবে কোনো শত্রু? আসলে নয়। জ্বর আমাদের বলে দেয় শরীরে কোনো সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শিশুকে তো আর কষ্ট পেতে দেয়া যায় না!
যদি আপনার শিশুর তাপমাত্রা ১০০.৪ক্কঋ ছাড়িয়ে যায়, তখন ঘাবড়ে যাবেন না। বরং-
* একটি ভালোমানের ডিজিটাল থার্মোমিটারে নিয়মিত মেপে দেখুন জ্বরের মাত্রা।
* হালকা আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে দিন।
* বুকের দুধ অথবা পানি খাওয়ান। এই সময় শিশুর পানিশূন্যতা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। খেয়াল রাখুন।
* চিকিৎসকের পরামর্শে ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দিন।
* কপালে এবং হাত-পায়ে হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। সরাসরি ঠাণ্ডা পানির সেঁক দেবেন না।
আর যদি জ্বর ২/৩ দিনের বেশি থাকে, বা তাপমাত্রা ১০৪ক্কঋ ছাড়িয়ে যায়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। শিশুর মুখে আপনার হাসির ছোঁয়া ফেরানোই তো আমাদের লক্ষ্য!
সর্দি: শিশুর নাক বন্ধ? সমাধানের পথ খুলে দিন
সর্দি মানে যেন শিশুর ঘুম কাড়ার এক চক্রান্ত। যখন নাক বন্ধ হয়ে যায়, তখন খাওয়ার ইচ্ছাও কমে যায়। কিন্তু সমাধান আছে।
* স্যালাইন ড্রপ দিন: নাকে কয়েক ফোঁটা স্যালাইন ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করুন। বাজারে নরসল, সলো, নোজোমিস্ট বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়।
* বাষ্পের জাদু: গরম পানির বাষ্পে শিশুর নাক খুলে যাবে।
* বিছানার পজিশন: মাথার নিচে সামান্য উঁচু বালিশ দিন।
মনে রাখবেন, সর্দি এমন কিছু নয় যা শিশু সামলাতে পারবে না। আপনি যদি তার পাশে থাকেন, স্নেহের স্পর্শে তার অস্বস্তি কমে যাবে।
কাশি: বুকে জমে থাকা অস্বস্তির গল্প
শিশুর কাশি যেন ছোট্ট বুকের ওপর অদৃশ্য বোঝা। তবে সেই বোঝা লাঘব করা সম্ভব।
* হালকা গরম বাষ্প দিন, যেন শিশুর শ্বাসনালী মুক্ত হয়। তবে খেয়াল রাখবেন বেশি গরম হলে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।
* এক বছরের বেশি বয়সী হলে অল্প মধু দিন। এটি কাশির প্রাকৃতিক প্রতিকার।
* বুকের হালকা ম্যাসাজ শিশুকে আরাম দেবে।
* শিশুকে তরল খাবার, যেমন স্যুপ, ডাবের পানি খাওয়ান।
কিন্তু মনে রাখবেন, চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কখনোই কোনো কাশির সিরাপ দেবেন না।
মা-বাবার করণীয় ও সতর্কতা
* নিজের থেকে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করবেন না।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নতুন কোনো ওষুধ দেবেন না।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
শিশুর যদি যেকোনো একটি হলেও
* শ্বাসকষ্ট হয় বা শ্বাস নেয়ার সময় বাঁশির মতো শব্দ হয়।
* ত্বক নীলচে হয়ে যায়।
* কাশি ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যান। শিশুর স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবি রাখে।
প্রতিরোধের গল্প: সুস্থ রাখুন ভালোবাসায়
আপনার স্নেহ আর একটু সচেতনতাই শিশুকে সর্দি, কাশি থেকে দূরে রাখতে পারে।
* নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* শিশুর জন্য খোলামেলা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
* পুষ্টিকর খাবার ও আদর্শ জীবন অভ্যাস গড়ে তুলুন।
* শিশুকে বাইরের দূষিত বাতাস থেকে দূরে রাখুন।
* শিশুর দরকারি সবগুলো টিকা নিশ্চিত করুন।
আপনার শিশুর ছোট্ট মিষ্টি মুখটি যেন কোনো অসুস্থতা কেড়ে নিতে না পারে। জ্বর, সর্দি বা কাশি হোক, আপনার ভালোবাসা আর সঠিক যত্নই শিশুর সুস্থতার চাবিকাঠি। মনে রাখুন, মায়ের ভালোবাসার জাদু আর বিজ্ঞানসম্মত যত্ন মিলেমিশে অসুখ সারিয়ে তোলে।
আপনার সন্তান সুস্থ থাকুক, হাসি-খুশি থাকুক এটাই আমাদের প্রার্থনা। তার জীবনে কোনো অসুখ যেন ক্ষণিকের অতিথি হয়, ভালোবাসার আলোয় ফিকে হয়ে যাক যত জ্বরা কষ্টের অন্ধকার।
ডা. হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া
নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ
এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ)
বিসিএস (হেলথ)
এমডি (নিওনেটোলজি)
এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার, নিওনেটোলজি
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল