শরীর ও মন
ফিস্টুলার লেজার চিকিৎসা
অধ্যাপক ডা. এস এম এ এরফান
২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবারতিনি পুলিশ বিভাগের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তার প্রায় ৩০ বছর পূর্বে পায়ুপথের পাশে একটি ফোঁড়া হয়। তারপর সেটি এক সময় ফেটে যায় এবং পুঁজ পড়তে থাকে। তারপর তিনি তৎকালীন একজন প্রখ্যাত সার্জনের নিকট যান এবং ফিস্টুলা হওয়ার কথাটি খুলে বলেন। সার্জন অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশনের কিছুদিন পরেই তার আবার ফিস্টুলা দেখা দেয়। এরপর অন্য একজন অধ্যাপক অপারেশন করেন। কিন্তু ফলাফল একই। এবার রোগীটির আরও কয়েকটি ফিস্টুলা দেখা দেয়। এরপর তিনি আরও দুইবার অপারেশন করেন দুইজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। বরং ফিস্টুলার সংখ্যা বেড়েই যায়। পরিত্রাণে তিনি ভারত ও সিঙ্গাপুরে যান চিকিৎসার জন্য। তারাও রোগীকে দেখে বলে একাধিক অপারেশন লাগবে এবং বলে আবারো ফিস্টুলা না হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নাই। এসব শুনে তিনি অপারেশন না করেই দেশে চলে আসেন। তিনি গত ২০ বছর ধরে এই ফিস্টুলার কষ্ট নিয়েই জীবনযাপন করছেন। বারবার অপারেশন এবং ফিস্টুলার কষ্টটা নিয়ে তিনি গত ৩০ বছর ধরে যন্ত্রণায় ছিলেন।
অবশেষে লেজারের মাধ্যমে কাটাছেঁড়া ছাড়া সহনীয়ভাবে এসব জটিল ফিস্টুলার অপারেশন করা যায় তিনি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বিষয়টি জানতে পেরে আমার চেম্বারে দেখাতে আসেন। দেখা যায় তার প্রায় ছয়টি ফিস্টুলা আছে। তার সবগুলোই হাই লেভেল এবং কমপ্লেক্স (ঐরময খবাবষ ঈড়সঢ়ষবী)। আমি দেখেশুনে একবারেই লেজার দিয়ে অপারেশন করার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। মাস তিনেক আগে আমি তার সবগুলো ফিস্টুলার অপারেশন করলাম লেজার-এর সাহায্যে। এর আগের প্রতিটা অপারেশনে পায়ুপথে দীর্ঘ ক্ষত ছিল, অনেকদিন লেগেছিল ভালো হতে। কিন্তু আমি অপারেশন করার একদিন পরেই রোগীকে ছুটি দিয়ে দিলাম। এরপর তিনি কয়েকবার ফলোআপে এসেছিলেন। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। বিষয়টি প্রায় অলৌকিক।
প্রথমেই জেনে নেই ফিস্টুলা কি? পায়ুপথের ফিস্টুলা বা ফিস্টুলা ইন এনো পায়ুপথের একটি রোগ। যাকে প্রচলিত ভাষায় নালিও বলা হয়। এটি একটি নালির মতো যা এটি মুখ পায়ুপথের বাইরে থাকে, আর এটি মুখ পায়ুপথের ভেতরে থাকে। এই নালি দিয়ে পুঁজ, রক্ত ইত্যাদি বের হতে থাকে। তারপর ফুলে যাওয়া, ব্যথা করা, টয়লেটে সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। বিষয়টি কখনো কখনো বড় উপদ্রব হয় যখন ফিস্টুলা দিয়ে পুঁজ বা মল বের হয়ে কাপড়ে দাগ পড়ে বা অনেক সময় ওজু নষ্ট হয়ে যায়।
এটির প্রচলিত সমাধান হচ্ছে ফিস্টুলোটমি ও ফিস্টুলোকস্টমী। যাতে পুরো নালি কাটা হয়। বড় একটি ক্ষত থাকে সেটি ড্রেসিং করে ভালো করতে হয়। ক্ষত শুকাতে ২/৩ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। হাই লেভেল ফিস্টুলা হলে ৩/৪ ধাপে অপারেশন করতে হয়। ফলশ্রুতিতে রোগীর অনেক কষ্ট করতে হয় এবং অর্থ খরচও হয় বেশি। এই অপারেশনের একটি বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে মল ধরে রাখতে না পারা। এ ছাড়া সুতা (ঝবঃড়হ) খরভঃ নামক বিভিন্ন অপারেশন আছে যে সবে এর ফলাফল খুব ভালো নয়। আবার হওয়ার হার অনেক বেশি। বর্তমানে আমরা যে পদ্ধতিতে অপারেশন করছি সেটি হচ্ছে লেজার পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক নাম লেজার ফিস্টুলা খধংবৎ ভরংঃঁষধ ঈষড়ংঁৎব (ঋরষধপ)। এই পদ্ধতিতে একাধিক ফিস্টুলা, হাই লেভেল ফিস্টুলা, জটিল ফিস্টুলা কিংবা আবার হওয়া ফিস্টুলা একবারেই চিকিৎসা করছি। কোনো কাটাছেঁড়া, ক্ষত বা ড্রেসিং নেই। রোগী একদিনেই বাড়ি চলে যেতে পারেন। বিশ্বব্যাপী এ পদ্ধতিতে ফলাফল শতকরা ৫০-এর নিচে হলেও আমার এখানে সাফল্য আরও ভালো। আমাদের এখানে সকল রোগীর তথ্য সংরক্ষিত থাকে। ফলে যেকোনো কর্তৃপক্ষ সেটি যাচাই করতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায়, এনাল ফিস্টুলা নামক একটি জটিল রোগের বৈপ্লবিক সফল চিকিৎসা হচ্ছে ফিস্টুলার লেজার চিকিৎসা। ফিস্টুলা রোগের বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে হচ্ছে এবং আমরাও সফলভাবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করছি।
লেখক: কলোরেক্টাল ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন, বাংলাদেশ।
চেম্বার: ড. এরফান কলোরেক্টাল সেন্টার, ৪৪/৭, পান্থপথ, সিটি টাওয়ার, লিফট-৫, ঢাকা-১২০৫ হেল্পলাইন: ০১৮৬৫৫৫৫৫০০, ০১৮৬৫৫৫৫৫১১
ফেসবুক: Prof. Dr. SMA Erfan.