বাংলারজমিন
১৮ বছর পর মায়ের দেখা পেলো ছেলে
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবারদীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সন্তানকে খুঁজছিলেন মা শম্পা আক্তার। অপরদিকে মা’কে খুঁজছিলেন সন্তান নূর মোহাম্মদ শাওন। তাদের এই সংগ্রামের অবসান ঘটে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক হোসাইন সিপাহির মাধ্যমে। গত ৪ঠা জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে সাংবাদিক হোসাইনের সঙ্গে কথা বলেন শম্পা। নিজের সন্তানের বাড়ি বেতাগীতে এতটুকুই জানেন কিন্তু চিনতেন না। তার দেয়া তথ্য পেয়ে সন্তানকে খুঁজে পেতে খোঁজ শুরু করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই শাওনের খোঁজ পান ওই সাংবাদিক। পরে মা-ছেলের খোঁজাখুঁজির অবসান ঘটে। দেখা হয় তাদের। দেখা হওয়া মাত্রই মা-ছেলে অঝোরে কান্না করে বুকে জড়িয়ে ধরে মায়া মমতার বন্ধনের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। জানা যায়, সম্পা আক্তার ঝিনাইদহ আসান নগর এলাকার তোতা মিয়ার মেয়ে। ২০০২ সালে ঢাকায় বসে বেতাগী উপজেলার বুড়া মজুমদার ইউনিয়নের কাউনিয়া এলাকার সুমনের সঙ্গে বিয়ে হলেও অভাব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। স্বামীকে না জানিয়ে অভাবে পড়ে বিক্রি করেছিলেন ৩ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের চেইন। এর জের ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্টি হয় অশান্তি। এতেই কপাল পুড়ে সম্পার। স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ১৮ মাসের ছেলে শাওনকে নিয়ে সুমন নিজের গ্রামের বাড়ি বেতাগীতে চলে আসে। এরপর আর ছেলের মুখ দেখেননি সম্পা। শ্বশুরবাড়ি বরগুনার বেতাগীতে এতটুকুই জানতেন সম্পা। কখনো আসা হয়নি তার।
ছেলে নূর মোহাম্মদ শাওন বলেন, আমি কখনো ভাবিনি মা’কে পাবো। আমার বুঝ হওয়ার পর থেকেই মা’কে খুঁজছিলাম। কিন্তু কী হয়েছিল জানি না, আমার আত্মীয়-স্বজন কেউ তার খোঁজ দেয়নি। গত ৬ই জানুয়ারি হঠাৎ আমার মুঠোফোনে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। বেতাগীর সাংবাদিক হোসাইন সিপাহী পরিচয় দেয়। তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সংবাদটা দেন। তার থেকে জানতে পারি যে, আমার মা আমায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন। এ কথা শুনে আনন্দে আমার চোখে পানি চলে আসে। পরে মা’কে পেয়ে জড়িয়ে ধরে রাখি দীর্ঘ সময়। মনে হয় এ যেন এক সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি।
মা সম্পা বলেন, সন্তানকে নিয়ে যখন স্বামী চলে যায় তারপর আর আমার শাওনকে দেখতে পাইনি। ঢাকায় বসে বিয়ে হয়েছিল, কখনো শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হয়নি। তাই চিনিও না। শুধু জানি বেতাগীর কাউনিয়া এলাকা। পরে দীর্ঘ সময় ধরে খুঁজতে থাকি। কিছু মানুষ পাই তারা খুঁজে দেবে, খুঁজে পেয়েছে এমন বলে আর কোনো খবর দিতে পারেনি। পরে, ফেসবুকে হঠাৎ বেতাগীর নিউজ দেখি। তখন সাংবাদিক হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বিস্তারিত সব খুলে বললে তিনি
আমায় আশ্বস্ত করেন। পরে একদিন হঠাৎ আমায় কল দিয়ে জানায় আমার ছেলেকে তিনি পেয়েছেন। আমার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলিয়ে দেন। পরে ছেলের কাছে গেলে আমার ধন-রত্নকে বুকে জড়িয়ে নেই। আমি এতটা খুশি তা কাউকে বুঝাতে পারবো না।
মানবজমিন সাংবাদিক হোসাইন সিপাহী জানান, প্রথম সম্পা আক্তারের কথাগুলো তেমন গুরুত্ব দেইনি। পরে যখন ছেলে শাওনকে খুঁজে পাওয়ার পর তার সঙ্গে কথা বলি তখন বুঝতে পারি। শাওন যখনই আমার থেকে মায়ের সংবাদ পায় তখন সঙ্গে সঙ্গে কান্নারত অবস্থায় আমায় বলে- ‘ভাই আমি দীর্ঘ বছর ধরে মা’কে খুঁজছি। একটু মোবাইল নম্বর দেন তার সঙ্গে একটিবারের জন্য কথা বলি’। পরে আমি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেই। মা-ছেলের খোঁজাখুঁজির অবসানের মাধ্যম হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।