শরীর ও মন
ব্রণ ও চিকিৎসা
ডা. দিদারুল আহসান
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারদেখা যায় ত্বকের রোমকূপ ব্লক হয়ে গেলে, অতিরিক্ত তেল, সিবাম নিঃসৃত হলে ব্রণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া প্রোপিয়োনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনেস নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এটি হতে পারে। ব্রণের কিছু ধরন রয়েছে। যেমন প্রাথমিক পর্যায়ের ব্রণকে কমিডন বলে। এটি হলে মুখে ব্ল্যাকহেডস বা সাদা দানার মতো হয়। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ফলে যে ব্রণ হয় তাকে পাস্টিউলার অ্যাকনে। এই ব্রণ একটু বড় এবং ব্যথাযুক্ত আর এর ভেতরে পুঁজ থাকে। আবার আরেক ধরনের ব্রণ হয় যাতে মুখ ভর্তি হয়ে থাকে। একে সিস্টিক অ্যাকনে বলে।
সাধারণত ব্রণ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়স বেশ বড় একটি ফ্যাক্টর। বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হলে শরীরে অ্যান্ডোজেন হরমোন বেড়ে যায়। এ সময় ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে ব্রণ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। আবার এটাও দেখা যাচ্ছে, ২৫ বছর বয়সের পরও অনেকের নতুন করে ব্রণ হচ্ছে।
বয়ঃসন্ধিকাল বা অন্য যেকোনো সময়ে যে ব্রণ হয়, সেটি অনেক বেশি হলে বা ত্বকের কোনো সমস্যা যেমন দাগ বা গর্ত সৃষ্টি করে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলেন, এই দাগ বা গর্ত কোনো ক্রিম বা জেলে সেরে যায় না। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ চিকিৎসার। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে মুখে দাগ বা গর্ত হওয়ার মতো সমস্যাগুলো সহজেই এড়ানো যায়।
জীবন-যাপনের সঙ্গেও ব্রণের সম্পর্ক আছে। এখন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ফাস্ট ফুড খাওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। ফলে তারা খাবারের সঙ্গে অনেক বেশি অসম্পৃক্ত চর্বি এবং চিনি গ্রহণ করছেন। চিনি সিবাম নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। আবার শরীরচর্চার অভাবও ব্রণের জন্য দায়ী।
অনেকে আছেন যাচাই-বাছাই না করে বিভিন্ন পণ্য মুখে লাগিয়ে থাকেন। এ সবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য ব্রণ হতে পারে।
যাদের মেটাবোলিজমের সমস্যা আছে, ঠিকমতো খাবার হজম না হয় না এবং যারা ঠিকমতো পানি পান করেন না এবং শাক-সবজি খান না, তাদের বেশি ব্রণ হতে দেখা যায়। কারণ, তাদের শরীর থেকে টক্সিন বের হয় না।
অনেকেই আছে ব্রণ হলে হাত দিয়ে সেটি গলিয়ে দেন। এ ব্যাপারে ডা. তাসনিম তামান্না চৌধুরী বিশেষভাবে সতর্ক করে দিলেন। তিনি বলেন, ‘এটি একদমই করা যাবে না। কারণ, আমাদের হাতে কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যা এর মাধ্যমে ত্বকের সংস্পর্শে চলে এসে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে। এমনকি ত্বকের গভীরে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে।’ এ জন্যই মূলত ত্বকে দাগ হয়।
ব্রণের সমস্যা এড়াতে স্কিন কেয়ারের প্রতি নজর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে আগে নিজের ত্বকের ধরন জানতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকে অয়েল বেসড প্রোডাক্ট লাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে। যাদের অ্যাকনে পোর ত্বক, তাদের আলফা হাইড্রোক্সি বা বিটা হাইড্রোক্সি এসিডযুক্ত ফেসওয়াশ এবং শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের ফোমিং জেল-টাইপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। আর সকাল ও রাতে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে, ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে ও বাইরে গেলে অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখতে হবে।
যারা নিয়মিত বাইরে যাচ্ছেন আর অনেক মেকআপ ব্যবহার করেন, তাদের জন্য ডাবল ক্লিনজিং আর সপ্তাহে একদিন স্ক্রাবিং করা জরুরি।
এখন ব্রণের অনেক আধুনিক চিকিৎসা আছে। কমিডন ব্রণ হলে ভ্যাকুয়াম ক্লিনজিং এবং আলট্রাসনিক ফেসিয়ালের মাধ্যমে মুখের ভেতরের ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস বের করা যায়। সংক্রমিত বা পস্টিউলার ব্রণ হলে অ্যান্টিবায়োটিক কেমিক্যাল পিলিং এজেন্ট ব্যবহার করা হয় ত্বকের ধরন বুঝে। আর যাদের ত্বকের একদম দাগ বা গর্ত হয়ে গেছে, তাদের জন্য আছে লেজার বা মাইক্রোনেডলিং ট্রিটমেন্ট। এর ফলে যেখানে গর্ত হয়েছে, সেখানে নতুন করে কোলাজেন উৎপন্ন করা হয়। লেজার ট্রিটমেন্ট অবশ্যই ডারমাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে ভালো একটি জায়গা থেকে করাতে হবে। আর সব ধরনের ত্বকের জন্য অবশ্যই দুই ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সেটি ঘরে থাকলেও এবং কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করার সময়েও।
লেখক: চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালট্যান্ট
গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
৩২, গ্রীন রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। রুম নাম্বার ৪৩২, সাক্ষাতের সময় বিকাল ৪-৬টা পিএম। সেল-০১৭১৫৬১৬২০০, ০১৭৩৩৭১৭৮৯৪