ঢাকা, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ধুলায় একাকার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সিটি করপোরেশন

স্টাফ রিপোর্টার
১১ জানুয়ারি ২০২৫, শনিবারmzamin

ধুলায় আচ্ছাদিত রাজধানী। জুরাইন, পোস্তগোলা, দোলাইরপাড়ের রাস্তা তো ধুলার কারণে কিছু দেখাই যায় না। সেই সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছে কলকারখানাসহ যানবাহনের ধোঁয়া। এতে সাধারণ মানুষের যেমন ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তেমন এই ধুলার পাহাড় ঠেলে গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে যানবাহন চালকদের। ধুলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আশপাশের দোকানদাররা কিছুক্ষণ পরপর পানি দিলেও তা কাজে আসছে না। 

জুরাইন রেলগেটে রাস্তা পার হওয়ার জন্য ছোট এক ছেলেকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। কিছু পরে মুখে একটা মাস্ক পরে নিলেন। তারপরও নিজেকে ধুলার ঝাপটা থেকে রক্ষা করতে পারেন নি। মুহূর্তেই হাঁচি দেয়া শুরু করলেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, প্রতিদিন একই অবস্থা। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আটবার ইনহেলার টানতে হয়। কিন্তু এই ধুলায় ইনহেলার নেয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে। ধুলা নিয়ন্ত্রণ করা তো সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। কোনো দিন তাদের এখানে এসে পানি দিতেও দেখিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসনেয়ারা বেগম এই রাস্তা দিয়েই প্রতিদিন স্কুল থেকে তার ছেলেকে আনা-নেয়া করেন। তিনি বলেন, আমি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকেই বের হই না। কিন্তু যারা কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করে, তাদের তো আমার মতো বাসায় থাকলে হবে না। এ ছাড়া এ অঞ্চলে বেশ কিছু কলকারখানা ও গার্মেন্টস আছে। পুরুষের পাশাপাশি বহুসংখ্যক নারী শ্রমিক কাজ করে এখানে। ধুলার এই জর্জরিত অবস্থায় সবাই হুমকির মধ্যে পড়েছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস মৌ মানবজমিনকে বলেন, ধুলাকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও হাঁপানি ও ফুসফুস ক্যান্সারের বড় কারণ এই ধুলা। এই অঞ্চলে ধুলাজনিত রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এমনকি যারা অসুস্থ তাদেরও রোগ বেড়ে গেছে। আবার যারা আগে থেকেই যক্ষ্মা, হাঁপানি, সিওপিডি, অ্যালার্জিসহ ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছেন তাদের এই সমস্যা ধুলার কারণে আরও বেড়ে যাবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে এটা আরও জটিল হবে।

মোসলেম আলী নামে দোলাইপাড় এলাকার বাসিন্দা মানবজমিনকে বলেন, পদ্মা সেতু এবং এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ পথই এটা। দয়াগঞ্জ মোড় থেকে দোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রাস্তার পথ সবচেয়ে ধুলাময়। শুধু এই এলাকাই শুধু নয়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ সড়ক বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে জর্জরিত। ফলে ধুলার পরিমাণ বেড়েছে। বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এসব সড়ক ঠিক করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ধুলাও আর কমেনি।

সিএনজিচালক হাসনাত মিয়া বলেন, প্রায় এক বছর ধরেই এই রাস্তার অবস্থা এমন। এতে মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের চালকদেরও এই ঝুঁকি মেনে নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। রাস্তা কেটে মেরামত না করে ওই অবস্থায় ফেলে রাখায় সেখানে ধুলা তৈরি হচ্ছে। আবার নির্মাণাধীন এলাকায় নিয়মিত পানি ছিটানোর কথা থাকলেও সেটা মানছে না সিটি করপোরেশনগুলো।
শুধু জুরাইন, পোস্তগোলাই নয়, রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো খিলগাঁও, মালিবাগ, বাসাবো ও গোড়ান এলাকার রাস্তাগুলোতেও অসম্ভব রকমের ধুলা। এসব রাস্তায় চলাচল করতে জনগণকে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত সম্পূর্ণ রাস্তা ধুলায় জর্জরিত। 

ধুলায় বিরক্ত নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান রহমান বলেন, সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ মালিবাগ রেলগেটে একজন বাইকচালক ধুলায় কিছু দেখতে না পেয়ে এক সিএনজির সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে যান। প্রায়ই এখানে ধুলার কারণে এমন ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে। 

সাত্তার আলী নামে খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা বলেন, এই বছর শুধু না, বিগত কয়েক বছর ধরেই সিটি করপোরেশন তার দায়িত্বে অবহেলা করছে। গত বছর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রাস্তাঘাটে ধুলাবালি নিরসনে দিনে দুইবার পানি ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। কিন্তু এ বছর তা আর করতে দেখছি না। শিহাব ইসলাম নামে একজন কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, পানি ছিটালে কাদা হবে। ধুলা কেন হচ্ছে সেই কারণ খুঁজে বের করে ওই মাফিক উদ্যোগ নিতে হবে। সব নিয়ন্ত্রণ তো সিটি করপোরেশনের হাতেই। তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তো সকল সেবাসংস্থাগুলো কাজ করে। মূলত যাদের হাতে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ তাদেরই কোনো পরিকল্পনা নেই। এ ছাড়া গাবতলী থেকে মীরপুর যেন ধুলার রাজ্য। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকা। নগরের প্রধান সড়কগুলো ঘেঁষে যে গাছগুলো লাগানো আছে, সেই গাছগুলোর সবুজ পাতায় ধুলার আস্তরণে পরিস্থিতি অনেকটাই আঁচ করা যায়। পাশাপাশি নগর জুড়ে বিভিন্ন সেবাসংস্থার খোঁড়াখুঁড়িসহ আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। শুধু গাবতলী কিংবা মোহাম্মদপুর এলাকা নয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকাতেই এখন ধুলার রাজত্ব চলছে। মোহাম্মদপুর মোড়ে ফ্লাইওভারের নিচে কথা হয় আশরাফ ইসলাম নামে একজন চা বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ধুলার অত্যাচার তো দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুনলাম, সিটি করপোরেশন থেকে নাকি রোজ পানি ছিটাচ্ছে। কিন্তু গত ১৫ দিনের মধ্যে একদিনও এখানে পানির গাড়ি দেখলাম না। 

কিছুটা সামনে গিয়ে কথা হয় মধুমতি হাউজিং আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আরাফাত রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঘরের জানালা-দরজা খুলে রাখার কোনো উপায় নেই। এক বেলা খোলা রাখলে বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবেও ধুলার স্তর পড়ে একাকার হয়ে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, তিলপাপাড়া অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপ-সচিব মো. রেজাউল করিম মানবজমিনকে বলেন, আমরা এখনো ধুলা নিয়ন্ত্রণে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারিনি। তবে শিগগিরই খিলগাঁও এর কয়েকটি এলাকায় সকাল-বিকাল পানি ছিটানোর কার্যক্রম চালু করা হবে।

 

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

Bangladesh Army

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status