শরীর ও মন
অতিরিক্ত কোষ্ঠকাঠিন্য কলোরেক্টাল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবারকোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি সমস্যা, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের রুটিনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি কোনো রোগ নয়, রোগের লক্ষণমাত্র। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, মূলত হজমের সমস্যা থেকে এটি হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীর অম্ল, পেটে বায়ু বা গ্যাস জমার মতো সমস্যা থাকে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ: খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, পচা ও বাসি খাবার খাওয়া, নিয়মিত শাক-সবজি না খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এর আরও কিছু কারণ আছে- অতিমাত্রায় চা ও কফি পান করা। ঝাল ও মসলাদার খাবার বেশি খাওয়া। পরিশ্রম বা শরীর চর্চা না করা। রাতজাগা ও অনিদ্রা। পর্যাপ্ত পানি পান না করা। আঁশজাতীয় খাবার, শাক-সবজি ও ফলমূল কম খাওয়া। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার বেশি খাওয়া। দীর্ঘ অসুস্থতা। দুশ্চিন্তা বা অবসাদ। অন্ত্রনালিতে ক্যান্সার হওয়া। ডায়াবেটিস হওয়া। মস্তিষ্কে টিউমার এবং রক্তক্ষরণ হওয়া।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ: কোষ্ঠকাঠিন্যের সাধারণ কিছু লক্ষণ আছে। যেমন- ঠিকমতো পায়খানা না হওয়া। অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা। সপ্তাহে তিনবারের বেশি মলত্যাগ না হওয়া। শক্ত দানার মল এবং বার বার মলত্যাগের ইচ্ছা হলেও পরিপূর্ণভাবে মলত্যাগ না হওয়া। কারও কারও ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে মলত্যাগ বন্ধ হয়ে যাওয়া। পেটে অনবরত শব্দ ও অম্বল হওয়া এবং পায়খানা পায়খানা ভাব থাকা। মাথায় সব সময় যন্ত্রণা করা।
প্রতিরোধে সহায়ক উপায়: কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও রুটিনমাফিক জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। যা করবেন- পেট ভরে খাবেন না। সারাদিন অল্প অল্প করে খান। এতে পাচনতন্ত্র সুস্থ থাকে, খাদ্য হজমে সাহায্য হয়। তাড়াহুড়ো করে না খেয়ে ধীরে চিবিয়ে খান। ফাস্ট ফুড এবং অতিরিক্ত তেল দেয়া খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। সবজি ও সুষম খাবার খান। তামাক, জর্দা, খইনি, ধূমপান, মদ্যপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। প্রতিদিন প্রচুর পানি ও তরল এবং যথেষ্ট আঁশযুক্ত খাবার খান। মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। মল চেপে না রাখার অভ্যাস করুন। ইসবগুলের ভুসি, অ্যালোভেরা বা নরম খাবার খান। নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ, আয়রন বা ক্যালসিয়াম বড়ি খাওয়ার জন্য কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস, প্রচুর চিনিযুক্ত বেকারি খাদ্য কম খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্যে যেসব সমস্যা হতে পারে: কোলনে মল শক্ত হয়ে আটকে যাওয়ার কারণে পেটে ব্যথা হতে পারে। এমনকি মল অতিরিক্ত পরিমাণে কঠিন বা শুষ্ক হয়ে গেলে তা থেকে সংক্রমণও হতে পারে। মলের সঙ্গে রক্ত পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। সেল-০১৭১২-৯৬৫০০৯