ঢাকা, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, শুক্রবার, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ রজব ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

মলদ্বারে রক্তক্ষরণ

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার

মলদ্বারে রক্তক্ষরণ: যেসব রোগীর মলদ্বারে রক্তক্ষরণ হয়, তাদের পায়ুপথ দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়। এই রক্ত রোগীর মলে উপস্থিত থাকতে পারে বা টয়লেট পেপারে থাকতে পারে। কিছু কিছু সময় রক্ত খালি চোখে দেখা যায় না কিন্তু মলের পরীক্ষা করার পর রক্ত নিশ্চিতভাবে বোঝা যায়। 
মলদ্বারে রক্তপাতের ক্ষেত্রে রক্তের রং উজ্জ্বল হতে পারে বা গাঢ় মেরুন রঙের হতে পারে। রক্তের রং রক্তের নির্গমন স্থানকে নির্দেশ করতে পারে। উজ্জ্বল লাল রঙের রক্ত নিম্ন মলাশয় বা মলদ্বারের রক্তক্ষরণকে বোঝায় আর গাঢ় লাল রং মলাশয় অথবা ক্ষুদ্রান্ত্রের রক্তক্ষরণকে বোঝায়।  কালচে বা আলকাতরা রঙের মল পাকস্থলী থেকে রক্তপাতকে বোঝায়।
মলদ্বারে রক্তপাতের উপসর্গ 
* মলদ্বারে ব্যথা বা চাপ: রক্তপাতের অন্তর্নিহিত কারণের জন্য রোগীর মলদ্বারে ব্যাপক ব্যথা অনুভূত হতে পারে। 
* রক্তমাখা মল: মলত্যাগের সময় রোগীর প্রচুর পরিমাণে মলদ্বার থেকে রক্তপাত হতে পারে।
* পেটেব্যথা: মলদ্বারে রক্তপাতের কারণে কিছু কিছু রোগীর  পেটে টান ধরতে পারে এবং ব্যথা হতে পারে। 
* রক্তপাতজনিত উপসর্গ:  যেসব রোগীর প্রচুর রক্তপাত হয়, তারা প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যান দুর্বলতা ক্লান্তি এবং নিম্ন রক্তচাপ থাকে। গুরুতর ক্ষেত্রে রোগীরা শক খেতে পারেন এবং তাদের তৎক্ষণাৎ চিকিৎসাগত সাহায্য প্রয়োজন হয়।  
মলদ্বারে রক্তপাতের কারণ 
* হেমারয়েড: এটি পাইলস নামে পরিচিত। যেসব রোগীর রোগ আছে তাদের পায়ুর রক্তবাহে প্রদাহ তৈরি হয়। হেমারয়ডের জন্য রক্তপাত হতে পারে। যে বিষয়গুলো হেমারয়েডের ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে, তা হলো স্থূলত্ব, গর্ভাবস্থা, গুরুতর ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য।
* ফিসার: মলদ্বার, মলাশয় অথবা পায়ুর কলাপ্রাচীর ছিঁড়ে যাওয়ার জন্যও মলদ্বারে রক্তপাত হতে পারে। 
* কোলাইটিস: মলাশয়ের মধ্যেকার কলার প্রদাহ হয় কখনো কখনো। এই রোগটি কোলাইটিস নামে পরিচিত। আলসেরাটিভ কোলাইটিসের কারণে আলসারের বৃদ্ধি বা কোলনে ঘায়ের জন্য রক্তপাত হতে পারে। 
* ফিসচুলা: কোনো কোনো সময় পায়ু এবং ত্বক অথবা পায়ু এবং মলাশয় ও মলদ্বারের মতো দুটি অঙ্গের মধ্যে একটা কিছু খুলে যায়। এর কারণে রক্তপাত হতে পারে। 
* ডাইভার্টিকুলিটিস: যখন মলাশয়ের পেশির স্তরে দুর্বলতা তৈরি হয়, তখন একটা ছোট পকেট তৈরি হয়। এই রোগটির নাম ডাইভার্টিকুলিটিস। ডাইভার্টিকুলিটিস রোগের কারণে রক্তপাত হতে পারে। 
* পলিপ: পলিপ হলো কলার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। কখনো কখনো পলিপের কারণে রক্তপাত, বিরক্তি এবং ব্যথা বোধ হতে পারে। 
* গ্যাস্ট্রোএন্ট্রেরাইটিস: যেসব রোগী ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, বিশেষত, মলাশয় অথবা পাকস্থলীতে সংক্রমণের জন্য রক্তপাত হতে পারে। 
* অভ্যন্তরীণ রক্তপাত: গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিনাল অঙ্গের আঘাতের জন্য অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের জন্য চিকিৎসা সাহায্য দরকার। 
* যৌনভাবে সংক্রামিত রোগ: কখনো কখনো যৌনভাবে সংক্রামিত রোগ  পায়ু বা মলাশয় অঞ্চলে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে ঝুঁঁকি বাড়তে পারে।
* ক্যান্সার: মলাশয় বা মলদ্বারের ক্যান্সারা আছে এমন রোগীর মলাশয় থেকে রক্তপাত হতে পারে। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার আছে এমন প্রায় ৪৮% মানুষের মলাশয় থেকে রক্তপাত হতে পারে।
কখন চিকিৎসা বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন
* আপনার রক্তপাত হতে পারে দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য থাকতে পারে। 
* মলত্যাগের অভ্যাসের ক্ষেত্রে আপনি একটি হঠাৎ পরিবর্তন সম্ভব হতে পারেন।
* আপনি দুর্বলতা এবং ক্লান্তি অনুভব করবেন এবং প্রশ্নাতীত কারণে ওজন হতে পারে।
* পেটের মধ্যে ব্যথা হবে।
* আপনার গলাতে পারে এবং বমি হতে পারে।
* আপনার পেটে গোটা অনুভব হতে পারে। 
প্রতিরোধ 
* প্রচণ্ড কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ার ব্যবস্থা করা। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার ব্যবস্থা করবেন। 
* স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য খান। তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্যকে আপনার খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করুন।
* যথেষ্ট পরিমাণে তরল পদার্থ পান করে নিজের শরীরকে আর্দ্র রাখুন।
* গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল তন্ত্রকে যে খাদ্যগুলো ব্যাহত করে তা খাবেন না,  যেমন মশলাদার এবং ভাজা খাদ্য। 
* একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা।
* যৌনভাবে সঞ্চারিত রোগ প্রতিরোধ রোধ করার জন্য যৌন সঙ্গমের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন।
* মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত চাপ দেবেন না।
নির্ণয়  বা পরীক্ষা: মলাশয় থেকে রক্তপাতকে নির্ণয় করার জন্য ডাক্তারের কাছে বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। তাদের মধ্যে কিছু হলো:
* বিশদে পরীক্ষা: মলাশয় রক্তপাতের কারণ নির্ধারণ করার জন্য ডাক্তার  আপনাকে সম্পূর্ণ পরীক্ষা করতে পারেন।  ডাক্তার আপনাকে অনেক প্রশ্ন করতে পারেন এবং তার মধ্যে আপনার চিকিৎসাগত এবং পারিবারিক ইতিহাস অন্তর্গত।
* কোলোনোস্কোপি: মলাশয় এবং মলদ্বারের অস্বাভাবিকতাকে পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তার কোলোনোস্কোপি করতে পারেন। এটি মলাশয় থেকে রক্তপাতের কারণ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
* সিগময়ডোস্কোপি: সিগময়ডোস্কোপি হলো একটি পরীক্ষা যা মলাশয় এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের নিচের অংশে পরীক্ষা করে এবং ক্যান্সার ও মলত্যাগের অন্যান্য অস্বাভাবিকতাগুলোকে নির্ধারণ করতে পারে। সিগময়ডোস্কোপ ব্যবহার করে ডাক্তার এই পরীক্ষা করেন।
* মলে সুপ্ত রক্ত পরীক্ষা: আপনার মলে কোনো রক্তের উপস্থিতি আছে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য ডাক্তার এই পরীক্ষাটি করতে বলতে পারেন। 
* বায়োপসি: যদি ডাক্তার ক্যান্সার সন্দেহ করেন তবে তিনি বায়োপসি করতে বলবেন বায়োপসির জন্য ডাক্তার ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ থেকে পরীক্ষার জন্য একটি ছোট কলা বার করে নেবেন। 
* প্রতিচ্ছবির কৌশল: কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার আপনাকে সিটিস্ক্যান বা আল্ট্রাসাউন্ড করতেও পরামর্শ দেবেন।
বিকল্প চিকিৎসা  
মলাশয় থেকে রক্তপাত, এর কারণের ওপর নির্ভর করে। কিছু কিছু চিকিৎসার বিকল্পগুলো হলো:
* ব্যাপক কোষ্ঠকাঠিন্য এবং হ্যামারয়েডের কারণে রক্তপাত: ডাক্তাররা রোগীকে তন্তুসমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে বলেন, নিতম্ব-স্নান এবং মল নরম করার জন্য কিছু ওষুধ দেন। 
* পায়ুপথে ফাটলের কারণে রক্তপাত: কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য ওষুধ দিয়ে ডাক্তাররা পায়ুপথের ফাটলকে ঠিক করেন। ডাক্তাররা মলত্যাগের পর পায়ু অঞ্চলকে আলতো করে মুছে নেয়ার পরামর্শ দেন।
* অন্যান্য কারণে রক্তপাত: যদি ক্যান্সার রক্তপাতের কারণ হয়, তবে ডাক্তাররা কেমোথেরাপি বা সার্জারির পরামর্শ দেবেন। তারা ক্রোহনের রোগযুক্ত রোগীদের কর্টিকোস্টারয়েড দিতে পারেন। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ এবং কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা 
চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফ্ট-৪, ঢাকা। প্রয়োজনে-০১৭১২৯-৬৫০০৯

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status