২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নির্বাচন কমিশনকে পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে হলফনামা দিয়েছিলেন তাতে তার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছিল ৯০ লক্ষ ১৪ হাজার ৮৬২ টাকা। আর ২০২২-এ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকেই বের হল ৪৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। অর্পিতার দাবিমতো এর সব টাকাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। চাকরিপ্রার্থীদের কাছে মোটা নজরানা নিয়ে তাদের চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন পার্থ বাবু। সংগত কারণেই তা হলফনামায় দেখাননি। মিথ্যাচার করেছেন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। এই ব্যাপারেও আলাদা মামলা রুজু হবে তার নামে। কিন্তু ২০২১ সালে কি হলফনামা দিয়েছিলেন পার্থ বাবু?
হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, তার হাতে নগদ রয়েছে এক লক্ষ ৪৮ হাজার ৮৩৬ টাকা। এই হলফনামা যখন লিখছেন পার্থ বাবু তখন তিনি ভুলে যান গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের লুট করে তিনি যে নগদ অর্থ পেয়েছেন তার কথা। তাই তিনি লেখেন যে, ফিক্সড ডিপোজিট ও সেভিংস অ্যাকাউন্ট মিলে দুটি ব্যাংকের চারটি শাখায় তার আছে আরও কিছু টাকা।
যার পরিমাণ ২৪ লক্ষ ৮১ হাজার, ২৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯৩৫, ১৫ লক্ষ ১২ হাজার ১৬১ এবং এক লক্ষ ৮ হাজার ৬৯ টাকা। এই চারটি বৈধ অ্যাকাউন্ট ছাড়াও অর্পিতা ব্যাংকে কত টাকা রেখেছিলেন তা বোধহয় সেই সময় মনে ছিলো না পার্থ বাবুর। পার্থ চট্টোপাধ্যায় হলফনামায় জানিয়েছেন তার না আছে গাড়ি, না আছে চাষযোগ্য জমি। অর্পিতার ডায়মন্ড সিটি সাউথের গ্যারাজে রাখা একাধিক দামি গাড়িগুলো তাহলে কার? মডেল অভিনেত্রীর যিনি এখনও পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারেননি! চাষের জমি জাঙ্গিপাড়ায়, শ্যামবাটিতে কার তাহলে? প্রাসাদপম ফ্ল্যাট, বারুইপুরে বাগানবাড়ি, জাঙ্গিপাড়ায় দোতলা বাড়ি, ডায়মন্ড সিটি সাউথ-এর ফ্ল্যাট, বেলঘরিয়ার ক্লাব টাউন অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাট, চিনার পার্ক-এর ফ্ল্যাট, ইডেন সিটির ফ্ল্যাট ইত্যাদি থাকতেও পার্থ বাবু হলফনামায় লিখেছেন, দেড় কাঠা জমির ওপর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়িটিই তাঁর স্থাবর সম্পত্তি। বাড়িটি ১৯৮৯ সালে বানানো, তখন দাম ছিল আট লক্ষ, এখন হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া অলংকার কিছুই তার নেই। না সোনা, না রুপো না প্লাটিনাম- কিছুই নেই। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ক্লাব টাউনের বাড়ি থেকে পাওয়া সোনা আর রুপোর বার তাহলে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এর আয়ে কেনা, যার পারিশ্রমিক সিনেমায় এখনও তৃতীয় শ্রেণি পর্যায়ে! উনিশ - কুড়ি সালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বার্ষিক আয় ছিল পাঁচ লক্ষ ৩৯ হাজার ৭২৮ টাকা মাত্র। হলফনামায় জানাচ্ছেন তিনি স্বাভাবিক, কে আর কবে ঘুষের টাকাকে অ্যানুয়াল ইনকাম বলে দেখিয়েছে! ২৫ লক্ষ টাকার একটি জীবনবিমা পলিসি আছে পার্থ বাবুর। কোনও ঋণ নেই। হলফনামায় এই মিথ্যাচার করার সময় একটুও কি বুক কাঁপেনি পার্থর? ২০১৪ সাল থেকে হাজার হাজার যোগ্য চাকরিপ্রার্থীর চোখের জলের কাছে কি এতটুকু ঋণ নেই পার্থ বাবু, আপনার?