ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

শরীর ও মন

জয়েন্টে ব্যথা ও প্রতিরোধের উপায়

ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
২৫ নভেম্বর ২০২৪, সোমবার

হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায় চলাফেরার স্বাভাবিক ছন্দ, গতি নষ্ট হয়, সঙ্গে রোগীর কষ্ট তো রয়েছেই। আসলে যথাযথ ব্যায়ামের ঘাটতি, অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ক্যালসিয়ামের অভাবে ধীরে ধীরে এই সমস্যা বাড়তে থাকে। প্রথম দিকে আমরা সাধারণত হাঁটু বা হাতের জয়েন্টের ব্যথাকে তেমন গুরুত্ব দিতে চাই না। পরে যখন পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যায় তখন ওষুধ খেতে হয়। তাই জয়েন্ট ব্যথায় শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্যথা কমানোর কয়েকটি সহজ উপায়।
জয়েন্টে ব্যথার কারণ
*শীতকালে স্বাভাবিক নড়াচড়া কম হয় এবং বায়ুর চাপ কম থাকে বলে মানুষের টিস্যুগুলো ফুলে যায়। ফলে জয়েন্ট বা জোড়া জমে যায়; তখন ব্যথার উদ্রেক করে।
*শীতের প্রকোপে রক্তনালির খিঁচুনি ও সংকোচন হলে জোড়া, পেশি ও হাড়ে রক্ত চলাচল আগের চেয়ে বেশ কমে যায়; তখন ব্যথা-বেদনা বেড়ে যায়।
*শীতে স্নায়ুর সহ্য ক্ষমতা কম থাকে এবং অল্পতেই উত্তেজিত হয় বিধায় ব্যথার অনুভূতি বেড়ে যায়।
লক্ষণ: শীতকালে জয়েন্টগুলো, বিশেষ করে ঘাড়, কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা বেশি বাড়ে। এ ছাড়া কটি, গোড়ালি, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে ব্যথা হয়, জমে যায়। হাত সামনে-পেছনে নেয়া ও হাত দিয়ে কিছু তোলাও কষ্টকর হয়। হাঁটু ও কোমর সোজা অবস্থা থেকে ভাঁজ করতে এবং বসতে-উঠতে ভীষণ অসুবিধা হয়।
চিকিৎসা
*কুসুম কুসুম গরম পানির সেক (ময়েস্ট হিট) আর্থ্রাইটিসের ব্যথার জন্য খুবই কার্যকর। এর পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের অন্য ওষুধ সেবন করতে হবে।
*ব্যথানাশক জেল বা মলম দিয়ে হালকাভাবে জোড়ায় ম্যাসাজ করলে ব্যথা নিরাময় হয়।
*ব্যথা নিরাময়ে জয়েন্টে ইনজেকশন (স্টেরয়েড ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড) পুশেরও প্রয়োজন হয়।
প্রতিরোধে করণীয়
*যথেষ্ট গরম কাপড় পরিধান করে শীত থেকে হাড় জোড়াকে রক্ষা করতে হবে।
*এক অবস্থায় (বসা, দাঁড়ানো) আক্রান্ত জোড়াকে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না।
*সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা কম করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে স্টিক, পায়ে কুশনযুক্ত জুতা এবং গোড়ালি, হাঁটু, কোমর, ঘাড়, কাঁধ, কনুই ও কবজিতে সাপোর্ট বা ব্রেচ ব্যবহার করতে হবে।
*হালকা ব্যায়াম জোড়া ব্যথা উপশমে বেশ ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে শীতকালে কঠোর ব্যায়াম আক্রান্ত জোড়ায় রক্ত চলাচল কমিয়ে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। জোড়ার স্বাভাবিক নড়াচড়া এবং পেশি, টেনডন ও লিগামেন্টের নমনীয়তা জোড়াকে ব্যথামুক্ত রাখে।
*শীতকালে উপযুক্ত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণে আর্থ্রাইটিস বা বাত ব্যথার তীব্রতা কমে আসে। এজন্য সতেজ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত। গাজর, শসা, মুলা ইত্যাদি সবজি ব্যথা সৃষ্টিকারী পদার্থকে শরীর থেকে সহজেই বের করে দেয়।
*ফলের রস সেবন জোড়াকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
*সকালে খালি পেটে রসুন খেলে রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জোড়ায় রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে বলে ব্যথা অনেকাংশে কম অনুভূত হয়।
*আদা ও লেবুর রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে সকালে এবং রাতে সেবন করলে আর্থ্রাইটিস ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে।
*এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’, ‘এ’ ও ‘সি’ সেবন করতে হবে। এতদসত্ত্বেও ব্যথা উপশম না হলে উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ, হাড় ও জোড়া বিশেষজ্ঞ এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জন, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা।
চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি., শ্যামলী মিরপুর রোড, ঢাকা-১২০৭
হটলাইন-১০৬৩৩, ০১৭৪৬৬০০৫৮২

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status