প্রথম পাতা
জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা
জানুয়ারিতে যুব উৎসবে ঢাকা আসছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ নভেম্বর ২০২৪, বুধবারকপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনের প্রথম দিকে ব্যস্ত সময় পার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত ২০ জন শীর্ষ নেতা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। আজ প্রধান উপদেষ্টার কনফারেন্স অফ দ্য পার্টিস-২৯ (কপ-২৯)-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে। প্রফেসর ড. ইউনূস কপ-২৯ ভেন্যুতে বিশ্বনেতাদের শীর্ষ সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ও তুর্কি ফার্স্টলেডির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ করেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গেও। এ ছাড়া পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ও নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পোডেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রফেসর ড. ইউনূস। অন্যদের মধ্যে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী, ঘানার রাষ্ট্রপতি, বসনিয়া হার্জেগোভিনার প্রধানমন্ত্রী, রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী, মন্টিনিগ্রোর প্রেসিডেন্ট, বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিল ও ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ফিফা সভাপতি ও আইওএম-এর মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
এ ছাড়া আল-আজহার আল শরীফের গ্র্যান্ড ইমাম আহমেদ আল তাইয়েব সকালে বাকুর রিৎজ কার্লটন হোটেলে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা জলবায়ু সংকট সমাধানের উপায় এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্ট সহ ২০ জন বিশ্বনেতা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ায় তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়ায় তাকে অভিনন্দন জানান। অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান প্রফেসর ড. ইউনূসকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এবং চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন। ড. ইউনূস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ ছাড়াও ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিককে মুক্তি দেয়ায় প্রধান উপদেষ্টা আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে ধন্যবাদ জানান। এদিকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হবে এবং উন্নতি করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মিশরের মর্যাদাবান আল আজহারের গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমেদ আল তাইয়েব।
সকালে আজারবাইজানের রাজধানী বাকুর রিৎজ কার্লটন হোটেলে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইসলামিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসের এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রফেসর ইউনূসকে হাজার বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমেদ আল তাইয়েব। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফান্ডেন্ড স্কলারশিপ ঘোষণা করবে বলেও জানান তিনি। গ্র্যান্ড ইমাম বলেন, আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা আশাবাদী। আপনি একজন বিচক্ষণ মানুষ। বিপ্লবের পর বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। আমি আপনাকে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করার জন্য স্যালুট জানাই। ড. ইউনূস তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য গ্র্যান্ড ইমামকে ধন্যবাদ জানান। তিনি গ্র্যান্ড ইমামকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সশরীরে ঘুরে দেখার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা গণ-অভ্যুত্থান এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়া সফল হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন গ্র্যান্ড ইমাম। তিনি ড. ইউনূসের নেতৃত্ব, তার সামাজিক সেবা, ক্ষুদ্র ঋণদাতা হিসেবে গ্রামীণ ব্যাংকের অগ্রণী ভূমিকা এবং দারিদ্র্য মোকাবিলায় তার আজীবন প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। প্রফেসর ইউনূস আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানী ঢাকার দেয়ালে শিক্ষার্থীদের আঁকা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় গ্রাফিতি চিত্রের একটি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দেন। গ্র্যান্ড ইমাম বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শৈল্পিক দক্ষতার প্রশংসা করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার কাছে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মেধারও প্রশংসা করেন।
জানুয়ারির যুব উৎসবে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর মাঠে গড়াচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)-এর ১১তম আসর। এর আগে ১০টি আসর পার করে ফেললেও দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি এখনো ধুঁকছে। নানা বিতর্ক আর সমালোচনা এর সঙ্গী। সব বিতর্ক ঝেড়ে ফেলে একটা নতুন বিপিএল উপহার দিতে যাচ্ছেন বিসিবি’র নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ। তা করতে গিয়ে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে টুর্নামেন্টটির সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোয় এবং সেটি করা হচ্ছে খোদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিকল্পনা অনুযায়ী। তারই ধারাবাহিকতায় বিপিএল চলাকালে সারা দেশে যুব উৎসব করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। আর এই উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশে আসছেন ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সেখানে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোর সঙ্গে দেখা করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যুব উৎসবে যোগদানের জন্য। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান। এ ছাড়া এ মুহূর্তে নারী ফুটবলের অন্যতম কয়েকটি সেরা দলকে বাংলাদেশে আনার বিষয়েও ইনফান্তিনোর সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ‘ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যুব উৎসবে যোগদানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা আসন্ন যুব উৎসবে যোগদানের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানান এবং বিশ্বজুড়ে স্বনামধন্য কয়েকটি নারী ফুটবল দলকে বাংলাদেশে আনার বিষয়ে তার সহযোগিতা চান।’ অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের ম্যাচ খেলার আকুতি অনেক দিনের। এমনও হয়েছে, মেয়েরা ৯ মাস কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচও পাননি। বাফুফে তাদের জন্য ম্যাচের আয়োজন করতে পারেনি। আর্থিক সংকটের অজুহাত দেখিয়ে মেয়েদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে পাঠানো হয়নি। নিয়মিত ঘরোয়া ফুটবল না হওয়া, আর্থিক অনিশ্চয়তা নানা রকমের হতাশা নিয়ে দল ছেড়েছেন অনেক নারী ফুটবলার। এবার সাফ জেতার পর নারী ফুটবল দলকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংবর্ধনা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে সকালের নাস্তায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে নিজেদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন নারী ফুটবলাররা। সেসব সমস্যার কথা শুনে প্রধান উপদেষ্টা ফুটবলারদের সমস্যাগুলো লিখিতভাবে জমা দিতে বলেন। মেয়েদের চাহিদার মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলা। পরপর দুটি সাফ জেতা মেয়েদের অনুরোধ রাখতেই ফিফা প্রেসিডেন্টের কাছে এই অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া বিপিএলকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতেই ফিফা প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানালেন। এবারের প্যারিস অলিম্পিকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জড়িত ছিলেন ইভেন্টের ডিজাইনের সঙ্গে। এবার তার পরামর্শ নিয়ে সাজাতে চান বিপিএলও। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া কয়েক দিন আগে বিসিবি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেন। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা বিসিবি’র কর্মকর্তাদের তাগিদ দেন জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর। পাশাপাশি নতুন আঙ্গিকে আয়োজনেরও। ক্রীড়া উপদেষ্টাকে দেখানো প্রেজেন্টেশন ছিল সেই মোতাবেকই। আগামীতে আবারো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন বিসিবি’র কর্মকর্তারা।