প্রথম পাতা
হোয়াইট হাউস কার?
মানবজমিন ডেস্ক
৫ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবারঅনিশ্চিত। ডেডলক্ড পরিস্থিতি। তুঙ্গে উত্তেজনার পারদ। জাতীয় পর্যায়ে এবং সবটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ডে একই দশা। হোয়াইট হাউসের দৌড়ে কে
জিতবেন! এটা এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। পরিস্থিতি এতটাই অনিশ্চিত যে, এ বিষয়ে বাজি ধরার সাহস নেই অনেকের। এক্ষেত্রে সম্ভাব্যতার গাণিতিক হিসাবও ব্যর্থ। কোনো উত্তর নেই। ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস-রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প মুখোমুখি। সুযোগ ফিফটি-ফিফটি। শিরদাঁড়ায় শিহরণ সৃষ্টি এ জন্যই। যেহেতু তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সমানে সমান, তাই যেকোনো প্রার্থী মাত্র দুই বা তিন পয়েন্টের ব্যবধানে নির্বাচনে জিতে যেতে পারেন স্বস্তির সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হোয়াইট হাউসের উত্তরসূরি কে হচ্ছেন, সে প্রশ্নের ফয়সালা দিতে আজ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ভোট দিচ্ছেন। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ৫ই নভেম্বর সকালে যখন ভোটগ্রহণ শুরু হবে তখন বাংলাদেশের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও এশিয়ার অনেক দেশে যখন রাত থাকবে সে সময় মার্কিনিরা ভোটকেন্দ্রে ভিড় করবেন। এ জন্য মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নির্বাচনের ফল জানা সম্ভব হবে না। বুধবার ভোর থেকে নির্বাচনের কিছু ফল পাওয়া যেতে পারে। এই নির্বাচনে স্পর্শকাতর মুসলিম কার্ড খেলে দিয়েছেন দুই চৌকস প্রার্থী। ডনাল্ড ট্রাম্প আগেই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি জয়ী হলে গাজা, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কাজ শুরু করবেন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই। এ বিষয়ে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোনোই কথা বলেননি। উল্টো তিনি গাজার প্রতিপক্ষ ইসরাইল এবং অন্যদিকে ইউক্রেনকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে এসেছেন। ফলে গাজায় কমপক্ষে ৪৩ হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনে কমালা হ্যারিসও বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন যুক্তরাষ্ট্রে সারা বিশ্বের এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর বিপুল পরিমাণ ভোটার অবস্থান করছেন। তাদের ভোট তার ব্যাগে ঢুকাতে হলে মুসলিমদের আশ্বস্ত করতে হবে। এ জন্যই প্রচারণার শেষ প্রান্তে এসে ট্রাম্পের প্রতি তিনি ট্রাম্পকার্ড খেলে দিয়েছেন। বলেছেন, নির্বাচিত হলে সর্বশক্তি দিয়ে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কাজ করবেন। সারা বিশ্ব এখন তাকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। কারণ, সেখানকার এই নির্বাচন পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। গাজা, লেবানন, ইউক্রেন যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করবে এই যুদ্ধের ওপর। তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সঙ্গে যে উত্তেজনা তাও নির্ধারিত হবে। বিশ্বমোড়ল বলে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সেখানে যিনিই নির্বাচিত হবেন, তিনিই তার মতো করে পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। ফলে বিশ্ব পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে- তা নির্ধারিত হবে এই নির্বাচনে। এ জন্য সারাবিশ্বের চোখ যুক্তরাষ্ট্রে। যদি ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হন তাহলে তিনি দেশটির ইতিহাসে ১৩০ বছরের মধ্যে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় নির্বাচন করে পরাজিত হয়ে তারপরের বছর নির্বাচন করে জয়ী প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হিসেবে সাবেক একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে গড়তে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড। সমান সুযোগ কমালা হ্যারিসের জন্যও। তিনি নির্বাচিত হলে হবেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। একই সঙ্গে তিনি হবেন প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আজ নির্বাচন পর্যন্ত দু’জনকেই সমান জনপ্রিয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ এক কঠিন পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্র এত কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন প্রায় ৪০ বছর ধরে দেখেনি। উভয় প্রার্থীকে জয়ী করার জন্য মাঠে নেমেছিলেন বাঘা বাঘা নেতারা। সেলিব্রেটি। বিলিয়নিয়াররা। এই নির্বাচনে অর্থনীতি অন্যতম ইস্যু। বেকারত্বের হার কম এবং স্টক মার্কেটের অবস্থা যথেষ্ট ভালো হলেও বেশির ভাগ মার্কিনি বলছেন, তারা প্রতিদিন উচ্চমূল্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। ১৮৭০-এর দশকের মহামারির পর এখনকার মতো এত মুদ্রাস্ফীতি দেখা যায়নি। এর সুযোগ নিচ্ছেন ট্রাম্প। তিনি প্রচারণায় ভোটারদের কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন চার বছর আগের তুলনায় আপনারা কি ভালো আছেন? এর মধ্যদিয়ে তার চার বছরের ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এ বছর যেসব দেশে ভোট হয়েছে সেখানে বেশ কয়েকবার ক্ষমতাসীন দলকে ছুড়ে ফেলেছেন ভোটাররা। এর জন্য দায় দেয়া হয় উচ্চমূল্য, কোভিড পরবর্তী অবস্থা, জীবনযাপনের খরচ বৃদ্ধি। এক্ষেত্রে মার্কিন ভোটাররা কোনটাকে বেছে নেবে- তা স্পষ্ট নয়। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ট্রাম্পের উস্কানিতে তার সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা চালায়। সেই ঘটনা, ধারাবাহিকভাবে অভিযুক্ত হওয়া, অপ্রত্যাশিতভাবে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও পুরো বছরে তার সমর্থন শতকরা কমপক্ষে ৪০ ভাগে স্থির ছিল। ডেমোক্রেট এবং রক্ষণশীলরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট পদে অযোগ্য ট্রাম্প। পক্ষান্তরে রিপাবলিকানদের যুুক্তি ট্রাম্প রাজনৈতিক ডাইনিবিদ্যার শিকার হয়েছেন। অর্থনৈতিক অবস্থার বাইরেও নির্বাচনে একটি বা দু’টি স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে ওঠে। তার মধ্যে ডেমোক্রেটরা গর্ভপাতের অধিকারকে বড় ইস্যু করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের ইস্যু হলো অবৈধ অভিবাসী তাড়ানো। বাইডেনের অধীনে সীমান্ত এলাকায় এনকাউন্টার হয়েছে রেকর্ড পর্যায়ে। অনুপ্রবেশ সীমান্ত এলাকা থেকে দেশের অনেক ভেতরে বিস্তৃত হয়েছে। জরিপ বলছে, ভোটাররা ট্রাম্পের ওপর আস্থা রাখেন যে তিনি অভিবাসী ইস্যুতে বেশি কিছু করবেন। ট্রাম্পের সামনে এমন সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমালা হ্যারিস নির্বাচনে জিতে যেতে পারেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরতে পারেন এমন আশঙ্কাকে সামনে নিয়ে মাঠে কমালা। তিনি ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট এবং গণতন্ত্রের হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জুলাই মাসে রয়টার্স/ইপসোস জরিপে ইঙ্গিত মিলেছে যে, প্রতি ৫ জন মার্কিনির মধ্যে চারজন মনে করেন দেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ জন্য ভোটারদের সামনে নিজেকে অধিক স্থিতিশীল প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছেন কমালা। তিনি এক্ষেত্রে বিশেষত টার্গেট করেছেন উদারপন্থি রিপাবলিকান ও নিরপেক্ষ ভোটারদের। জো বাইডেন যখন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন, তখনো পর্যন্ত ডেমোক্রেটরা নিশ্চিত পরাজয়ের অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে ট্রাম্পকে পরাজিত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন কমালা হ্যারিস। তিনি দ্রুততার সঙ্গে র্যালি করে, ট্রাম্পের সমতায় নিয়ে এসেছেন নিজেকে। ফলে তাকে ঘায়েল করার জন্য জো বাইডেনের গৃহীত অজনপ্রিয় নীতিগুলো ব্যবহার করেছে রিপাবলিকানরা। কিন্তু অনেক ইস্যুতে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে সুস্পষ্ট ব্যবধান পরিষ্কার করেছেন কমালা। বিশেষ করে ট্রাম্পের বয়স প্রায় ৮০ বছর। অন্যদিকে কমালা প্রায় ৬০। বয়সের মানদণ্ডে ট্রাম্পের চেয়ে কমালা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। নারীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে কমালা নিজেকে চ্যাম্পিয়ন করে তুলেছেন। সুপ্রিম কোর্ট রো ভার্সাস ওয়েড বিষয়ক রায়কে উল্টে দেয়ার পর এবং গর্ভপাতের অধিকার উল্টে দেয়ার পর এবারই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কমালা হ্যারিস গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে। এ জন্য যারা এই অধিকারের প্রতি সংবেদনশীল তারা ব্যাপকভাবে সমর্থন করছেন কমালাকে। বিশেষ করে নারীদের বেশির ভাগই তার পক্ষে। বলা হচ্ছে এই নারীরাই এবার নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেবেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে কমালার জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আগের নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, বিশেষ করে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে দেখা গেছে এই ইস্যু ফল উল্টে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। এর বাস্তবিক প্রভাব রয়েছে। সুইং স্টেট অ্যারিজোনা সহ ১০টি রাজ্যে এবার ব্যালটে জানতে চাওয়া হচ্ছে কীভাবে গর্ভপাতের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বিষয়টি কমালার পক্ষে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। এ ছাড়া তার সামনে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ। এটা তাকে সুবিধা দেবে। নির্বাচনে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট আছে। তার মধ্যে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট যিনি পাবেন তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট।
কমলা হেরিসের হোয়াইট হাউস
I wish Kamala Harris occupy. The win of lunatic man is disgusting for a powerful honorable country. Whoever win make no difference but it is eyesore for me to see an honorable country's president is mad