শেষের পাতা
দুই ছেলের পাশে চিরনিদ্রায় ফজলে রাব্বী মিয়া
স্টাফ রিপোর্টার ও উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি
২৬ জুলাই ২০২২, মঙ্গলবার
দুই ছেলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। গতকাল দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে বিমান বাহিনীর ৪১১ নম্বর হেলিকপ্টারে তার মরদেহ জন্মস্থান গাইবান্ধার সাঘাটার বোনারপাড়ায় নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেয়া হয় ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সেখানে সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অর্নার দেয়া হয়। গার্ড অব অনার পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান ও পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম। বিকাল ৩টায় তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে মরদেহ নিজ বাড়ি গটিয়া গ্রামে নেয়া হয়। সেখানে বিকাল সাড়ে ৫টায় তৃতীয় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
গতকাল সকাল পৌনে ৯টার দিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ফজলে রাব্বি মিয়ার মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছে। তার প্রথম জানাজা সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা সুপ্রীম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
ডেপুটি স্পিকারের মরদেহে বিপিজেএ’র শ্রদ্ধা
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ পার্লামেন্ট জার্নালিস্টস এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন বিপিজেএ নেতৃবৃন্দ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিপিজেএ’র আহ্বায়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সিনিয়র সদস্য আসাদুজ্জামান সম্রাট, রফিকুল ইসলাম সবুজ, শাহজাহান মোল্ল্যা, মিজান রহমান, সাকিলা পারভীন, তানভীর আহমেদ, হাবিবুর রহমান প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেতৃবৃন্দ বলেন, বলেন, তার মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। দেশ এক নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদকে হারালো আর আওয়ামী লীগ হারালো দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ নেতাকে। আর সাংবাদিকরা হারালো সংসদীয় অনেক জটিল বিষয়গুলোকে সহজ ও সাবলিলভাবে বুঝিয়ে দেয়ার মতো বিশেষজ্ঞকে। তার আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
গত শুক্রবার (২২শে জুলাই) বাংলাদেশ সময় দিনগত রাত ২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন গাইবান্ধা-৫ আসনের এই সংসদ সদস্য।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ই এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালে প্রথম, ১৯৮৮ সালে ২য়, ১৯৯১ সালে ৩য় ও ১৯৯৬ সালে ১২ই জুন চতুর্থবার গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৯ সালে তিনি আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ ছিলেন। নবম সংসদে ফজলে রাব্বী সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি, কার্যউপদেষ্টা কমিটি, কার্য প্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের চেয়ারে বসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। একাদশ সংসদেও টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ সময় তিনি কার্য উপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটির সদস্য এবং লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি ছিলেন।