ঢাকা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৫ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

প্রথম পাতা

ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন প্রধান উপদেষ্টার

স্টাফ রিপোর্টার
১৩ অক্টোবর ২০২৪, রবিবার
mzamin

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা এমন সমাজ চাই না যেখানে সেনাবাহিনী, পুলিশ দিয়ে উৎসব পালন করতে হবে। এ সরকার এমন বাংলাদেশে গঠন করতে চায় যেখানে সব সমপ্রদায় এবং নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন করেন এবং সেখানে হিন্দু সমপ্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

তিনি বলেন, আমরা বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব-এর সাহায্য নিয়ে দুর্গাপূজা করেছি। তাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে পারি খুব শিগগিরই, যেখানে তারাও ছুটি উপভোগ করবে, আমরাও ছুটি উপভোগ করবো। তাদের (আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) ছুটি বিসর্জন দিয়ে আমাদের আনন্দ করতে হবে না। এ ‘অপরাধবোধ’ থেকে আমরা মুক্ত হয়ে যাবো। দেশের নাগরিক হিসেবে উৎসব পালন করবো। 

এ রকম রাষ্ট্র আমরা গঠন করবো। আমরা সেই স্বপ্নের রাষ্ট্র গঠন করতে পারি, যেটা দিয়ে দেশের মানুষ দুনিয়ার সামনে গর্ব করতে পারে। 
প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় মন্দিরে পৌঁছলে তাকে পূজা উৎসব পরিষদের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই যে আমরা আপনাদের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে আপনাদের পূজা উৎসবের সুযোগ করে দিলাম। এটা যেন ভবিষ্যতে আর কখনো করতে না হয়, সে জন্য আমরা একযোগে কাজ করবো। আমরা এমন এক বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, যে বাংলাদেশে যারা এই দেশের নাগরিক তাদের ‘সকলেরই সমান অধিকার’, এটা যেন আমরা নিশ্চিত করি।

শুধু কিতাবে লিখে দিলে হবে না- মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরপর কাটাকাটি মারামারি এগুলো করলাম, অধিকার কেড়ে নিয়ে বাহবা পেলাম, এ রকম বাংলাদেশ আমরা চাই না। এ রকম সমাজ চায় না বলেই ছাত্র-জনতা তাদের জীবন দিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার স্বপ্ন নিয়ে এ যাত্রা শুরু করেছি। আমরা এ স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চাই। এটা শুধু কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। 

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশে আমাদের কী কী নতুন দরকার, তা বের করে আনতে হবে, সেটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমরা কতোগুলো কমিশন বানিয়ে দিয়েছি। তারা তো দেশ পাল্টিয়ে ফেলতে পারবে না। তাদের সেই সাধ্য তো নেই। কমিশন করেছি এই জন্য যে, তারা আমাদের স্বপ্নগুলোকে একত্র করবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে মহাস্বপ্নে আমরা চলে এসেছি, এ স্বপ্নের একটা রূপরেখা থাকবে। আমরা বলছি সংবিধান সংশোধন করবো, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রথা সংশোধন করবো, অনেক কিছু। 

সংস্কার কমিশন তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি বিষয়ে রূপরেখা দেবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যেগুলো আপনারা চান সেগুলো বাস্তবায়ন করার নামই হলো সংস্কার। দেশকে ‘পাল্টে ফেলার’ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এটা যেন আমাদের হাতছাড়া না হয়ে যায়। কারণ, একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে এটা আর কোনো দিন ফিরে আসবে না।

অপূর্ব এক সুযোগ ছাত্র-জনতা আমাদের হাতে দিয়েছে। আমাদের হাতে আলাদিনের প্রদীপ দিয়ে দিয়েছে, আমরা যা চাই, তাই করতে পারি। স্বপ্নগুলোকে একত্র করেন। ছোটখাটো বিষয়ের মধ্যে থাইকেন না। বড় বিষয়ের দিকে আসেন। কাঠামো তৈরি করে দিলে, তারপরে কে কী পেলো বা পেলো না, সে হিসাবই নেই, পাবো বলেই তো সবকিছু করছি। 

অতীতে অত্যাচারিত হওয়ার অভিযোগ এনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এমন একটা সমাজ থেকে আমরা বেরিয়ে আসছি, যেখানে সমস্ত অধিকার ছিল ছোট্ট একটি গোষ্ঠীর কাছে, বাকি মানুষের কোনো অধিকার ছিল না। আমরা সব অধিকার বঞ্চিত ছিলাম।

এই অভ্যুত্থান হঠাৎ করে সেটা পাল্টে ফেললো। যারা মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছিল তাদের থেকে দেশকে মুক্ত করেছিল ছাত্র-জনতা। এখন এ অধিকার আমাদের সবার কাছে আসতে হবে।

রাষ্ট্র যদি কারও অধিকার নিশ্চিত করতে পারে তা হলে সেই রাষ্ট্রের কী দরকার- এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেকের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। যে অধিকার কেড়ে নেবে, তাকে যেন সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেয়া হয়। এটিই স্বপ্ন।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status