ঢাকা, ১১ অক্টোবর ২০২৪, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

‘ইলিশ কূটনীতি’ কিসের বার্তা দেয়?

মানবজমিন ডেস্ক

(১ সপ্তাহ আগে) ১ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৩:১৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:০৩ অপরাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। স্থানীয়ভাবে দেশ এবং দেশের বাইরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মাছটি এ নামেই পরিচিত। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে উভয় স্থানেই ইলিশকে মাছের রাণী বলে মনে করা হয়। অতি স্বাদের কারণে মাছটি মানুষের কাছে পদ হিসেবে বেশ পছন্দনীয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ঢাকা-দিল্লির কূটনৈতিক সম্পর্কেও এই ইলিশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশি ভারতের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কূটনীতির হাতিয়ার হিসেবে বঙ্গোপসাগরে এবং পদ্মায় পাওয়া এই মাছটিকে ব্যবহার করেছিলেন। 

১লা অক্টোবর ‘ফিশ ডিপ্লোমেসি: হোয়াট আ হিলসা ব্যান রিভিলস অ্যাবাউট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টেনশনস’ শিরেনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে বলা হয়, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশে যে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে তারা সাময়িকভাবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। এতে পশ্চিমবঙ্গে দূর্গা পূজার আগে একধরনের সঙ্কট তৈরি হয়, কেননা সরষে ইলিশ বাংলাদেশসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে বেশ জনপ্রিয়। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইলিশ নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে অনেক বিশেষজ্ঞরা শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন। মূলত স্থানীয় বাজারে স্বাদু পানির এই মাছটির দাম নিয়ন্ত্রণেই ভারতে রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার দুই সপ্তাহ পরেই তারা পুনরায় এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইলিশকে কেন্দ্র করায় এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী ইলিশ জনপ্রিয় একটি খাবারের চেয়েও বেশি কিছু?

কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে ইলিশের যে প্রভাব রয়েছে তা কিছুট হলেও ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। এর কারণ কী? মূলত ইলিশ রপ্তানীতে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশই বাংলাদেশ করে। তবে দিন দিন মাছটির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ইলিশ শিকার, দিন দিন চাহিদা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাবে এই মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। জেলেরা বলছেন, এ বছর সমুদ্রের রুক্ষভাবের কারণে তারা পর্যাপ্ত ইলিশ ধরতে হিমশিম খাচ্ছেন।   

অন্যদিকে রপ্তানি ঘাটতি এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ বাংলাদেশি নাগরিক ইলিশ ক্রয় করতে পারছেন না। চলতি মৌসুমে স্থানীয় বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১৮০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা গত বছর ছিল ১৩০০ টাকা। বছরে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টন ইলিশ ধরে বাংলাদেশের জেলেরা। যা দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ। এর মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ জেলে তাদের জীবন ধারণ করে থাকে। এছাড়া এই ইলিশের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানো সম্ভব

সেপ্টেম্বরে, ঢাকা ইলিশের উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিশেষ করে ভারতকে লক্ষ্য করে এটি করা হয়েছিল। কিন্তু অক্টোবরে হিন্দুদের দুর্গাপূজা উৎসবের কারণে ভারতের বাজারে ইলিশের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে বাংলাদেশ। কেননা প্রতিবছর চাহিদার বেশ একটি অংশ তারা বাংলাদেশ থেকেই পায়। মৎস্য কর্মকর্তারা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সরবরাহকে অগ্রাধিকার দিতে এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে ইলিশ রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজনীয় ছিল। দেশের বাজারে ঘাটতি রেখে আমরা বিদেশে ইলিশ রপ্তানি করতে পারি না, গণমাধ্যমকে এ কথাই বলেছিলেন বাংলাদেশের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার। সেসময় তিনি ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধের কথা জানিয়েছিলেন। যদিও নিষেধাজ্ঞার সপ্তাহখানেক পরেই এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রপ্তানিকারকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে নির্দিষ্ট পরিমাণ (৩ হাজার টন) ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি কমে যাওয়ায় তাদের বাজারে এর দাম বেড়েছে কয়েক গুন। তবে এই পদক্ষেপের পরও বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। সেন্টার ফর অল্টারনেটিভসের অধীনে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরির গবেষণা তথ্য বিশ্লেষক খন্দকার তাহমিদ রেজওয়ান বলেন, ভারতে ইলিশ পাচারকারী একটি সিন্ডিকেট ইলিশের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। ভারতের এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, সাময়িকভাবে ভারতে ইলিশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের ক্ষেত্রে হাসিনার নীতির ‘দৃঢ় প্রস্থান’ দৃশ্যত হয়েছে। 

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর হাসিনা প্রথমবারের মতো ইলিশকে কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি প্রধান দ্বিপাক্ষিক সমস্যা পানি বণ্টনের একটি যুগান্তকারী চুক্তির আগে তিনি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে ইলিশ উপহার দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে ইলিশের একটি চালান পাঠিয়েছিলেন, যিনি বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী। এক বছর পরে, সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির জন্য উপহার হিসেবে ইলিশ পাঠিয়েছিলেন হাসিনা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার হাসিনার ভারত-পন্থী পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসেছে বলে ধারণা করছেন ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক বিষয়ক বিশ্লেষকরা। 

ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবারই প্রথম নয়। এর আগে পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বিরোধের কারণে ২০১২ সালে ভারতে ইলিশ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ। পরে ২০১৮ সালে দুদেশের সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তা তুলে নেয়া হয়েছিল। উপরন্তু, কয়েক বছর ধরে হাসিনা সরকার ভারতকে দুর্গাপূজার আগে শত শত টন মাছ ‘উপহার’ দেয়। প্রতি বছর প্রজননকালীন সময়ে ইলিশ রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ইলিশ ধরার উপর স্থানীয়ভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এই নিষেধাজ্ঞা অক্টোবর মাসে ২২ দিনের জন্য কার্যকর করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর নিষেধাজ্ঞার এ ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ। স্থানীয়ভাবে এভাবে ইলিশ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক দিক হচ্ছে, এতে জেলেদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, যাদের অনেকেই তাদের জীবিকার জন্য ইলিশের উপর নির্ভরশীল।
 

পাঠকের মতামত

দুষ্প্রাপ্য মাছ ইলিশ। এখন দেখছি তাই। দাম বেশী। নন স্টপ। স্পীড বড্ড হাই। হায়রে মানুষ। তবুও চাই। ❤️❤️

Anwarul Azam
২ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ১:৫৬ অপরাহ্ন

অন্যদিকে রপ্তানি ঘাটতি এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ বাংলাদেশি নাগরিক ইলিশ ক্রয় করতে পারছেন না। তাতে কি(?)!

Amir
১ অক্টোবর ২০২৪, মঙ্গলবার, ৫:৪২ অপরাহ্ন

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

বিবিসির প্রতিবেদন/ হাসিনাকে নিয়ে দ্বিধায় দিল্লি!

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status