প্রথম পাতা
বাংলাদেশের নির্বাচনঃ দিল্লি ও ওয়াশিংটনের সমীকরণ
২২ জুলাই ২০২২, শুক্রবাররাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে তিক্তভাবে আক্রমণ করার জন্য এবং ওয়াশিংটনকে সরাসরি সেগুলো প্রত্যাহার করতে বলার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বেশ খুশি ভারত। কারণ এই নিষেধাজ্ঞার জেরে বিশ্বব্যাপী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এদিকে এই সুযোগে ঢাকার বিরোধীরা ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরকারের বিভেদ বাড়াতে ময়দানে নেমে পড়েছে। যা দেখে নিঃশব্দে হাসছে নয়া দিল্লি। কারণ ভারত আজ আমেরিকার কট্টর মিত্র। তারা চায় না যে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও নেপাল ভারতের চেয়ে বেশি ওয়াশিংটনের ওপর প্রভাব বিস্তার করুক। মালদ্বীপ হলো একমাত্র দক্ষিণ এশীয় দেশ যাকে ওয়াশিংটনের কাছাকাছি যেতে সম্মতি দিয়েছে ভারত। ভারতের ন্যাশনাল হেরাল্ডে এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেছেন এসএনএম আবদি। তিনি আরও লিখেছেন, শ্রীলঙ্কায় খুব বেশি হট্টগোল ছাড়াই চীন এবং রাজাপাকসে ভাইদের অপসারণ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে ভারত। এখন নয়া দিল্লি অবশ্যই তার শ্রীলঙ্কার কৌশল পুনঃনির্মাণ করবে।
কিন্তু বাংলাদেশ ও নেপালকে ভারতের প্রয়োজন নিজেদের স্বার্থেই।
নিষেধাজ্ঞার জেরে ঢাকায় উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। শেখ হাসিনার অভ্যন্তরীণ বৃত্তের শীর্ষস্থানীয় র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে ওয়াশিংটন স্পষ্টভাবে অস্বীকৃতি জানায়। বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হুইটলিও একটি বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনের দিন ভোটাররা যেন নিজের ভোটটা ঠিকমতো দিতে পারেন।’ বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালের বিগত জাতীয় নির্বাচনের তুলনায় আরও ভালো, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেবে।’ এই সমস্ত সতর্কবার্তা নিয়ে সমর্থন পেতে নয়া দিল্লির কাছে ইতিমধ্যেই ঢাকা ছুটে গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ৯৬% ভোট পেয়েছিল! এবং ২৯৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৮৮ আসনে জয়ী হয়।
নির্বাচনে সম্পূর্ণ কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। নয়া দিল্লি জানতো যে, নির্বাচনে জয়ী হতে অন্যায় উপায় অবলম্বন করা হবে কিন্তু অসদাচরণের মাত্রা এবং বিজয়ের ব্যবধান দেখে তারা বিস্মিত হয়েছিল। মোদি সরকার প্রহসনমূলক ভোটের ফলাফলকে শান্তভাবে সমর্থন করলেও মার্কিন ও পশ্চিমা সরকারগুলো প্রকাশ্যে তাদের অবিশ্বাস ও সংশয় প্রকাশ করেছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর তারা স্পষ্টভাবে এই অনিয়মের নিন্দা করেছিল। কিন্তু ভারত প্রশ্নাতীতভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়েছে। বিনিময়ে, তিনি প্রতিটি পদক্ষেপে নয়া দিল্লিকে সঙ্গে রেখেছেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে ভারত অস্বীকার করেছে।