অনলাইন
লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে গৃহহীনদের স্থানান্তর বিতর্ক তুঙ্গে , মেয়র লুৎফুরের প্রতি বাসিন্দাদের অসন্তোষ
আরিফ মাহফুজ , লন্ডন থেকে
(২ সপ্তাহ আগে) ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ২:২৮ অপরাহ্ন
গৃহহীনতার শিকারদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের হোমলেসনেস প্লেসমেন্ট পলিসিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে উত্তপ্ত লন্ডনের প্রধান বাংলাদেশি কমিউনিটির কাউন্সিল টাওয়ার হ্যামলেটস্।
গত এক সপ্তাহ ধরে কাউন্সিলের মেয়র বনাম হোমলেসনেস প্লেসমেন্ট পলিসির বিপক্ষে বাসিন্দারা । এ নিয়ে গৃহহীনদের পক্ষে ক্যাম্পেইন ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন কাউন্সিলের অধিকাংশ বাসিন্দা । মেয়র লুৎফুর রহমানের প্রতিও বেড়েছে অসন্তোষ।
বাড়িঘরের তীব্র ঘাটতি এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক চাপের কারণে, টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল কয়েক মাস আগে লন্ডনের অন্যান্য কাউন্সিলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার বাসস্থান প্লেসমেন্ট নীতির পর্যালোচনা করে। বলা হচ্ছে জাতীয়ভাবে বাড়ি নির্মাণের নিম্ন হার, সরকারি বেনিফিট ক্যাপ এবং নো ফল্ট এভিকশন (‘কোন দোষ নেই’ উচ্ছেদ) বৃদ্ধি হোমলেসনেস সার্ভিসের ওপর ভীষণভাবে চাপ তৈরি করেছে এবং ইতিমধ্যে সম্প্রসারিত অস্থায়ী আবাসন হাউজিং স্টকের ওপর অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি করেছে। এই চাপের ফলাফলের অর্থ হলো — যেমনটি লন্ডন এবং বিস্তৃত যুক্তরাজ্য জুড়েই দৃশ্যমান — টাওয়ার হ্যামলেটসের অনেক পরিবার উপযুক্ত, উচ্চ—মানের আবাসিক সুবিধার পরিবর্তে অস্থায়ীভাবে হোটেলে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের মেয়র মনে করেন এই ব্যবস্থাটি যেমন আর্থিকভাবে টেকসই নয়, তেমনি এটি কিছু কাউন্সিলকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং এর একটি মানবিক মূল্য রয়েছে যা তার কাছে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য তাই কাউন্সিলে গৃহহীনদের স্থানান্তর এর সমাধান চান মেয়র। এর প্রেক্ষিতেই মেয়র লুৎফর রহমান নতুন একটি নিয়মের সিদ্ধান্ত নেন যে গৃহহীনদের পুনর্বাসন করতে লন্ডনের বাইরে ব্রিটেনের যে কোন শহরে পুনর্বাসন করা হবে। এই নতুন নীতি ঘোষণার পর কমিউনিটিতে শুরু হয় বিতর্ক , কমিউনিটির বেশিরভাগ নাগরিক মেয়রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। কাউন্সিলের বাসিন্দারা মনে করেন গৃহহীনদের নিজ কাউন্সিলে গৃহ না দিয়ে লন্ডনের বাইরে অন্যত্র পাঠানো একটি অমানবিক সিদ্ধান্ত।
কমিউনিটির বাসিন্দাদের চরম চাপের মুখে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন মেয়র লুৎফুর রহমান। বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলের কেবিনেট মিটিংয়ে এই নীতি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন। এ বিষয়ে মেয়র বলেন , প্রস্তাবিত পলিসিতে পরিবর্তনগুলো প্রসঙ্গে আমরা বারার বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি ঘনিষ্ঠভাবে শুনেছি। আমি সব সময় এটা দৃঢ়তার সাথে বলি যে আমি একজন শ্রোতা মেয়র, এটি হচ্ছে একটি শ্রোতা কাউন্সিল এবং এখানে আমরা যা কিছু করি তার মূলে থাকেন বাসিন্দারা। এই শোনার ফলস্বরূপই, আমি হোমলেসনেস একোমোডেশন প্লেসমেন্ট নীতিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের বাস্তবায়ন স্থগিত করছি, যাতে আমাদের সঠিকভাবে পর্যালোচনা এবং মানুষের জন্য এর প্রভাব মূল্যায়ন করার জন্য আরও সময় দেয়া যায়।
তবে মেয়র কর্তৃক বিতর্কিত এই নীতি- সাসপেন্ডকে অস্পষ্ট বলে দাবি করছেন গৃহহীনদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করা বাসিন্দারা । তারা বলছেন এই নীতিটিকে পুরোপুরি বাতিল করা হোক। গতকাল শুক্রবার নীতিটি মেয়র কর্তৃক সাসপেন্ড একটি অস্পষ্ট বার্তা দাবি করে ও নীতিটি পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে মেয়রের অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন গৃহহীনদের পক্ষের আন্দোলকারীরা। বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, মেয়র শুধুই বলেছেন পলিসি সাসপেন্ড করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত এমন রিপোর্ট আসেনি যে সাস্পেন্ডের পরবর্তী পদক্ষেপ কি ?
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন , মেয়র বলেন তিনি একজন লিসেনিং মেয়র কিন্তু গৃহহীনদের স্থানান্তর পলিসি করার আগে তিনি কাউন্সিলের নাগরিকদের কোনো মতামত নেননি । এমনকি যারা গৃহহীন, যাদের স্থানান্তর করা হবে তাদেরও ডেকে জিজ্ঞেস করেননি মেয়র।
তবে আন্দোলনকারীদের জবাবে লুৎফর রহমান বলেন , গত করেক বছরে লন্ডনে সাংঘাতিক হরে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে যার কারণে বাসিন্দারা ভাড়া সংকুলান করতে পারছেন না । ফলে বাসিন্দারা মেয়রের কাছে (কাউন্সিলের কাছে ) আসেন বাসস্থানের জন্য। যারা বিডিং পদ্ধতিতে আছেন তারা পদ্ধতিগভাবে স্থায়ী ঘর পাবেন কিন্তু যারা নিজেকে হোমলেস ঘোষণা করেন তাদের কাউন্সিল ঘর দিতে হিমশিম খায়। তাই তাদের স্থানান্তর পলিসি করেছি তবে লন্ডনের বাইরে দূরে কোথাও স্থানান্তরের পলিসি সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে ৯০ মিনিটের দূরত্বে স্থানান্তর পলিসি এখন থাকবে।
আন্দোলকারীরা বলছেন পলিসিটি একেবারে বাতিলের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা ক্যাম্পেইন ও আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।