ঢাকা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

জিহাদ বলেছিল আর একদিনই আন্দোলনে যাবো মা

পিন্টু আনোয়ার
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবারmzamin

কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল কলেজ শিক্ষার্থী জিহাদ হাসান মাহিম। আন্দোলন যখন একদফায় গড়ায় তখন যাত্রাবাড়ী এলাকায় ছিল টানা সংঘাত সহিংসতা। ভয় থেকে মাহিমের মা কোহিনুর বেগম ছেলেকে বারণ করেছিলেন আর আন্দোলনে না যেতে। মাহিম বলেছিল মা আর একদিন মাত্র আন্দোলনে যাবো। ৫ই আগস্ট মাকে লুকিয়ে আন্দোলনে যায় সে। এরপর আর ঘরে ফিরতে পারেনি। ঘরে ফিরে মাহিমের গুলিবিদ্ধ লাশ। গত ৫ই আগস্ট দুপুরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জিহাদ হাসান মাহিম। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী মাহিমের বাবা মোহাম্মদ আলম মিয়া ছেলের শোক বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে তিনি গর্বও বোধ করেন ছেলের আত্মত্যাগে। 

যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় তাদের বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকবিহ্বল পরিস্থিতি।

বিজ্ঞাপন
তার বই খাতা, খেলার সরঞ্জাম বুকে আঁকড়ে ধরে যেন ছেলের স্পর্শ অনুভব করতে চাইছেন শোকার্ত পিতামাতা। কান্নায় ভেঙে পড়ে পিতা মোহাম্মদ আলম মিয়া বলেন, ‘গত ১৯শে জুলাই আন্দোলনে গিয়ে সে ছররা গুলিতে আহত হয়েছিল। আমি তাকে বলি, আন্দোলনে গিয়ে তোর কিছু হলে আমাদের কী হবে? ছেলে উত্তর দিলো, আমরা ঘরে বসে থাকলেই বা তোমাদের কী হবে! দেশটাকে পরিষ্কার করতে হবে। সেটা আমরা ঘরে বসে থাকলে হবে না। আমি বলি, তাহলে তুই একা যাবি না। আমি আর তোর ছোট ভাইও সঙ্গে যাবো। 

মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমি স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী মানুষ। কষ্ট হলেও আমার সীমিত সামর্থ্যে ছেলের স্বপ্ন পূরণে চেষ্টা করে গেছি, নিজে স্বপ্ন দেখেছি। ছেলে হারিয়ে এখন আমার চারদিক অন্ধকার!’ জিহাদ হাসান মাহিমের বয়স হয়েছিল ১৮ বছর। রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন জিহাদ। অঝোর কান্নায় মাহিমের মা কোহিনুর বেগম বলেন, ‘সবাই বলছিল ৫ই আগস্ট পরিস্থিতি আরও বেশি খারাপ হবে। আগের দিন ছেলেকে বলি, তুই আন্দোলনে আর যাবি না। আমার খুব ভয় লাগছে। ছেলে বললো, আর এক দিনই যাবো মা। সেদিন সকাল থেকেই ছেলেকে আন্দোলনে যেতে নিষেধ করছিলাম। সে বাসায় ছিল। আমাকে ডিম সেদ্ধ করতে বললো। কিন্তু আমি যেন বুঝতে না পারি সে বাইরে যাবে, এজন্য হয়তো এক ফাঁকে মোবাইল বাসায় রেখে এবং নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে যায়। দুপুরের পর থেকে বাড়ির সামনে রাস্তায় দলে দলে মানুষের আনন্দ-হৈ হুল্লোর টের পাই। আমার ছেলেটা  মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছিল না। আমি ভাবলাম, বন্ধুদের সঙ্গে সেও হয়তো আনন্দ-উল্লাসে মেতেছে। হয়তো কোথাও ঘোরাঘুরি করছে। 

জিহাদের ভগ্নিপতি তানভীর আহমেদ হিমু জানান, যাত্রাবাড়ী থানার কাছে গুলিবিদ্ধ জিহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান শান্ত, নোমান, মনিরসহ তরুণ বয়সের কয়েকজন। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ায় ময়নাতদন্ত চাননি তারা। জিহাদের মরদেহ হাসপাতাল থেকে তারা নিয়ে যান দনিয়া জামে মসজিদে। তখনো তার পরিচয় অজ্ঞাত। পরে জিহাদের মরদেহের ছবি তুলে রাত ১০টার দিকে এক ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয়া হয়, কেউ চেনে কিনা। পরে একজন চিনতে পেরে কল দিয়ে জিহাদের পরিবারকে জানায় সেই পোস্টের ব্যাপারে। 

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নে জিহাদ হাসানের গ্রামের বাড়ি। সেখানে দাদার কবরের পাশে শায়িত করা হয়েছে তাকে। জিহাদকে নিয়ে এখন গর্বিত পরিবারের সদস্যরা। তিন ভাই বোনের মধ্যে জিহাদ দ্বিতীয়। ছোট ভাই তাহমিম হাসান যাত্রাবাড়ী এলাকার বর্ণমালা আদর্শ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বড় বোন রাজধানীর বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফরিন বিনতে আলম মিম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মনটা ছিল অনেক বড়। যেকোনোভাবে সমাজসেবা করতে চাইতো সে। জিহাদ ছিল সদাচারী এবং অত্যন্ত মেধাবী। কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হয়ে জিহাদ বলেছিল, ভবিষ্যতে সে চাকরি করবে না, ব্যবসা করবে। অনেক কর্মসংস্থান করবে। বন্ধুদের কাছে সে বলতো, আব্বুর বয়স হচ্ছে তাকে বেশিদিন চাকরি করতে দেবো না। শিগগিরই আমার কিছু করতে হবে।’

জিহাদের বাবা মোহাম্মদ আলম জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই জিহাদ সোচ্চার ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মসূচিতে ছিল তার সরব অংশগ্রহণ। মৃত্যুর ২ দিন আগে তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জিহাদ লিখেছিলেন, ‘গন্তব্য একটাই। হয় দেশের কাফনের কাপড় শেষ হবে, অথবা মিষ্টির দোকান খালি হবে।’

মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আদর করে ছেলের নাম রেখেছিলাম জিহাদ। কে জানতো ছেলে আমার বিপ্লবী হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রাণ দেবে! আন্দোলনে প্রাণ হারানো শিশু-কিশোরদের জন্য সবসময়ই দোয়া করেছি। আমার সন্তানও চলে যাবে ভাবিনি। আমাদের সন্তানদের রক্তের বিনিময়ে এখন শুধু সুন্দর একটা দেশ চাই।’
 

পাঠকের মতামত

কান্নায় বুক ভেঙে যায়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন, আমিন। সরকারের উচিৎ প্রতিটি বিপ্লবী শহিদের পাশে দাঁড়ানো।

Md. Rashed
১৫ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৯:৩১ পূর্বাহ্ন

তোমরা এদেরকে মৃত বলোনা , কারন এরা রিজিক প্রাপ্ত হয় তোমারা তা বুঝ না ....... আল-কোরআন।

Khan.....
১৫ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৬:৫০ পূর্বাহ্ন

চোখের পানি আটকিয়ে অসম্ভব! সব হত্যার বিচার করতেই হবে।

শেখ ওসমান গনি
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৬:৩২ অপরাহ্ন

সরকারের উচিৎ প্রতিটি বিপ্লবী শহিদের পাশে দাঁড়ানো।

Mustafa Kamal
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৪:২০ অপরাহ্ন

হে আরশের মালিক জিহাদ সহ যাঁরা দেশের তরে প্রাণ বিসর্জন করেছেন তাদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস এবং যাঁরা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসায় আছেন তাঁহাদের শেফা দান করুন। আমীন।।

মোঃ মাহমুদুর রহমান
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ২:২০ অপরাহ্ন

হে আল্লাহ আপনি জিহাদ হাসান মাহিমকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতে উঁচু মর্তবা নসিব করুন। আমীন

nur korim
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১:১২ অপরাহ্ন

‘গন্তব্য একটাই। হয় দেশের কাফনের কাপড় শেষ হবে, অথবা মিষ্টির দোকান খালি হবে।’ এই প্রজন্ম এতো এডভান্স ! কি ডায়লগ দিয়ে গেলে ভাই !!

Monir
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১২:০৮ অপরাহ্ন

হে আল্লাহ আপনি জিহাদ হাসান মাহিমকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতে উঁচু মর্তবা নসিব করুন। আমীন

আজিম
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

Akta akta ghotona pore ar chokha pani chola asa.Allah zehad ka maf kora dea jannatul ferdoous a dea dao.

Muhammad Ali
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

কান্নায় বুক ভেঙে যায়। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন, আমিন।

Sheikh Latif
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১১:০৯ পূর্বাহ্ন

হে আল্লাহ! তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। জীবন দিয়ে জুলুমবাজ দের বিদায় করেছে।

Shahid Babul
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

হে আল্লাহ! তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। জীবন দিয়ে জুলুমবাজ দের বিদায় করেছে।

Shahid Babul
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

হে আল্লাহ! তার আত্মাকে শান্তিতে রাখুন। জীবন দিয়ে জুলুমবাজ দের বিদায় করেছে।

Shahid Babul
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:৫৪ পূর্বাহ্ন

জিহাদ ও জিহাদের পরিবারের জন্য অনেক অনেক দোয়া।ধন্যবাদ মানবজমিন কে নিউজ করার জন্য।

s a rana
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

একেকটা ঘটনা পড়ি আর চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। আল্লাহতায়ালা তোমাদের এই মৃত্যুকে শাহাদাত হিসেবে কবুল করে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Abu Jafar
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস এর উচচ মাকাম দান করুন। শহিদী মর্যাদা দান করুন আমিন।

SHEIKH AMINUL ISLAM
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

এই আন্দোলনের শহিদরাই হচ্ছে আমাদের প্রেরণার বাতি ঘর।অসংখ্য শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনাতা।মানবজমিন এই স্বাধীনাতা যুদ্ধের কলম সৈনিক। ধন্যবাদ মানবজমিন।

হোসাইন মোহাম্মদ ইফতে
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। শহিদী মর্যাদা দান করুন আমিন।

হোসাইন মোহাম্মদ ইফতে
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

May Allah SWT accept you as martyr and place you in the jannatul ferdous InshaAllah. I urge to the interim govt, please provide all support including financial support to the family.

AM Islam
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৯:০৩ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসী করুক।

mokbul
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৯:০২ পূর্বাহ্ন

এরা সময়ের সূর্য সন্তান। এরা জন্মে পৃথিবীটাকে জজ্ঞাল মুক্ত করে বসবাসের উপযুক্ত করতে, সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়।এরা আসে স্রষ্টার পক্ষ থেকে, স্রষ্টার পৃথিবী যখন পাপ পংকিলে ভরে যায় ,তখনই এরা আসে। ভালো রেখো হে স্রষ্টা পরপারে।

raihan
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৮:১৬ পূর্বাহ্ন

জিহাদ ও জিহাদের পরিবারের জন্য অনেক অনেক দোয়া।

BB
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ৪:১৩ পূর্বাহ্ন

ধন্যবাদ মানবজমিন কে নিউজ করার জন্য। কেন যেন মনে হয় তাদের কথা কম আলোচনা করা হচ্ছে।ইচ্ছা করেই কিনা কে জানে।

Mahmud
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ২:২৯ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগের বিচার করার দরকার

মহিন
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

অত্যন্ত মর্মান্তিক এসব ঘটনার খবর । তরুণ ছাত্রদের গুলি করে হত্যার কথা ছিল না স্বাধীন দেশে ।

Kazi
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন

আল্লাহ তায়ালা ভাইকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুক, ধন্যবাদ মানবজমিনকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।।

তানভীর আহমেদ
১৪ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status