জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার বিকালে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারার ক্ষমতা বলে সরকার নির্বাহী আদেশে জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্তা সন্ত্রাসী কার্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে যুক্তিসঙ্গত কারণের ভিত্তিতে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই ব্যক্তিকে তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে বা সত্তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও তফসিলে তালিকাভুক্ত করতে পারবে।

জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৮ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে, যা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ হিসেবে সংসদে পাস হয়। আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে বিভিন্ন সময়ে দশটি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করলেও ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ প্রয়োগ করে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার ঘটনা এটিই প্রথম। 

সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ নিয়ে ৪ বার নিষিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫৯ ও ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে অন্য তিনটি ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়েছিল। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনি মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ওই মতামত পাঠানোর পর দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, এগুলো নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা আর এই দলের অধীনে ও এসব নামে রাজনীতি করতে পারবে না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকের পর জানানো হয়েছিল বুধবারই জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। যদিও বিরোধী দলগুলো বলে আসছে, চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে সরকার জামায়াত নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। জামায়াতের পক্ষ থেকেও এ দাবি করা হয়েছে। 

জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আপিল বিভাগ ওই রায়কে বহাল রেখেছেন। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির সামপ্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উস্কানির মাধ্যমে জড়িত ছিল বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে যে জামায়াতে ইসলামী, শিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তাই জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯শে নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে। 

ওদিকে জামায়াতে ইসলামী ও শিবির নিষিদ্ধ হওয়ার পর এসব সংগঠনের সদস্যদের এখন কী বিচারের আওতায় আনা হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আইন আছে। তারা যদি বাংলাদেশের আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করেন, তাহলে অবশ্যই বিচার হবে। তবে জামায়াতে ইসলামীর নতুন কর্মী, যারা ১৯৭১ সালের পরে জন্ম নিয়েছেন, তাদের গণহারে বিচার করা হবে না।

নিষিদ্ধ হওয়ার পর জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে’ চলে যেতে পারেন কিনা, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ডে অনেক দল গেছে, অনেক দলের কী হয়েছে, সেই ইতিহাস জানেন। আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে পারে। সেটাকে মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি আছে।