শেষের পাতা
সিলেটে ১২ মামলায় আসামি সহস্রাধিক গ্রেপ্তার ৫০
ওয়েছ খসরু, সিলেট থেকে
২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার
সিলেটের চলমান ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। নগর ও জেলায় মোট ১২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে সহস্রাধিক। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫০ জনকে। আসামির তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। সিলেট নগরে গত এক সপ্তাহে চলমান ঘটনায় তিনটি থানায় ১০টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা করা হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। এ থানায় মোট মামলা হয়েছে ৫টি। গ্রেপ্তারকৃত জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ফখরুল ইসলাম, মো. শাহজাহান ও আবদুর রবকে কোতোয়ালি থানার মামলায় আসামি করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কোতোয়ালি থানার ওসি মইনউদ্দিন শিপন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মামলার আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে রয়েছে। জামায়াতের যেসব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি বলেন, কোতোয়ালি এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। পুলিশ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা টহলে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোতোয়ালি থানার অধিভুক্ত বন্দরবাজার এলাকায় গত কয়েকদিন উত্তপ্ত ছিল। এ সময় ব্যাপক ভাঙচুর ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শুক্রবার কোর্টপয়েন্টে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনায় এক সাংবাদিকও নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। পুলিশও আহত হয়েছে। কারফিউ জারির পর থেকে ওই এলাকা শান্ত রয়েছে। তবে কারফিউ শিথিলের সময় আবার ঝটিকা মিছিল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
গত এক সপ্তাহে ঘটনাবহুল এলাকা ছিল শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মদিনা মার্কেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকজুড়ে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান ছিল। ব্যাপক ভাঙচুর ও গোলাগুলি হয়েছে ওই এলাকায়। পুলিশের ধাওয়ায় শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন পানিতে পড়ে মারা গেছেন। জালালাবাদ থানা অধিভুক্ত ওই এলাকায় চলমান ঘটনায় মোট চারটি মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা কম। ওই এলাকায় প্রথমদিকে ছাত্রদের অবস্থান থাকলেও পরবর্তীদের বহিরাগতরা অবস্থান নেন। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগে পুলিশের। জালালাবাদ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, চারটি মামলা করা হলেও গতকাল পর্যন্ত ২-৩জন বহিরাগত বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ। নগরের বাইরে সিলেট জেলার কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর থানায় ২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা ও সিনিয়র এএসপি সম্র্রাট হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, দুই মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
জেলা ও নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দায়ের করা মোট ১২ মামলায় অজ্ঞাতসহ সহস্র্রাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গতকাল সিলেট নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, দুপুরে নগরীর পাঠানটুলার বাসা থেকে র্যাব ও পুলিশের কয়েকটি টিম নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আফসর খানকে আটক করে নিয়ে গেছে। এর আগে শনিবার তাকে নগরের কোর্টপয়েন্টে আটকের চেষ্টা চালালে নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে চলে যান। রোববার রাতভর সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে অভিযান ও তল্লাশি চালানো হয়েছে।
জেল রোড পয়েন্টে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থান: বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনকি সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, কারফিউ শিথিলের আগে গতকাল দুপুর থেকে তার নেতৃত্বে বিএনপি’র জেলা ও মহানগর নেতাদের একটি দল বারুতখানা ও জেল রোড এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর বিএনপি’র সিনিয়র নেতা আলী আহমদ খসরু, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক হাসান পাটোয়ারী রিপন, যুবদলের সিনিয়র নেতা তোফাজ্জল হোসেন বেলাল, ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা নাদের খান, সবুজ খান ও বাচ্চু মিয়া প্রমুখ।
বিদ্যুতের কার্ড কিনতে শত শত মানুষের ভিড়: সিলেটের বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহকরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গত দু’দিন ধরে নগরীর উপ-শহরে কার্ড বিক্রয় সেন্টারের সামনে সকাল থেকে রাত অবধি শত শত মানুষের ভিড় লেগেই আছে। গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন- বিদ্যুৎ না থাকায় তীব্র গরমে বাসাবাড়িতে বাঁচা দায় হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দেখা দিয়েছে পানির সংকট। এ কারণে কার্ড কিনতে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
পাঠকের মতামত
পুলিশের আচরণে মনে হচ্ছে আমরা একাত্তর পূর্ব পাকিস্তানের শাসনের অধীন।