ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

ফের পুরনো পেশায়

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবারmzamin

মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন। চট্টগ্রাম  নগরের এক সময়ের মূর্তিমান আতঙ্ক  ছিলেন এই ‘শিবির’  সরওয়ার। হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার  বিরুদ্ধে রয়েছে প্রায় ১৮টি মামলা। একে ৪৭ রাইফেলসহ আটক হয়ে টানা ১০ বছর ছিলেন কারাগারে। জামিনে বের হয়ে কিছুদিন চলে যান আত্মগোপনে। এরমধ্যে আর অপরাধে জড়াবেন না বলে ওয়াদা করেছিলেন বিভিন্ন জায়গায়। তবে তিনি এখন ফিরেছেন আগের পেশায়। এরমধ্যে শুরু করেছেন চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড।
“হ্যালো আমি সরওয়ার হোসেন বাবলা বলছি। চিনতে পেরেছো, আমি শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ওই যে একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে একবার ধরা পড়েছিলাম। এখন সাজ্জাদ ভারতে, গ্রুপটি আমি চালাই। চান্দগাঁও, বায়েজিদ, পাঁচলাইশ এলাকায় আমার কয়েকশ’ ছেলেপেলে  রয়েছে। এলাকায় ব্যবসা করতে চাইলে আমার ছেলেদের  খরচাপাতি দিতে হবে। না দিলে জানটাই দিতে হবে। বুজেছো, দেড় লাখ টাকা দিতে হবে-দেড় লাখ।” গত ঈদুল আজহার দুইদিন আগে এভাবে এক ব্যবসায়ীর কাছে মোবাইলে ফোন  চাঁদা  নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জামিনে থাকা চট্টগ্রামের এক সময়ের  শীর্ষ সন্ত্রাসী সরওয়ারের বিরুদ্ধে।
হুমকি পাওয়া মুহাম্মদ হেলাল চান্দগাঁও থানার হাজীরপুল রাজনগরের মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক। তিনি এ ঘটনায়  চান্দগাঁও থানায় সরওয়ারসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে  লিখিত অভিযোগ  করেছেন।

মুহাম্মদ হেলালের অভিযোগ, সরওয়ারকে চাঁদা না দেয়ায় ৩০শে জুন রাতে ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী নিয়ে তার নিজস্ব মাছের প্রজেক্ট থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায়। ৪ঠা জুলাই রাতে তার বাসায় হামলা করে। হত্যার হুমকি দেয়। তিনি বলেন, বিষয়গুলো চান্দগাঁও থানায় জানিয়েছি।

জানা যায়, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরওয়ার চট্টগ্রাম  নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের খোন্দকার পাড়ার কালা মুন্সির বাড়ির আব্দুল কাদেরের পুত্র। ভারতে  পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী শিবির সাজ্জাদের এক সময়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড সরওয়ার ২০১১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে ১১ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আলোচনায় আসেন। একই বছরের ৬ই জুলাই বায়েজিদ এলাকা থেকে তাকে দুটি একে-৪৭ রাইফেল ও গুলিসহ আটক করে পুলিশ।
পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে জামিনে বেরিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সরওয়ার ও  ম্যাক্সন (নিহত)  কাতারে আত্মগোপনে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। পরে তাদের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ২০১৭ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে এক গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ফোনে চাঁদা দাবি করে সরওয়ার ও  ম্যাক্সন। তাদের কথামতো চাঁদা না দেয়ায় একই বছরের ২৩শে সেপ্টেম্বর বায়েজিদের নয়াহাটে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এই ঘটনায়  ২০১৯ সালের ২৪শে অক্টোবর তাদের  পাঁচ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে বায়েজিদ বোস্তামী থানা পুলিশ। ২০২০ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে  গোপনে বাংলাদেশে আসার পথে বিমানবন্দরে সরওয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর সেখান থেকে জামিনে বের হয়ে আবারো আগের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে ফিরেছেন সরওয়ার।

কয়েকটি সূত্রে জানা যায়, এখনো নগরের বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণ করার আগে সরওয়ারকে  চাঁদা দিতে হয়। তারা বাহিনীর সদস্যরা নাছিরাবাদ এবং বায়েজিদ শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি করে। এই  বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে  হাজিরপুলের রহমান, কসাই পাড়ার দিদার, রং মিস্ত্রি আরিফ, আফতাব উদ্দিন তাহসিন, লাল হাসান, ফুফাতো ভাই সোহেল, পুলিশ সোর্স নিজাম, ভুইল্লে পাড়ার ইকবাল, আমির, নাদিম, কুয়াইশের ভাগিনা জাবেদ, ঢাকাইয়া আকবর, মোহাম্মদ ফিরোজ, আতুরার ডিপুর সাল্লো, সোর্স নবী। 

রৌফবাদ এলাকার মোহাম্মদ রুবেল নামের এক যুবকের অভিযোগ,  সরওয়ার বাহিনীর ক্যাড়াররা তাকে রৌফাবাদ থেকে উঠিয়ে হাজীরপুলস্থ  টেম্পো অফিসে নিয়ে লোহার হাতল, বড় ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। ২০ হাজার টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। মামলা করলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিনি বলেন, সরওয়ারের ভয়ে মামলা পর্যন্ত করতে পারিনি। 
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে  চাইলে সরওয়ার হোসেন  মানবজমিনকে বলেন, আমি এক  সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ছিলাম। সাজ্জাদের (পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী) সঙ্গে থেকে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছি। তবে ১০ বছর পর  জেল থেকে বের হয়ে আমি  সকল ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে  এসেছি।

তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছি। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখন আমি হাজীরপুল আদর্শ সমাজের সর্দার। এলাকায় কেউ অনৈতিক অসামাজিক কর্মকাণ্ড করলে আমি প্রতিবাদ করি। মূলত আমাকে দিয়ে আগের মতো নিজের  স্বার্থ হাসিল করতে না পারায় সাজ্জাদের লোকজন আমার বিরুদ্ধে  অপপ্রচার চালাচ্ছে।
হেলালের মাছের প্রজেক্টে লুটপাট ও বাড়িতে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সরওয়ার বলেন, হেলাল দুষ্টু প্রকৃতির লোক। সে এলাকার মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। আমি এসবের প্রতিবাদ করায় সে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। মূলত হেলাল একটি অংশীদারি পুকুর জবরদখল করে রেখেছিল। পরে পুকুরের অংশীদাররা একত্রে গিয়ে সেই পুকুরে মাছ ধরেছিল। আমি একজন সাধারণ দর্শকের মতো সেই মাছ ধরা দেখতে গিয়েছিলাম মাত্র। আমি কোনো মাছ ধরিনি। আর তার বাড়িতে গিয়ে হামলার বিষয়টি একেবারে মিথ্যা। থানা থেকে পুলিশ গিয়েও তার  সেই অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি।
এদিকে হেলালের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবিরকে  ফোন দেয়া হয়। তবে তিনি ছুটিতে থাকায়  এই ফোন রিসিভ করে থানার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেদ আলী বলেন, এরকম একটি অভিযোগের  বিষয় আমি শুনেছি। তবে  এই বিষয়ে ওসি স্যার ভালো বলতে পারবেন। আর আমিও এই বিষয়ে  ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।

পাঠকের মতামত

শিবির অপরাধ শিখায় না,অপরাধী কে আইনের আওতায় নিয়ে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Md. Ariful Islam
১৪ জুলাই ২০২৪, রবিবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status