শেষের পাতা
আনার হত্যা
শিমুলের জবানবন্দিতে মেলে গ্যাস বাবুর সংশ্লিষ্টতা
নাইম হাসান
১৬ জুন ২০২৪, রবিবার
কলকাতায় ১৩ই মে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীকে কলকাতা নিয়ে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করতে তদন্ত কর্মকর্তাদের কিছুটা সময় লাগলেও এখন অনেকটা খোলাসা হচ্ছে। আনারের কিলার শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলে দিয়েছে।
কলকাতার পুলিশের থেকে পাওয়া তথ্য, ভ্রমণসংক্রান্ত রেকর্ড, ডিজিটাল প্রমাণাদিসহ তদন্তে পাওয়া উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমপি আনার হত্যার একটা চিত্র হাতে পায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তদন্তকারীদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্তসার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। জবানবন্দির আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দিতে এমপি আনার হত্যায় কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাদের দু’জনের আর্থিক লেনদেনের কিছু সংশ্লিষ্টতা উঠে আসে। এমপি আনারকে হত্যার কিছু পরিকল্পনাও তার জবানবন্দিতে প্রকাশ পায়। জবানবন্দির আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আনারকে হত্যার পরে শিমুল ১৫ই মে কলকাতা থেকে বাংলাদেশে এসে ১৬ই মে রাতে গ্যাস বাবুর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করেন। তারা দু’জনে ১৭ই মে ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিমুলের গাড়ির মধ্যে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাতে আনারকে অপহরণের বিষয়ে বিষদ আলোচনা হয়। হত্যা সংক্রান্ত ছবি ও টাকা- পয়সার লেনদেনের বিষয়ে তারা মূলত: গোপন মিটিং করেন। এই মিটিংয়ে হত্যার পরবর্তী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আসামি বাবুর কাছে টাকা দাবি করে শিমুল। গ্যাস বাবু তার দাবিকৃত টাকা ২৩শে মে শিমুলকে প্রদান করবে বলে আশ্বাস দেয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্যাস বাবুকে পুলিশ রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আনার হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামির নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করে। ঘটনার ধারাবাহিক বর্ণনা দেয়। গ্যাস বাবু এ ঘটনায় স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়।
এই প্রেক্ষিতে শুক্রবার ৭ দিনের রিমান্ড চলাকালীন বাবুকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বাবু ঘটনার দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। পরে জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৩রা জুন জবানবন্দি দেন শিলাস্তি রহমান। তার জবানবন্দিতে জানা যায়, শিলাস্তি রহমান আনার অপহরণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের কথিত বান্ধবী। আনার হত্যা ও লাশ গুমের সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গত ৩০শে এপ্রিল কলকাতায় যান এবং সেখানে মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া করা বাসায় ওঠেন। বাসাটি আক্তারুজ্জামান শাহীন ও শিলাস্তি রহমানের নামে চুক্তি ছিল। আনারকে হত্যা ও লাশ গুমের সময় শিলাস্তি রহমান ওই বাসাতেই অবস্থান করছিলেন। এরপর শিলাস্তি হত্যা ও লাশ গুমের সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গত ১৫ই মে দেশে চলে আসেন। জবানবন্দিতে শিলাস্তি রহমান এমপি আনার হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় যান এবং ওই চুক্তিকৃত ভাড়া বাসাতেই উঠেছিলেন বলে স্বীকার করেন। শিলাস্তি তার জবানবন্দিতে আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আসামিদের নাম, ঠিকানা ও পরিচয় প্রকাশ করেন এবং এ হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিক বর্ণনা দেন।
গত ১২ই মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজিম।
পাঠকের মতামত
গ্যাস বাবু, অকটেন জলিল, ডিজেল খলিল, কেরোসিন মোহসিন .........তারপর?
I will not be saying that Mintu was not involved in the killing of Anar. Judging from the past activities of Mintu, it is very likely that he was the mastermind behind the killing for his lust for power and illegal wealth. However, there is another side of the story to bring Mintu at the forefront and push Anar's smuggling activities, which involved her cousin Sheikh Helal, to the back burner. Sheikh Helal is very likely to be involved in the conspiracy to kill Anar. In order to save Sheikh Helal from the rope, Mintu has become the sacrificial lamb. Again, Mintu deserves punishment for his illegal activities including killing of Anar and his reign of terror in Jhenaidah during his tenure as the mayor.