অনলাইন
দেশে কালাজ্বরের ঝুঁকিতে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৬:৪৪ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৪:২২ অপরাহ্ন

বর্তমানে বাংলাদেশের ২৬টি জেলার ১০০টি উপজেলা কালাজ্বর প্রবণ। এই এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৩৮ মিলিয়ন (৩কোটি ৮০ লাখ) মানুষ কালাজ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে কালাজ্বর সেন্টার অফ এক্সিলেন্স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সহকারী পরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা.এবিএম আব্দুল্লাহ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ২০০৫ সালের কৌশলগত কাঠামো অনুসরণ করে ২০০৬ সালে তাদের জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কালাজ্বর রোগের সংক্রমণ কমিয়ে এনেছে । ২০১৭ সাল থেকে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচি উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ১০,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে ১ এর কম রোগী এই ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। এতে বাংলাদেশে বলে ঘোষণার ‘‘জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে কালাজ্বর নির্মূল হয়েছে’’ যোগ্যতা অর্জন করে।
তিনি আরও জানান, এই নির্মূলের দাবির প্রতিষ্ঠার জন্য ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি ডসিয়ার জমা দিয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তারা গঠিত বিশেষজ্ঞ দলের যাচাই-বাছাই ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের ৩১শে অক্টোবরে ঘোষণা করেছে যে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে লক্ষ্য অর্জন করেছে। কালা জ্বর নির্মল বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন এই নির্মূল অবস্থা বজায় রাখা। ২০২৫ সালের মধ্যে সংক্রমণের বন্ধ করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে কালাজ্বর মুক্ত অবস্থা অর্জন করা। এই লক্ষ্যের জাতীয় কালা জ্বর নির্মূল কর্মসূচি কিছু কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে। তা হলো- দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পন্ন করা, সমন্বিত বাহক ব্যবস্থাপনা এবং বাহক নজরদারি, রোগের নজরদারি শক্তিশালী করা, অপারেশনাল রিসার্চ, অ্যাডভোকেসি, কমিউনিকেশন এন্ড সোশ্যাল মোবিলাইজেশন, মাল্টিসেক্টরাল এবং সীমান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
বক্তারা কালাজ্বর প্রোগ্রামে ডিএনিডিআই এর অবদান ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কালাজ্বরের ওষুধের ট্রায়াল করেছে যার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের কর্মকৌশল প্রণয়ন হয়। এই কালাজ্বর নির্মূলের পর কালাজ্বর প্রোগ্রাম এর সঙ্গে যৌথভাবে কালাজ্বরের সেন্টার অফ এক্সিলেন্স গঠন করতে ডিএনডিআই সহায়তা করে।
ভিসেরাল লিশম্যানিয়াসিস বা কালাজ্বর লিশম্যানিয়া ডোনোভানি নামক এককোষী পরজীবী দ্বারা গঠিত একটি রোগ। এই রোগ স্ত্রী স্যান্ডফ্লাই ( বেলেমাছি)-এর কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে প্রায় ৯৫ শতাংশ কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়। এই জ্বরের প্রধান লক্ষণসমূহ অনিয়মিত দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, প্লীহা এবং যকৃতের বৃদ্ধি, ওজন হ্রাস, এবং রক্ত স্বল্পতা। বিশ্বব্যাপী কালাজ্বর একটি এনটিডি অবহেলা ট্রফিকাল রোগ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।
১৮২৪-১৮২৫ সালে যশোরে কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটে যাতে বিভাগে ৭৫,০০০ জনেরও বেশী লোক মারা গিয়েছিল। পরবর্তীতে এই রোগটি বিভিন্ন শহর ও লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫৩ সাল থেকে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ডিডিটি ব্যবহার করে ছিটাই কার্য (আইআর এস) করার কারণে ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি কালাজ্বর এর প্রার্দূভাব উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে থাকে। আশির দশকে ডিডিটি ছিটাই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কালাজ্বরের প্রার্দুভাব পুনরায় দেখা দেওয়া শুরু করে এবং ১৯৯৪ সাল হতে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ৭৩,৪৬৭ জন রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশ সরকার এই রোগের গুরুত্ব অনুধাবন করে কালাজ্বর নির্মূলের জন্য ২০০৫ সালে বাংলাদশে, ভারত এবং নেপাল সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে কালাজ্বর রোগকে নির্মূল (উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ১০,০০০ জনসংখ্যার মধ্যে ১ এর কম রোগী) করার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ভুটান এবং থাইল্যান্ড কে অর্ন্তভুক্ত করে ২০১৭ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক হালনাগাদ করা হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালের ৯ই মে জাতীয় কালাজ্বর নির্মূল কর্মসূচির কার্যক্রম শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্যে রাখেন ডিএনডিআই’র দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ডা. কবিতা সিং, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. সাবেরা সুলতানা প্রমুখ।