প্রথম পাতা
খাঁচার ভেতর কেন পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জুন ২০২৪, বৃহস্পতিবার
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল তিনিসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জ গঠন করা হয়। এ সময় ড. ইউনূস আদালতের ডকে (লোহার খাঁচা) দাঁড়িয়ে আদালতের আদেশ শুনেন।
পরে ডকে দাঁড়ানো ও মামলার কার্যক্রমের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বলেন, একটা সভ্য দেশে নাগরিককে কেন পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে? যেখানে অপরাধ সাব্যস্ত হয়নি। এটি অত্যন্ত অপমানজনক, গর্হিত কাজ বলে মনে হয়েছে। আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে তাদের অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন আসামিরা। আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, আজকে সারাক্ষণ খাঁচার মধ্যে ছিলাম আমরা সবাই মিলে। যদিও আমাকে বলা হয়েছিল- আপনি থাকেন। আমি বললাম- সবাই যাচ্ছে, আমিও সঙ্গে থাকি। সারাক্ষণই খাঁচার ভেতরে ছিলাম। তিনি বলেন, আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ার আগে তাদের খাঁচার ভেতরে রাখা কী ন্যায্য কিনা? এটা আমার কাছে গর্হিত কাজ বলে মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না; বিষয়টা তা না। এ বিষয়ে তিনি সকলকে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান। বলেন, যারা আইনজ্ঞ আছেন, তারা এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক। সারা পৃথিবীতে যে সভ্য দেশগুলো আছে, আমরা তাদের মধ্যে পড়ি কিনা, এটাও বিবেচনা করে দেখতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা সারাজীবন মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। অর্থ আত্মসাৎ কেন করতে যাবো? আমাকে বলা হচ্ছে, সুদখোর, অর্থ আত্মসাৎকারী। আমি পদ্মা সেতুর টাকা আটকে দিয়েছি। এসব কথা বারবার বলে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাকে ২০১১ সালেই বলা হয়েছে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে। আমি বারবার বলেছি- এটা আমার বিষয় না। আমি রাজনৈতিক দল গঠন করবো না। তিনি আরও বলেন, মূলত আমার ওপর দেবদেবীরা ক্ষুব্ধ। সেজন্য হয়রানির শিকার হচ্ছি।
দুদকের করা মামলায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালতে প্রবেশ করেন ড. ইউনূস। হাজিরা নেয়ার জন্য বিচারক ড. ইউনূস এবং পারভীন মাহমুদ ছাড়া সবাইকে লোহার খাঁচায় প্রবেশ করতে বলেন। আদালতের নির্দেশে ১২ জন আসামির সঙ্গে ড. ইউনূসও ১০টা ৪৭ মিনিটে লোহার খাঁচায় প্রবেশ করেন। লোহার খাঁচায় দাঁড়িয়েই চার্জ গঠনের আদেশ শুনেন তিনি। এসময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজলকে আসামিদের অভিযোগ পাঠ করতে বলা হয়। তিনি বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আপনারা দোষী না নির্দোষ? এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ড. ইউনূস সহ তার সঙ্গে থাকা আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন- ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। তাকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট খাজা তানভীর আহমেদ ও এস এম মিজানুর রহমান। আদেশ শেষে ১১টা ৩ মিনিটের দিকে লোহার খাঁচা থেকে বের হয়ে আসেন ড. ইউনূসসহ অন্য আসামিরা। মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালত ১১ই জুলাই দিন ধার্য করলে ড. ইউনূসের আইনজীবী তারিখ পরিবর্তনের আবেদন করেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে শোরগোল সৃষ্টি হয়। এ সময় উভয়পক্ষ বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর ১৫ই জুলাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন বিচারক।
এই মামলার অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়- গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী। এ ছাড়া এডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, এডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম বা ড. ইউনূসের কাছে কেউ আমানত রাখে নাই যে, আমানত তিনি খেয়ানত করেছেন। তাহলে এখানে! অর্থ আত্মসাতের কোনো বিষয়ই নাই। আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। অন্য মামলার মতো এই মামলার কার্যক্রম চলছে না। ড. ইউনূসকে সাজা দিতে দ্রুতগতিতে মামলার কার্যক্রম চলছে। দুদকের আরও বহু মামলা রয়েছে, সেসব মামলা এত দ্রুত গতিতে চলছে না।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করেছেন। এর মধ্যে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন, সর্বনিম্ন ১০ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। মানিলন্ডারিংয়ের যে ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে, সেই ধারার সর্বোচ্চ সাজা ১২ বছর এবং সর্বনিম্ন চার বছর। মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারক সর্বনিম্ন সাজাও দিতে পারে আবার সর্বোচ্চ সাজা দিতে পারে। এটা আদালতের এখতিয়ার।
এর আগে ২রা জুন অভিযোগ গঠনের উপরে শুনানি হয়। ওই দিন ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তার আইনজীবী। শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১২ই জুন দিন ধার্য করেন। গতকাল ড. ইউনূসের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে অভিযোগ গঠন করেন।
গত বছরের ৩০শে মে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলা করেন। চলতি বছরের ১লা ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার। এ মামলায় আসামি ছিলেন ১৩ জন। পরে চার্জশিটে নতুন একজন আসামির নাম যুক্ত হয়। ২রা এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ চার্জশিট গ্রহণ করে মামলার বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এ বদলির আদেশ দেন।
পাঠকের মতামত
এই সব,খাঁচার ভেতর কেন পশুর মতো দাঁড়িয়ে থাকতে হবে,আগে কেন প্রতিবাদ করেন নি?
কিছু না করেও খালেদা জিয়া ও ডঃ ইউনুসের বিচারের ধরণ-ধারণ এবং বেনজীর, আজিজ, পি.কে হাওলাদার, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, সামিট, এস.আলমসহ আওয়ামী ঘরানার লাখ লাখ নেতা-কর্মী, দালাল-চাটুকারদের দুর্নীতি, লুটপাট দেখে এদেশে সুশাসন ও সুবিবেচনা কেমন সেটি বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সুতরাং বাংলাদেশ সভ্য-অসভ্য আছে কী নাই এ বিষয়ে বিতর্ক করার কোনো প্রয়োজন আদৌ আছে কী!!!???
We Bangladesh proud of Dr. Yunus.
বাংলাদেশ সভ্য দেশের তালিকার বাহিরে