কলকাতা কথকতা
তিন শরিকের মধ্যে লোকসভার স্পিকার পদ নিয়ে টানাপড়েন, পরিস্থিতি বেশ জটিল
সেবন্তী ভট্টাচার্য্য, কলকাতা থেকে
(৩ মাস আগে) ১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার, ৬:১৩ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
টানা তৃতীয়বার ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাঁর সঙ্গে, আরও ৭১ জন মন্ত্রীও শপথ নিয়েছেন। মন্ত্রীদের মন্ত্রকও বণ্টন করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে লোকসভার অধ্যক্ষ কে হবে, সেই প্রশ্ন। ওম বিড়লা তাঁর পদে বহাল থাকবেন, নাকি তাঁর জায়গায় অন্য কেউ আসবেন? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তৃতীয় এনডিএ সরকারে যে দুই শরিক দল নীতীশ কুমারের জেডিইউ ও চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তাদেরও সেই অর্থে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনও মন্ত্রক দেওয়া হয়নি। তবে এই দুই দলই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের কাছ থেকে লোকসভার স্পিকার পদটিও চেয়েছিল বলে সূত্রের দাবি। একই দাবি ছিল লোক জনশক্তি পার্টির (রামবিলাস) চিরাগ পাসোয়ানেরও। এখন রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, শরিক দলগুলির কারও হাতে লোকসভার স্পিকার পদটি কি ছাড়বে বিজেপি শিবির? আসলে কেন্দ্রে যে দল ক্ষমতায়, তাদের প্রতিনিধিই স্পিকার হবেন। এ এক অলিখিত নিয়ম। কিন্তু এবার কি সেই নিয়ম বজায় থাকবে? পরিস্থিতি যে বেশ জটিল।
সূত্রের খবর, লোকসভার নয়া অধ্যক্ষ কে হবেন, তা ঠিক হতে পারে ২০ জুন। তবে সূত্রের দাবি, যদি লোকসভা অধিবেশন ১৮ জুন শুরু হয়, ২২ জুন অধিবেশনে ভাষণ দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। তিনিই প্রোটেম স্পিকার বা অস্থায়ী অধ্যক্ষকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। নতুন লোকসভা গঠনের পর বিরোধী দলনেতা নির্বাচন, কোন নেতা কোন স্থানে বসবেন, এর মতো অনেক ধরনের সংসদীয় কাজ বাকি থাকে। তবে তার আগে প্রোটেম স্পিকার নির্বাচন করা হয়। এইবার, প্রোটেম স্পিকার হওয়ার বিষয়ে এগিয়ে আছেন আটবারের সাংসদ তথা কেরল প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির কার্যকরী-সভাপতি কোডিকুনিল সুরেশ। তবে, এই মুহূর্তে জল্পনা জারি রয়েছে, কে ১৮তম লোকসভার অধ্যক্ষ হবেন, তাই নিয়ে।
অদূর ভবিষ্যতের সম্ভাব্য রাজনৈতিক জটিলতার কথা মাথায় রেখে লোকসভার স্পিকার পদ হাতছাড়া করতে নারাজ বিজেপি। এই মর্মেই লোকসভার স্পিকার পদে বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেতাদের পছন্দ দলের সাংসদ, অন্ধ্রপ্রদেশ বিজেপির সভানেত্রী দগ্গুবতী পুরন্দেশ্বরীকে। বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, লড়াকু নেত্রী পুরন্দেশ্বরীর হাতে লোকসভার স্পিকার পদ থাকলে দু’টি সুবিধা পেতে পারে তারা। প্রথমত, সংসদীয় অলিন্দে শেষ কথা বলার ব্যক্তিটি তাদের শিবিরেই থাকবেন। দ্বিতীয়ত, পুরন্দেশ্বরী বনাম এন চন্দ্রবাবু নাইডুর লড়াই বহু পুরোনো। তেলুগু দেশম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত চলচ্চিত্রাভিনেতা এনটি রামারাওয়ের মেয়ে পুরন্দেশ্বরী ২০২৩ থেকেই রাজ্য বিজেপি সভানেত্রী।
এনডিএ-তে বিজেপির পরই সবচেয়ে বেশি সাংসদ টিডিপির। যা অনেককেই ১৯৯৯ সালের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেবার অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের পতন হয়েছিল মাত্র একটি ভোটের জন্য। সেই নির্ণায়ক ভোট দিয়েছিলেন ওড়িশার কংগ্রেস সাংসদ গিরিধর গামাং। অথচ কয়েকদিন আগেই তিনি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছিলেন। তবু তাঁকে ভোট দিতে দিয়েছিলেন তৎকালীন স্পিকার টিডিপির বালাযোগী। সেদিন তাঁর সিদ্ধান্তের কারণেই পতন হয়েছিল বাজপেয়ী সরকারের। এই বালাযোগীকে স্পিকার করা হয়েছিল চন্দ্রবাবু নাইডুর প্রস্তাবে। পঁচিশ বছর পরে ফের সেই টিডিপিই স্পিকারের পদে নিজেদের প্রার্থীকে নিয়োগ করতে চাইছে। সেই চন্দ্রবাবু, সেই বিজেপি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বোধহয় এভাবেই হয়।