ঢাকা, ১৭ মে ২০২৫, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

এবারের বাজেট বে-নজির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১১ জুন ২০২৪, মঙ্গলবার
mzamin

নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সিপিডি’র বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট একটি বে-নজির বাজেট। বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজেটে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে। বর্তমান শাসক দল নির্বাচনে যে ইশতেহার দিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে তারা ইশতেহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। বড় ধরনের বরখেলাপ হয়েছে। সরকারের যে পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটের কৌশল এবং বরাদ্দের মিল নেই। কালো টাকা সাদা করার যে নিয়ম রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। এছাড়া সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা প্রস্তাবিত বাজেটে মেলানো হয়নি।

সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি’- শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে এতে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ উপস্থিত ছিলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা কোথাও কোনো স্বস্তি দেখি না। সাধারণত পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সুরক্ষা দিতে হয়। বিভিন্ন খাতে দেখা গেছে প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি এবং আসক্ত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় দেখলে বোঝা যায় সাধারণ মানুষের নয় ব্যক্তি বিশেষের সুবিধা দেয়া হয়েছে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বর্তমান বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী, ফাঁকাবুলির বাজেট। পাশাপাশি এটি বৈষম্যমূলক বাজেট, সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থহীন বাজেট এটি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এটি এমন একটি বাজেট, যা জবাবদিহিতাহীন। এটি দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিক বাজেট। 

এই কথাগুলো বলার অবশ্যই যৌক্তিক কারণ আছে। প্রথমে যদি কালো টাকার বিষয়টি বলি, কালো টাকাকে বৈধতা দেয়া যাবে না- এমন ঘোষণা কিন্তু আমাদের আছে। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেবেন, অন্যজন অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতি করে প্রচুর পরিমাণে আয় করে নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। আবার এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না। তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে সারা বছর অবৈধভাবে আয় করার। বছর শেষে রাজস্ব বিভাগ তাদের ক্লিন সার্টিফিকেট দেবে। অনেকে আবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পাবেন, সেরা করদাতার পুরস্কারও পাবেন। এর মাধ্যমে দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে- তোমরা চাইলে এই পথটা অনুসরণ করো। টিআইবি প্রধান জানান, ‘১৯৭৫ সাল থেকে প্রায় প্রতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে ১৯৭২ সাল থেকে এ পর্যন্ত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে রাজস্ব বাবদ মাত্র ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর মাধ্যমে কিছু টাকা হয়তো সরকার পেয়েছে। তবে এর মাধ্যমে মূল নৈতিকতা উৎখাত হয়েছে।

মূল প্রবন্ধে তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড় ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রোক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিক-নির্দেশনা নেই। আয়করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বলা হয়েছে- ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয় ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এটা মানা যায় না।

বাজেটে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী। এর থেকে চমৎকার স্বপ্ন আর হয় না। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। যে কারণে আমরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়লাম। সেটা ভালোভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে বের হয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর, সুশাসন নিয়ে আলোচনা নেই। বাজারে অনিয়ম, অর্থপাচার রোধে কী হবে, দায় দেনার ক্রাইসিস চিহ্নিত করা হয়নি। বড় আকারে আমরা ঋণের পরিস্থিতিতে পড়েছি সেটা স্বীকার করা হয়নি। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণশোধ করার জন্য আমাদের রাজস্ব যথেষ্ট ছিল না। আমরা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করে পরিশোধ করেছি।
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status