ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ফুসফুসে পানি জমে গেলে

অধ্যাপক (ডা.) মো. শামসুল আলম
১৩ জুলাই ২০২২, বুধবার
mzamin

একজন মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার লিটার বাতাস ফুসফুসে যাচ্ছে বায়ুনালির মাধ্যমে। যা প্রতি ৩ সেকেন্ড শ্বাস নেয়া আর ২ সেকেন্ডে বের করে দেয়া প্রতিবার ৫শ’ সি.সি। প্রতি মিনিটে ১২-১৮ বার শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া হয় বায়ুনালিগুলো ৮৩-৮৫টি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাগে ভাগ হয়ে বায়ু প্রকোষ্ঠে গিয়ে বাতাস থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে যা জীবন রক্ষার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড বর্জ্য হিসেবে বের করে দিচ্ছে। এসব তো হচ্ছে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা সঞ্চালনার জন্য।  সাধারণত বেশ কিছু কারণের জন্য ফুসফুসে পানি জমা হতে পারে। যখন ফুসফুসে বেশি পানি জমে তখন তাকে বলা হয় পুরাল ইফিউশন। ফুসফুসে সাধারণত বেশ কিছু জটিল এবং কঠিন  রোগের জন্য পানি জমে। ফুসফুসে পানি জমলে মনে করতে হবে মারাত্মক কিছু সমস্যা হতে চলেছে। ফুসফুসে কেন পানি জমে এবং কি সমস্যা হতে পারে তা জানা জরুরি। ফুসফুসে পানি জমাকে অনেকে বুকে পানি জমাও বলে থাকেন।

বিজ্ঞাপন
পানি জমার মূলত দুটি কারণ বা দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 

১.একজুডেটিভ:  ফুসফুসের যক্ষ্মা, ফুসফুসের ক্যান্সার, নিউমোনিয়া পালমোনারি ইনফ্রাকশন ইত্যাদি। এ পানির মধ্যে প্রোটিন বেশি থাকে।  

২. ট্রানজুডেটিভ:  প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয় কিডনি  রোগকে। যেমন- নেফ্রটিক সিন্ড্রোম, লিভার রোগ সিরোসিস অব লিভার, হার্টের রোগ ক্রনিক কনাজেসটিভ কার্ডিয়াক ফেইলর। মিগ সিন্ড্রোম, সিউডোমিগ সিন্ড্রোম, হাইপো থাইরয়ডিজম। আরও যেমন- বাতজ্বর,  ডেঙ্গু, করোনা, টাইফয়েড জ্বরের কারণেও ফুসফুসে পানি জমতে পারে। এভাবে আরও বেশ কিছু কারণও আছে।  

উপসর্গ:  সাধারণত যে রোগের কারণে পানি জমে  সেই রোগের উপসর্গও তেমন হয়। তারপরও এখানে ৩টি রোগের কারণের উপসর্গ তুলে ধরছি।  

সাধারণ উপসর্গ:  খাওয়ায় অরুচি, শরীর দুর্বল, শরীরের ওজন কমে যাবে, বিকালের দিকে জ্বর বা সারাদিনই জ্বর দুই ক্ষেত্রেই অল্প অল্প জ্বর জ্বর ভাব থাকবে।  

ফুসফুসজনিত উপসর্গ:  কফ, কাশি, উভয় ক্ষেত্রে কফের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে, বুকের ব্যথা বা ভার লাগবে, শ্বাসকষ্ট হবে।  

নিউমোনিয়ার লক্ষণ:  জ্বর খুব বেশি থাকবে। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হবে। জ্বরের তীব্রতা বেড়ে গেলে শরীরে কাঁপুনি হবে, শিশুদের  ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে, রোগী প্রলাপ বকতে পারে, জ্বরের কারণে অনেকের বমি পর্যন্ত হতে পারে।  খাবার খেতে অরুচি, মাথা ভার, মাথাব্যথা, সমস্ত শরীর ব্যথা করতে পারে। নিউমোনিয়া রোগীদের কেসহিস্ট্রি সংক্ষিপ্ত হয় অর্থাৎ ৫/৭/১০ দিন।   

ফুসফুসজনিত:  ফুসফুস ক্যান্সার এবং ফুসফুসের যক্ষ্মার কারণে যদি বুকে পানি জমে, রোগের ইতিহাসের পরিবর্তন পাওয়া যাবে না। শুধু বুকের পানি পরীক্ষা করে তবেই  রোগ নির্ণয় করা যাবে। কাশি, কফ গাঢ় লালচে বা হলুদ হতে পারে, বুকের ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন করে বুকে পানি জমা  রোগীদের সবার ক্ষেত্রে একই পাওয়া যাবে। কাজেই রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। রোগ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।  রক্তের রুটিন, ইউরিন জগঊ, বুকের এক্স-রে করে যদি ধরা পড়ে বুকে পানি আছে, তখন রোগীকে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। 

 চিকিৎসা:  চিকিৎসক রোগীকে দেখে, রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কি ওষুধ সেবন করতে হবে এবং কী ধরনের চিকিৎসা করতে হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন। সাধারণত চিকিৎসকরা বুকের পানি বের করে তার রং দেখেই ধারণা করে থাকেন সম্ভাব্য কী রোগ হয়েছে। বুকের পানির সেল কাউন্ট অর্থাৎ সাইটোলজি, বায়োকেমেস্ট্রি অর্থাৎ  প্রোটিন, সুগার, অঋই, অউঅ, চঐ, খউঐ এবং ঈ/ঝ সহ আরও অন্যান্য পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে সম্ভাব্য ধারণা এড়িয়ে রোগ নির্ণয়পূর্বক চিকিৎসাই উত্তম। এ ছাড়া রিপোর্টের মাধ্যমে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়াসহ আরও অনেক রোগ নির্ণয় করা যায়। এবং রোগ চিহ্নিত হলে সঠিক চিকিৎসা করা যায়। যদি অতিরিক্ত পানি জমে গেলে রোগীকে স্বস্তি দেয়ার জন্য পানি বের করে নেয়া হয়। বারবার পানি জমলে অনেক সময় বিশেষ পদ্ধতি,  যেমন প্লুরোডেসিস, টিউব  থোরাকোস্টোমি করা হয়। পানির কারণে, ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচার (ডিকরটিকেশন অব লাং) করতে হয়। পানি জমার কারণ নির্ণয় ও সমাধান না করলে নানা জটিলতা হতে পারে।  যক্ষ্মা হলে রোগীকে ৬ মাস যক্ষ্মার ওষুধ  সেবন করতে দেয়া হয়। নিউমোনিয়ার  ক্ষেত্রে পানি জমলে সেটিকে প্যারানিউমোনিক ইফিউশন বলা হয়। তখন তাকে ৭-১০ দিন অনেক সময় তারও বেশি দিন সি/এস রিপোর্ট অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক সেবন করতে  দেই। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ৫-৭ দিন। ক্ষেত্রবিশেষে ১০ দিন তবে কোনো অবস্থায়ই ৩ দিনের কম নয়। কোনো  কোনো ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।  আশংকার কথা হলো অনেকেই সঠিক নিয়মে নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক  সেবন করেন না। আবার কিছু লোক ওষুধের দোকানদারের দেয়া এন্টিবায়োটিক মোয়া মুড়কির মতো খাচ্ছেন, যা বিপদ আরও বাড়িয়ে  তোলে। শেষে বলা যায় ফুসফুসে পানি জমলে বা এরকম অনুভব করলে মোটেও অবহেলা নয়। জরুরি চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। অন্যথায় হয়তো মৃত্যুর কারণ হতে পারে। 

লেখক: (অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম), বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, রক্ত ও খাদ্যনালি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সাবেক), জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মহাখালী-ঢাকা। ও কনসালটেন্ট- ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা। চেম্বার- ফরাজী হাসপাতাল, বনশ্রী রামপুরা, ঢাকা।  সেল-০১৭১৩০০৭৩১৮

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status