প্রথম পাতা
মন্তব্য প্রতিবেদন
কী আছে দুই পরাক্রমশালীর ভাগ্যে?
সাজেদুল হক
২৫ মে ২০২৪, শনিবারবে নজীর আহমেদ। র্যাব ও পুলিশের সাবেক বস। স্মার্ট, সুদর্শন। কথাও বলতেন সুন্দর। কিন্তু ‘বন্দুকের ভাষায়।’ বৃহস্পতিবার দিনটি সম্ভবত তার জন্য কিছুটা বিস্ময় নিয়েই এসেছে। যদিও খবরটি চাউর হয়েছে একটু দেরিতে। রাত ন’টার কিছু আগে বেসরকারি টিভি চ্যানেল-২৪ খবরটি ব্রেক করে। বিষয়টি এরইমধ্যে সবার জানা। বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফ্রিজ করতে বলা হয়েছে পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। এর আগে মঙ্গলবার সকাল হয়তো কাছাকাছি অনুভূতি নিয়েই হাজির হয় সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের কাছে। ডনাল্ড লু’র সফরে একধরনের হৃদ্যতার আবহ তৈরি হয়। কিন্তু তা কেটে যায় দ্রুতই। যখন জানা যায়, আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সরকারের মন্ত্রীদের কথা শুনে বোঝা যায় তারা এটাকে আজিজ আহমেদের ব্যক্তিগত দায়ই মনে করেন। এসব ব্যাপারে শুক্রবারও সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন, দুদক স্বাধীন। সেখানে যদি অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয় কেউ, আমরা তাকে প্রোটেকশন দিতে যাব কেন? তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন।’
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ই এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও র্যাব’র মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পত্তির বিষয়টি যখন সামনে তখন বিস্ময় তৈরি হয়। মূলত কালের কণ্ঠ এ নিয়ে অনুসন্ধান করে। গত ৩১শে মার্চ প্রকাশিত কালের কণ্ঠের রিপোর্টের শিরোনাম ছিল- ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’। প্রতিবেদনে বলা হয়, বেনজীরের পরিবারের মালিকানায় রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ইকো রিসোর্ট। এই রিসোর্টের পাশে আরও ৮০০ বিঘা জমি কিনেছে তার পরিবার। এ ছাড়া পাঁচ তারকা হোটেলের ২ লাখ শেয়ারও রয়েছে তাদের। গত ২রা এপ্রিল প্রকাশিত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল, ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’। আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও বেনজীরকে নিয়ে রিপোর্ট প্রচার ও প্রকাশ করে। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এতো সম্পত্তির মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। যদিও তিনি এসব সম্পত্তির মালিক হিসেবে দেখিয়েছেন তার স্ত্রী ও কন্যাদের। কেন বিষয়টি সামনে এলো তা নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়। কেউ কেউ বলে থাকেন, সুতা কোথাও কেটে গেছে। বেনজীর আহমেদ ফেসবুক ব্রিফিং এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার মতো করে ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তার কণ্ঠ ক্ষীণ। তদন্তের দাবি উঠে বেনজীরের বিরুদ্ধে। স্বতন্ত্র এমপি সায়েদুল হক সুমন এ নিয়ে চিঠি দেন দুর্নীতি দমন কমিশনে। রিট হয় হাইকোর্টে। পরে এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের কথা জানান দুদক। গঠন করা হয় কমিটি। দুদকের আবেদনেই আদালত সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন।
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নেয়া ব্যবস্থায় অনেকেই কিছুটা বিস্ময় এবং আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, দুদক এর মাধ্যমে ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারে। আবার অন্য একটি মত হচ্ছে, এই অনুসন্ধান নিয়ে এখনই আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু নেই। অতীতেও দুদক রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে বেশ কিছু ইস্যুর ফয়সালা প্রয়োজন। এক. বেনজীর আহমেদের সম্পত্তির পরিমাণ কত? দেশের বাইরেও তার সম্পত্তি রয়েছে কি-না? দুই. তার স্ত্রী-কন্যা ছাড়াও অন্য কারও নামে তার সম্পত্তি রয়েছে কি-না? তিন. কীভাবে এতো বিপুল সম্পত্তির মালিক হলেন? চার. এসব ব্যাপারে যথাযথ প্রমাণ হাজির করা।
বেনজীর আহমেদের আগে জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিষয়টি নিয়েও বিপুল আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস আইনের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ আইনের ৭০৩১ ধারাটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, বাজেট স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি দমন নিয়ে। ধারাটির ‘সি’ অংশে সরকারি দুর্নীতি ও মানবাধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি অথবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত অন্য দেশের কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যদি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকে, তাহলে অভিযুক্ত সেই সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
আজিজ আহমেদের বিষয়টিকে তার ব্যক্তিগত দায় বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই শেষ হয়ে যায় না। জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ব্যাপারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় সুনির্দিষ্ট দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি। এগুলো কীভাবে সংঘটিত হয়েছে সেটিও বলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- ‘ব্যক্তিগত দায়’ বা যেটাই বলা হোক এই অভিযোগের কোনো অনুসন্ধান হবে কি-না, কোনো তদন্ত হবে কি-না? এরইমধ্যে বিজিবি প্রধান থাকাকালে তার ভূমিকা নিয়ে একটি তদন্তের বিষয়ও সামনে এসেছে।
আপাতত কিছুটা চাপে পড়েছেন জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এবং বেনজীর আহমেদ। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা বিচারের মুখোমুখি হন কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেছে। তবুও পুরো পরিস্থিতি পুরনো একটি বিষয়ই সামনে এনেছে, ‘চিরকাল সবার সমান নাহি যায়।’
স্বাধীনতার পর দেশের প্রধান দুইটি সংস্থার প্রধান এমন দুর্নীতি কেউ করতে সাহস করেনি। শীর্ষ দুইটি সংস্থা এমন কলুষিত হয়নি আগামীতে আর কোন কোন সংস্থার প্রধানের কি জনগণের সামনে আশে ধারনা করতে পারছিনা। দেশটা এই সরকার কোথায় নিয়ে গেছে বুজতে পারছিনা। এসব দুর্নীতির বিষয় সরকারি ইন্তিলিজেন্স এজেঞ্চি বা আইন শৃঙ্খলা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কারি সংস্থার কোন ভুমিকা নাই কেন!! একজনকে নিয়ে প্রতিবেধন করেছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া আরেকজনের দুর্নীতি প্রতিবেধন করেছে দেশিয় প্রিন্ট মিডিয়া !! প্রশ্ন হোল তাহলে সরকারে এই দফতর গুলির কাজ কি জনগণের টাকায় এসব হাতি ফালনের প্র্যয়োজনিয়তা কি ?? আমরা কি এই বিষয় প্রধান মন্ত্রি ও স স মন্ত্রানালয়ের ব্যক্ষা দাবী করতে পারি ????
আজিজ বেনজির অপ্রাসঙ্গিক
লক্ষ্য করলাম যে, দুর্নীতি বাজদের নাম অবসর নেয়ার পর আসে।
আজিজ ও বেনজিরকে দিয়ে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়েছেন তাদেরকে ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শাস্তি কি হবে
রাজায় রাজায় যুদ্ধ চলে, প্রাণ যায় সাধারন মানুষের। দুই পরাক্রমশালীর এখন যাই হোক না কেন, জীবনের মোক্ষম সময়টাতো দাপটের সাথে চলেছে।