ঢাকা, ৩ জুলাই ২০২৪, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬ জিলহজ্জ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

ইউরোপিয়ান সোশ্যাল বিজনেস ট্যুরে ড. ইউনূস

স্টাফ রিপোর্টার
২০ মে ২০২৪, সোমবারmzamin

ফাউন্ডাজিওন মিলানো কর্টিনা আয়োজিত “মিট দ্য পার্টনারস” শীর্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিয়েছেন নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।  মিলানো কর্টিনা শীতকালীন অলিম্পিক-২০২৬ এর উদ্যোগে ফাউন্ডাজিওন মিলানো কর্টিনা সুপরিচিত গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের  আয়োজন করে। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল অধ্যাপক ইউনূস কর্তৃক  শীতকালীন অলিম্পিক ২০২৬-এর সহযোগীদের কাছে এই সামাজিক অলিম্পিকের উদ্দেশ্য ও বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করা এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়া যাতে তারা এই গেমসের সামগ্রিক সামাজিক লক্ষ্যগুলো পূরণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। অনুষ্ঠানে অংশীদারদের মধ্যে ছিল ভিসা, স্যামসং, রেন্সট্যাড ও অন্যরা।  প্রফেসর ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসার ধারণাটি বিশদভাবে তুলে ধরেন এবং এ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় ব্যাখ্যা করেন। 

এরপর “দ্য ইমপ্যাক্ট ২০২৬ প্রোগ্রাম” তার উদ্দেশ্য ও কর্মকাণ্ডের উপর উপস্থাপনা তুলে ধরে যা ফান্ডাজিওন মিলানো কর্টিনা ২০২৬, ইউনূস স্পোর্টস হাব ও ফান্ডাজিওন গিওকোমো ব্রডোলিনির সহযোগিতায় যৌথভাবে সৃষ্ট ও পরিচালিত। এ ছাড়া প্যারিসে গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রফেসর ড. ইউনূসকে স্বাগত জানানো হয়। উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূস এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ফাউন্ডেশনটির বিভিন্ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের জেনারেল ডেলিগেট ম্যাডাম ভেরোনিক ফৌজরের সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপটে ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার উপর একটি সাক্ষাৎকার রেকর্ড করেন। এ ছাড়াও তারা গ্রামীণ ক্রেডিট এগ্রিকোল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় “ইউনূস ফ্রান্স” পরিচালিত সেনেগালের ডাকারে নবীন ইক্যুইটি প্রোগ্রামের অগ্রগতিও পর্যালোচনা করেন। প্যারিসের মেয়র অ্যান হিদালগো প্রফেসর ইউনূসকে “ইমপ্যাক্ট-২” সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

বিজ্ঞাপন
“ইমপ্যাক্ট-২” হলো ফরাসি ইনকিউবেটর “ইনকো” ও প্যারিসের নগর সরকার আয়োজিত একটি বৈশ্বিক সম্মেলন। প্রফেসর ইউনূস শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির সুযোগ ও ঝুঁকি সম্বন্ধে, বিশেষ করে যা দারিদ্র্য এবং জলবায়ু সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত, তা নিয়ে বক্তৃতা করেন। প্যারিস সিটি হলে আয়োজিত “ইমপ্যাক্ট-২”-এর এক হাজারের বেশি শ্রোতার বিশাল বার্ষিক সমাবেশে প্রফেসর ইউনূস এআই এর দ্রুত সমপ্রসারণের প্রেক্ষাপটে প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর দ্য ট্রেজারি  (যুক্তরাজ্য) গ্যারেট ডেভিস, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সাশা লুসিয়নি এবং অন্যরা।  বক্তৃতায় প্রফেসর ইউনূস প্রযুক্তিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাব করেন- একটি হলো দ্রুত বিস্তার লাভকারী, অতি বুদ্ধিমান প্রযুক্তি যা মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যাকে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলেন। 

অন্যটি হচ্ছে যা আজ নেই কিন্তু যেটা সুচিন্তিতভাবে সৃষ্টি করা হবে অথবা ইচ্ছা না-থাকা সত্ত্বেও ঘটনাচক্রে জন্মলাভ করবে। যেটা মানুষের নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে। এই প্রযুক্তি কোনো মানব হস্তক্ষেপ, সাহায্য বা নির্দেশনা ছাড়াই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, প্রযুক্তিকে ক্রমাগতভাবে উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাবে। প্রযুক্তিকে তার নিজস্ব উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করবে। তিনি প্রযুক্তির এই ভবিষ্যৎ শাখার নাম দিয়েছেন অটোনোমাস ইন্টেলিজেন্স বা “অঃও”। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হলে পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের অবসান ঘটবে। তিনি বলেন, তার কাছে মূল ইস্যুটি প্রযুক্তির শক্তির সমপ্রসারণ বিষয়ক নয়, বরং প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কী অর্জন করতে চায় তা স্থির করা এবং  প্রযুক্তিকে সে পথে নিয়ে যাওয়া। সে সিদ্ধান্ত নেয়াটা খুবই জরুরি বিষয়। প্রযুক্তি দিয়ে মুহূর্তে সীমাহীন  নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা, নানাভাবে মানব সমাজকে তছনছ করে দেয়া আমাদের উদ্দেশ্য হতে পারে না। বর্তমানে আমরা তা করেই যাচ্ছি আর নিজেদের বাহবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে যে প্রযুক্তি আমাদের হাতে আছে তার সাহায্যে অনায়াসে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারি, পৃথিবীকে রোগমুক্ত করতে পারি এবং প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বৈশ্বিক উষ্ণতা দূর করতে পারি। কিন্তু তা না করে প্রযুক্তিকে আমরা সীমাহীন মুনাফা উপার্জনের কাজে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবং তাই করছি। সুপার টেকনোলজি তৈরি করে আমরা শুধু কিছু লোককে ক্রমাগতভাবে সীমাহীন সম্পদের অধিকারী  হতে সাহায্য করছি যখন সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার মতো সমস্যা ক্রমাগত উপেক্ষিত বা আরও খারাপ হতে থাকছে।  

তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের উদ্দেশ্যগুলোকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে এবং প্রযুক্তিকে সেভাবেই শক্তিশালী করতে  হবে।  ওদিকে প্যারিসে অবস্থানকালে ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র লা’কোয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক জ্যা ক্যাসার্ড প্রফেসর ইউনূসের একটি  সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকারটির মূল বিষয়বস্তু ছিল ক্ষুদ্রঋণ, সামাজিক ব্যবসা, আসন্ন প্যারিস অলিম্পিক এবং এই অলিম্পিকের সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন দিকগুলি। প্রফেসর ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার দীর্ঘদিনের অনুসারী,  বিএনপি পারিবাসের “ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড রিলেশানস উইথ সিভিল সোসাইটি”র প্রধান ক্লডিয়া বেলির সাথে একটি উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেন। ক্লডিয়া ও তাঁর টীম প্রফেসর ইউনূসের কাছে সামাজিক উদ্যোক্তা, সামাজিক ক্রয়, নবীন ইক্যুইটির নানা বিষয়ে জানতে চান, এবং   ইউনূস ফ্রান্স এবং বিএনপি পারিবাসের মধ্যকার নতুন অংশীদারিত্বের বিশদ বিবরণ নিয়ে আলোচনা করেন। ল’রিয়াল এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত একটি পৃথক বৈঠকে প্রফেসর ইউনূস মিসেস পলিন অ্যাভেনেল্তলাম এবং মিসেস লরা বারোসোর নেতৃত্বে পরিচালিত “ল’রিয়াল ফান্ডস ফর উইমেন” টীমের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ইউনূস ফ্রান্স পরিচালিত “ডেগ না লা প্রোগ্রাম” নিয়ে আলোচনা করেন। 

এই কর্মসূচির লক্ষ্য সেনেগালের ডাকারে ২,৫০০ জন নারীকে উদ্যোক্তা ও আর্থিক শিক্ষা দিয়ে সহায়তা করা এবং তাঁদের ব্যবসা প্রকল্পগুলিকে সমর্থন দেয়া যা বাংলাদেশে অধ্যাপক ইউনূসের সৃষ্ট নবীন উদ্যোক্তা মডেল দ্বারা অনুপ্রাণিত। প্রফেসর ইউনূস এরপর “সোশ্যাল টাইডস” আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একদল তরুণ উদ্যোক্তার সাথে আলোচনায় যোগ দেন। সোশ্যাল টাইডস্তএর লক্ষ্য হল আগ্রহী সামাজিক উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন করা যারা সামাজিক, পরিবেশগত বা সাংস্কৃতিক অভিঘাত রয়েছে এমন সব প্রকল্প তৈরী করছে। গুগল ফাউন্ডেশন সোশ্যাল টাইডসকে অর্থায়ন করছে। প্রফেসর ইউনূস “ইনকো” আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সামাজিক ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করেন। “ইনকো” একটি বিশ্বব্যাপী সংস্থা যা ৫০টি দেশে পরিবেশগতভাবে টেকসই এবং সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ একটি নতুন অর্থনীতি গড়ে তোলার কাজে নিবেদিত। সংস্থাটি ১১০টি প্রভাবশালী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে এবং বিশ্বব্যাপী ২০০,০০০ লোককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পরদিন প্রফেসর ইউনূস ুমাইক্রোফিউচারচ  নামে ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ের সরকারী এবং বেসরকারী অংশীজনদের একটি গোলটেবিল আলোচনার জন্য প্যারিসের দারিদ্র অধ্যুষিত এলাকা সেইন সেন্ট ডেনিসে  যান।  সেন্ট ডেনিসের প্রেসিডেন্ট স্টিফেন ট্রাউসেল, ভাইস প্রেসিডেন্ট মেলিসা ইউসুফ তাকে এলাকার প্রেসিডেন্টের  সচিবালয়ে অভ্যর্থনা জানান। সেইন সেন্ট ডেনিসের কর্মসংস্থান, ইনসারসন ও সামাজিক অর্থনীতি বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর ম্যাথিউ আলেসি তাঁর জন্য এলাকার অথনৈতিক পরিস্থিতির উপর একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।  ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তঃআঞ্চলিক তহবিল দ্বারা অর্থায়নকৃত “মাইক্রোফিউচার” হলো ক্ষুদ্রঋণের ভবিষ্যৎ ও সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি নিয়ে আলোচনার একটি বিশেষ উদ্যোগ। প্রফেসর ইউনূস ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বেকার তরুণদের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি সেন্ট ডেনিসের কোন নাগরিক বেকার ভাতার উপর নির্ভরশীল থাকবে না তা নিশ্চিত করতে এবং এলাকাটিকে প্যারিসের  ুবেকার ভাতামুক্ত এলাকায়চ  পরিণত করতে শ্রোতাদের উৎসাহিত করেন।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status