প্রথম পাতা
মধুখালীতে দুই ভাইকে হত্যা
বিক্ষুব্ধ জনতার সড়ক অবরোধ পুলিশের ধাওয়া সংঘর্ষ, রণক্ষেত্র
ফরিদপুর প্রতিনিধি
২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার
দুই শ্রমিক হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে জনতার মহাসড়ক অবরোধকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ফরিদপুরের মধুখালী। উপজেলা সদর থেকে ঘোপঘাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক জুড়ে পুলিশ ও স্থানীয় জনতার মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার ঘটনা ঘটে। তিন ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে প্রশাসন ও বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার মধুখালী উপজেলা ঈদগা মাঠের পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে কয়েক হাজার মানুষ উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকার ঘটনাস্থল অভিমুখে রওনা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মধুখালী থেকে ১০ কিলোমিটার পথ যাওয়ার পর পুলিশের বাধায় পড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিনজন আহত হন। আহতদের মধ্যে দুইজনকে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় খবর রটে আহতদের মধ্যে একজন মারা গেছে। এমন খবরে বিক্ষুব্ধ জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে উপজেলার মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নওপাড়া ইউনিয়নের নওপাড়া ইউনিয়নের মোড়ে, বাগাট ইউনিয়নের আড়কান্দি ব্রিজ, ঘোপঘাট, আড়পাড়া ইউনিয়ন ও কামারখালী ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এরমধ্যে নওপাড়া, ঘোপঘাট, মালেকা চক্ষু হাসপাতাল ও মধুখালী বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি, বাঁশ দিয়ে কোথাও আবার আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ এলাকায় পুলিশ রাবার বুলেট টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা দূরে অবস্থান করে আবার মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। তিন ঘণ্টাব্যাপী চলা অবরোধে সড়কের দু’পাশে শত শত যান আটকা পড়ে। পুলিশ সুপার, র্যাব ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তায় কিছুক্ষণের জন্য যান চালু করা হলেও মধুুখালী বাজার এলাকায় রাস্তায় গুঁড়ি ফেলে টায়ারে আগুন লাগিয়ে ফের মহাসড়কটি অবরোধ করে স্থানীয়রা। এ সময় উত্তেজিত জনতা পুলিশ ও বিভিন্ন যানবাহন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। বাধ্য হয়ে পরিবহনগুলো বিকল্প পথে যাওয়ার চেষ্টা করে। বিকালে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যান চলাচল শুরু হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া কয়েকজন নারী জানান, বিচারের দাবিতে আমরা আজ পাঁচদিন মহাসড়কে অবস্থান করছি। কোনো মায়ের কোল খালি হলে সেই মাই-ই জানে সন্তান হারানোর ব্যথা। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাই। বিক্ষোভে অংশ নেয়া কয়েকজন জানান, পঞ্চপল্লীতে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়েছিল, গুজব ছড়িয়ে তাদেরকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার বিচার চাইতে রাস্তায় নেমেছি। পুলিশ আমাদের ওপর নির্বিচারে গুলি করেছে। তারা এখন পর্যন্ত কোনো আসামিকেই ধরতে পারেনি। এ ঘটনার বিচারের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।
এদিকে মানববন্ধনটি কোনো নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির ডাকে হয়নি। শুধুমাত্র ফেসবুকের কয়েকটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্যানার পোস্টার লিফলেট ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে শত শত মানুষ এতে অংশ নেন।
মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বকু বলেন, এ ঘটনায় তৃতীয় পক্ষের কারও ইন্ধন থাকতে পারে। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমদাদ হোসেন বলেন, পরিবেশ এখন শান্ত। তবে পুলিশের ১০ থেকে ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কোনো মামলা হবে কিনা তা পরে বিবেচনা করা হবে। তিনি আরও বলেন, দোষী যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, প্রকৃত ঘটনা বের করে আনতে পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। এ ধরনের আন্দোলনে পুলিশের কাজ ব্যাহত হবে। পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
উল্লেখ্য, ১৬ই এপ্রিল মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকার বারোয়ারী মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পাশের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহের বশে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করা হয়। তাদের মধ্যে সহোদর দুই ভাই ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে মাঠে কাজ করছে পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা।
পাঠকের মতামত
ঘটনার মুলহোতা চেয়ারম্যান ও তপতী রাণীর বিরুদ্ধ্যে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? ঐ তপতী রাণী কারো এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। সে নিজেকে সেইফ করার জন্য ইতিমধ্যে একটা মামলার বাদী সেজে বসেছে।
পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এই দেশের হিন্দুধর্মাবলম্বীরা দিনদিন বিবেকহীন হয়ে পড়ছে। এরা ভারতের ইন্ধন ও শক্তিতে যা কিছু করতে চাচ্ছে তা খুবই বাজে পরিস্থিতি ডেকে আনবে একদিন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিকরা যদি আজকের এই দিনগুলো মনে রাখে তাহলে এখন থেকে ১০ বছর পর হলেও এর প্রতিশোধ নিবে। সুতরাং সাময়িক শান্তির জন্য দেশে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্ট হচ্ছে এর শেষটা হিন্দুদের পক্ষে নিতে গেলে এ দেশ তাদের দখলে নিতে হবে। যদি না পারে তাহলে একদিন হয়তো এ দেশের একটা মন্দিরও থাকবে না। এসব সাম্প্রতিক দাঙ্গার ভয়াবহতা সৃষ্টি না হোক এই কামনাই করি। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন, (আমিন)।
দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে ।
পিটিয়ে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা সংস্কৃতি এ সরকারের একটি বড়ো উন্নয়ন। তবে এ সংস্কৃতির মৃত্যু ঘটাতে হবে, নইলে আমরা প্রাগ-ঐতিহাসিক যুগ দেখতে পাবো।
ঘটনা পরিস্কার তারপর ও খতিয়ে দেখতে দেখতে সব তলিয়ে যাবে।
যখন দুই শ্রমিককে পিটিয়ে মারছিল তখন পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। আর এই হত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল করতে গেল তখন পুলিশের চেতনা দাঁড়িয়ে গেল। এসব পুলিশকে ধিক্কার জানাই।