ঢাকা, ৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

অনলাইন

মালয়েশিয়ায় হুন্ডির দাপট, বাড়ছেনা প্রবাসী আয়

আরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়া

(১ সপ্তাহ আগে) ২২ এপ্রিল ২০২৪, সোমবার, ৭:৪৮ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

mzamin

দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় নানা পেশায় প্রায় ১৫ লাখ প্রবাসী কর্মরত। বৈদেশিক শ্রমবাজারে প্রবাসী আয়ের প্রধান উৎস এ দেশ থেকে কমে যাচ্ছে  রেমিট্যান্স প্রবাহ।
সাম্প্রতিক সময়ে, ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতের দরপতন, অপরদিকে অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডিতে (অবৈধ লেনদেন) আয় পাঠালে প্রতি ডলারে ৫-৬ টাকা বেশি পাওয়ায় হুন্ডির পথে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।

চলতি বছরের মার্চ মাসে মালয়েশিয়া থেকে ১২ কোটি ২৩ লাখ ডলার বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। চলতি মাসে রোজা ও ঈদ হওয়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ার কথা থাকলেও ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিত এবং টাকার মানে কমেছে রেমিটেন্স প্রবাহ। এ নিয়ে শংকায় পড়েছেন রেমিট্যান্স হাউজের কর্তারা। তারা বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ শংকা থেকে উওরণের পথ খুজছেন তারা। বৈধপথে রেমিট্যান্স আহরনে হাউজগুলো হাইকমিশনসহ যৌথ উদ্যোগে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন প্রদেশে করে যাচ্ছে প্রচার প্রচারণা সভা।
এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি সেলাঙ্গর ও পেনাং রাজ্যে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রেরণে সরকার ও পরিবারের উপকার নিয়ে প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো: শামীম আহসাবে

বিশ্বের ৩০ টি দেশ থেকে রেমিটেন্স আসা দেশের মধ্যে মালয়েশিয়া ৫ম স্থানে থাকলেও সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়েও প্রবাসী আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। 
অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউস এসডি এন বিএইচডির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলের সাথে হুন্ডির পার্থক্য বেশি হওয়ার কারণে রমযান এবং ঈদের মাস হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের মার্চের তুলনায় এপ্রিল মাসে রেমিট্যান্স কমে আসছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য অগ্রণী ব্যাংকের হিসাবে টাকা পাঠালে সরকার ঘোষিত ২ দশমিক ৫ শতাংশের অতিরিক্ত আরও ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ সর্বমোট ৫ শতাংশ বোনাস দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রবাসী আয় কমার অন্যান্য কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এর পাশাপাশি বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর জন্য জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

চলমান ডলারের বিপরীত রিঙ্গিতের দরপতন এবং রিঙ্গিতের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স কমে আসছে বলে মনে করেন এনবিএল মানি ট্রান্সফার মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আলী হায়দার মর্তুজা।

বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে গত মার্চ মাসে এনবিএল মানি ট্রান্সফার থেকে ২ কোটি ১২ লাখ ডলার প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠালেও চলতিমাস (ঈদেরমাস) হওয়ারপরও গত মাসের তুলনায় কম।
মর্তুজার মতে, বর্তমানে বাংলাদেশ ডলারের রেটের অনেক ভিন্নতার কারণে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের প্রত্যাশিত রেট দিতে পারছে না। ডলারের এই ব্যবধান যদি কমিয়ে আনা যায় তাহলে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের প্রত্যাশিত টাকার রেট দিতে পারবে ও প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে না পাঠিয়ে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাবেন।

প্লাসিড মানি এক্সচেন্জ এর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, রেমিট্যান্স খাতে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, সেটা কাটিয়ে উঠতে প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। তবে এই মুহুর্তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৈধ চ্যানেলে প্রেরিত রেমিটেন্সের বিপরীতে আরও প্রণোদনা বাড়ানো উচিৎ। প্রণোদনা বাড়ালে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসীরা বেশী উদ্বোদ্ধ হবে বলে মনে করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, প্রণোদনার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায় হুন্ডির মাধ্যমে। ভিসাবাণিজ্য, আন্ডার ইনভয়েসের (প্রকৃত মূল্য কম দেখানো) মতো অবৈধ পথ আবার চালু হয়ে গেছে। এতে এখন বেড়েছে হুন্ডি।
মালয়েশিয়া প্রবাসীরা বলছেন,অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের সঙ্গে শ্রম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। তাদের সেবার মানও উন্নত করতে হবে। প্রবাসীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার প্রতিও নজর দিতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে শ্রমিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠাতে হবে। বিশেষ কাজে দক্ষতা বাড়াতে হবে। প্রবাসীরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ ও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। বৈদেশিক বিনিময় হারের নীতি কৌশল ও ব্যবস্থাপনা ঠিক করতেও দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। বস্তুত রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে হুন্ডিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহী করতে নানা ধরনের প্রণোদনা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। ব্যাংকিং সেবা বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের দূতাবাস বা হাইকমিশনে পাসপোর্ট বা ভিসা নবায়নসহ অন্যান্য কাজের জটিলতা কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া সেবার মান আরো উন্নত করতে হবে। প্রবাসী নিরাপত্তার বিষয়ে দূতাবাসের কর্মীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রবাসীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। সর্বোপরি বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসগুলোর কার্যকর ভূমিকা প্রয়োজন। 

এছাড়া বিমানবন্দরে নানা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অর্থ পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। স্বল্প আয়ের প্রবাসীদের সরকারিভাবে প্রণোদনা বাড়াতে হবে। দেশের অর্থ পাচারকারীদের সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বিদ্যমান। রেমিট্যান্স প্রেরণে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status