শেষের পাতা
সদরঘাট টার্মিনালে ভিড়, বাড়ছে যাত্রী হয়রানি
রাশিম মোল্লা
৮ এপ্রিল ২০২৪, সোমবারপবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কর্মজীবী মানুষের নদীপথে বাড়ি ফিরতে সদরঘাট টার্মিনালে ভিড় বাড়ছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষজন বহনের জন্য পর্যাপ্ত লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনে নোঙর করে রাখা হয়েছে। সন্ধ্যার পরে দক্ষিণাঞ্চলের রুটে লঞ্চ ছাড়ার কথা থাকলেও যাত্রীরা আগেই লঞ্চের ডেকে বসে আছেন। তবে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রী হয়রানি ও পুরান ঢাকার গুলিস্তান টু সদরঘাট রাস্তার তীব্র যানযটে নাকাল ঘরমুখো মানুষ। গতকাল বিভিন্ন রুটের লঞ্চ ঘুরে দেখা যায়, কোনো লঞ্চেই ভাড়ার চাট সাঁটানো দেখা যায়নি। প্রতিটি লঞ্চেই ভিআইপি, ডাবল ও সিঙ্গেল নামে তিন ধরনের কেবিন রয়েছে। ইচ্ছেমতো ভিআইপি কেবিনের ভাড়া আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। টার্মিনালের সব প্রবেশ মুখে মালের ভাড়ার তালিকা টানানো না থাকা কিংবা তদারকির অভাবে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সদরঘাট ভিক্টোরিয়া পার্ক পার হয়ে লালকুঠির দিকের রাস্তা দিয়ে ঢুকতেই প্রতিটি সিনএনজির কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলা হয়। এভাবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট টার্মিনালে আসতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। সংশ্লিষ্টদের দাবি, নৌপথ সচল রাখতে পুরান ঢাকার যানজট নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে। ইজারদার কর্তৃক খামখেয়ালি যাত্রী হয়রানি দূর করা গেলে নৌপথ আগের রূপে ফেরানো সম্ভব।
বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, নদীপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও যাত্রী হয়রানি বরদাশত করা হবে না। লঞ্চ-মালিকদের তথ্য মতে, কয়েকদিনে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা আশানুরূপ নয়। গতকাল দুপুরে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের পছন্দ কেবিন। তবে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ইচ্ছামতো আদায় করার অভিযোগ যাত্রীদের। সদরঘাট টার্মিনালে কথা হয় ঢাকা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, লঞ্চে ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ইচ্ছামতো আদায় করা হয়।
কোনো ভাড়ার চার্ট লঞ্জে সাঁটানো নেই। এই সুযোগে লঞ্চের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ইচ্ছামতো ভাড়া চায়। একটু কম বললেই যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, নৌপথে যাত্রী বাড়াতে হলে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কঠোর মনিটরিং দরকার। প্রতিটি লঞ্চের উন্মুক্ত স্থানে ভাড়ার মূল্য তালিকা সাঁটাতে হবে। টার্মিনালের প্রবেশ পথেও মালের ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করতে হবে। ঢাকা থেকে ঝালকাঠিগামী সুন্দরবন-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার মুশফিকুর রহমান জানান, ঈদ সামনে রেখে সদরঘাটে স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী কিছুটা বেড়েছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। লঞ্চের টিকিটের জন্য মরিয়া চেষ্টা, জায়গা না পেয়ে ছাদে দাঁড়িয়ে যাওয়াু এসব দৃশ্য আর নেই। ঈদ উপলক্ষে লঞ্চে ভাড়া কিছুটা বেড়েছে। ডেকের ভাড়া ১০০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪০০। সিঙ্গেল কেবিনে ২০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ২০০ এবং ডাবল কেবিনে ৪০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে।
ঝালকাঠিগামী লঞ্চের এক যাত্রী শফিকুল ব্যাপারী বলেন, ভাড়া আগের তুলনায় বেশি নেয়া হচ্ছে। পটুয়াখালীগামী যাত্রী শাহীন বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন। ভাড়া সামান্য বেশি দিয়ে কেবিন নিয়েছেন। মিরপুর থেকে ভোলা যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিবারসহ সদরঘাটে আসেন গফুর উদ্দীন। তিনি জানান, লঞ্চে ভিড় কম হবে ভেবে আগে থেকে কেবিন বুকিং করেননি। এসেই টিকিট পেয়েছেন। আগের মতো চাপ নেই। ঢাকা-বরিশাল রুটের এমভি সুরভী-৯ এর সুপারভাইজার আব্দুর রউফ জানান, যাত্রী আগের তুলনায় একটু বেড়েছে। কিন্তু তা প্রত্যাশার চেয়ে কম। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার মহাসচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় যাত্রী বেড়েছে। কিন্তু আগের মতো চাপ নেই। বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ভোর পাঁচটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা নদীবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় সব লঞ্চই আসন সংখ্যানুযায়ী যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছেড়ে গেছে।
কোনো লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী নিতে দেয়া হয়নি। পরাবত-১৮ লঞ্চের যাত্রী রহমান বলেন, লঞ্চ ছাড়বে রাত ৮টায়। যানজট এড়ানোর জন্য বিকালেই সদরঘাট টার্মিনালে চলে এসেছি। এসে দেখি লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে লোকজন বসে আছে। উপায় না পেয়ে লঞ্চের এক পাশে পাটি বিছিয়ে বসেছি। কী আর করার। বাড়ি তো যেতেই হবে। বরিশালগামী মানামী লঞ্চের যাত্রী সুলায়মান বলেন, যানজটের কারণে সুরিটোলা থেকে সদরঘাটে আসতে ২ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সড়কের অর্ধেক দখল করে রেখেছে ট্রান্সকমের বিভিন্ন পরিবহন। যে কারণে যাত্রী পরিবহনগুলো দীর্ঘক্ষণ একইস্থানে আটকে ছিল। এমভি যুবরাজ লঞ্চের কর্মচারী শরীফ মিয়া বলেন, আগে ঈদ মৌসুমের এ সময়ে লঞ্চের ডেকে যাত্রী বসার জায়গা থাকতো না। যাত্রীদের ভিড়ে ডেক দিয়ে হাঁটার পথ থাকতো না। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পরে আগের মতো যাত্রী নেই। এদিকে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সদরঘাট টার্মিনাল এলাকা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌ-পুলিশের পাশাপাশি র্যাব সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। একটু পর পর নৌ-পুলিশ অভিযান চালিয়ে টার্মিনালে হকারদের তুলে দিতে দেখা গেছে। তবে টার্মিনালের প্রবেশ মুখে বিশেষ করে লালকুঠি ঘাট ও চাঁদপুর ঘাটে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীদের হয়রানি হতে দেখা গেছে।