শেষের পাতা
টেন্ডার হয়নি প্রশাসনও জানে না, রাস্তার গাছ কাটার প্রকল্প
প্রতীক ওমর, গাইবান্ধা থেকে ফিরে
৭ এপ্রিল ২০২৪, রবিবারআইন-কানুনের তোয়াক্কা নেই। নেই টেন্ডার। জানে না প্রশাসনের কোনো দপ্তরের কর্তারাও। তবুও প্রকাশ্যে সড়কের গাছ কেটে বিক্রি করছেন জেলা পরিষদের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন। তাকে সহযোগিতা করছে থানা পুলিশ। এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক এলাকার সাধারণ মানুষ। সাঘাটা উপজেলা বোনারপাড়া-জুমারবাড়ী সড়কের এই চিত্র।
সরজমিন দেখা যায় গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সদস্য ও জুমারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শ্রমিক দিয়ে রাস্তার দুই ধারের বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। সড়ক থেকে দূরে ব্যক্তিমালিকানাধীন গাছও জোর করে কেটে নিচ্ছেন তিনি। শুধু কেটেই খ্যান্ত হননি। তার নিজের প্রতিষ্ঠিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভিতরে গাছগুলো পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে বলেও কথা উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজেদের জায়গায় নিজেদের লাগানো গাছ কাটায় বাধা দিলে শাখাওয়াত হোসেন পুলিশ দিয়ে থানায় তুলে নেয়ার হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন। পুলিশও নিয়মিত অবস্থান করছেন রাস্তাতে। প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের ফল এবং কাঠের গাছ কেটে সাবাড় করলেও জানেন না জেলা প্রশাসক, জানেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও। কোন প্রক্রিয়ায় কাটা হচ্ছে সেটি জানে না বন বিভাগও। প্রশ্ন এখানেই। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের কাছে ওই রাস্তাটির গাছ কোন প্রক্রিয়ায় কাটা হচ্ছে, টেন্ডার হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এটা মূলত বন বিভাগের কাজ। গাছ কাটতে হলে একটি কমিটির মাধ্যমে নিয়ম মেনে কাটতে হয়। কমিটি বন বিভাগের মাধ্যমে হয়। এমন কোনো কমিটি হয়েছে বলে আমার জানা নেই।
বিষয়টি জানার জন্য সাঘাটা উপজেলা বন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গাছগুলো বন বিভাগের না। কোন বিভাগের সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে কেয়ার প্রজেক্টের মাধ্যমে গাছগুলো সড়ক ও জনপদ বিভাগ লাগিয়েছিল। এছাড়া আমি আর কিছু জানি না। গাছ কাটতে বন বিভাগের কোনো অনুমতি লাগে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গাছ কাটতে হলে একটি কমিটির মাধ্যমে কাটতে হয়। সেই কমিটি হয়েছে কিনা আমি জানি না। তিনি বলেন, গাছ কেটে রাস্তায় পরিবহন করার জন্য আমাদের অনুমোদন লাগে। কেউ অবৈধভাবে গাছ কেটে রাস্তায় পরিবহন করলে আমরা ধরবো, আইনের ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সাঘাটা থানার হাঁপানিয়া থেকে বাউলিয়া গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার গাছ কেটে রাস্তা দিয়েই নিয়ে গেল আপনারা কি ওই গাছগুলো ধরেছিলেন বা মামলা দিয়েছিলেন? তিনি উত্তরে বলেন, না।
বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়ে গাছ কাটার আইনের প্রক্রিয়ার অস্থিত্ব মেলেনি। তারপরও শাখাওয়াত হোসেন গাছকাটা চলমান রেখেছেন। তাকে পুলিশ কীভাবে সহযোগিতা করছেন জানতে চাইলে সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ মমতাজুল হক মানবজমিনকে বলেন, শাখাওয়াত হোসেন নামের একজন জেলা পরিষদের সদস্য আমাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন এজন্য আমার পুলিশ সহযোগিতা করছে। রাষ্ট্রের কাজে যে কেউ ডাকলে আমরা সহযোগিতা করবো। তার কাছে জানাতে চাওয়া হয় গাছগুলো কি বৈধভাবে কাটা হচ্ছে? কোনো টেন্ডার হয়েছে? তিনি বলেন- টেন্ডার ছাড়া কী গাছ কাটা যায়? তবে তিনি টেন্ডারের কোনো কাগজপত্র দেখেননি বলে জানান।
গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সদস্য শাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত সাড়া দেননি। পরে সাড়ে তিনটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বলেন, গাছগুলো তিনি কাটছেন না। যার যার জায়গার সামনে গাছ তারা নিজেরাই কেটে নিচ্ছে। আমি তাদের নামের তালিকা তৈরি করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবো। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় এতোদিন ধরে গাছগুলো কেটে নিলো মানুষ আইনগতভাবে কিছুই করেননি কেন? তিনি বলেন- আমি বাধা দিয়েছি এজন্য জনগণ আমার উপর ক্ষ্যাপা।
এদিকে সাঘাটার ডাকবাংলা এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল হান্নানের নাম উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। শাখাওয়াত হোসেনকে গাছ কাটার লেবার দিয়ে সহযোগিতা করছেন ওই ব্যবসায়ী। তিনি মানবজমিনকে বলেন, গাছগুলো কাটার পরপরই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা ইসাহাক আলী মানবজমিনকে বলেন, উন্নয়ন কাজের জন্য বেশকিছু রাস্তার গাছ কাটার টেন্ডার বিপ্তপ্তি আমার কাছে এসেছে। ওই রাস্তাটির টেন্ডার হয়েছে কি না অফিস বন্ধ থাকার জন্য আমি নিশ্চিত নই। তারপরও বিষয়টি সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং বন বিভাগের। আমার এখানে কোনো পার্ট নেই।
গাইবান্ধা জেলার সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হায়দার কামরুজ্জামান এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তারা সাড়া দেননি। প্রকাশ্যে একটি বড় রাস্তার দামি দামি গাছ কেটে নেয়া হলেও এর দায় নিতে রাজি হচ্ছে কোনো দপ্তর। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি প্রশ্ন দানা বাঁধতে শুরু করেছে। তাহলে কী মিলেমিশে এই হরিলুট?
টেন্ডার তো ৭ জানুয়ারিতে হয়ে গেছে। এখন শুধুই ভোগ আর ভোগ।
All evils are robbing and peoples assessts and making money to send out - there is no body to see, take any action!