শেষের পাতা
ঈদে পোশাকের ‘জমজমাট’ বেচাকেনা নেই
স্টাফ রিপোর্টার
৬ এপ্রিল ২০২৪, শনিবারঈদের শেষ মুহূর্তের কেনাবেচা চলছে পোশাক মার্কেটে। রোজার শেষ ১০ দিনে মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। তবে তা প্রত্যাশার চেয়ে কম বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলছেন, ঈদ ঘিরে রোজার মাসে পোশাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ২০ রোজার পর থেকে জমজমাট থাকে বেচাকেনা। এ বছর রোজার শুরু থেকেই বিক্রি কম ছিল। ঈদের কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনো জমজমাট বেচাকেনা হয়নি। রাজধানীর খিলগাঁও তালতলায় সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেট। তালতলা মার্কেট নামেই এটি পরিচিত। ঢাকার মালিবাগ, খিলগাঁও, রামপুরা, বনশ্রী, বাসাবো, মুগদা, সবুজবাগ, মাদারটেক, নন্দীপাড়াসহ আশপাশের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ তালতলা মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসেন।
গত বছরও এর চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতা ছিল। শুক্রবার বন্ধের দিনও এবার তেমন চাপ পড়েনি। তাও আমাদের মার্কেটে নিম্নবিত্তের সাধ্যের মধ্যে পোশাক থাকায় কিছু ক্রেতা রয়েছে। কিন্তু অন্য মার্কেটে আরও খারাপ অবস্থা। তিনি বলেন, ঈদের আগে শেষ ১০ দিনে আমরা দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। কিন্তু গত বছর গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হতো। সিটি ফ্যাশনের বিক্রেতা আব্দুল্লাহ আল নাঈম। গতকাল দুপুরে ক্রেতাদের দোকানের দিকে পোশাক দেখার জন্য হাঁকডাক করছিলেন। দোকানটিতে মেয়েদের টু-পিস, নায়রা, থ্রি-পিস, ওয়ান-পিস, লেহেঙ্গাসহ বিভিন্ন পোশাক বিক্রি হয়। এসব পোশাক ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তারা। আব্দুল্লাহ বলেন, শুক্রবার হিসেবে আজ একটু ক্রেতা আছে মার্কেটে। তাও আগের বছরগুলোতে এই সময়ে ক্রেতা ডাকা তো দূরের কথা পোশাক দেখাতে দেখাতে ক্লান্ত থাকতাম। এবার সবারই একটু বিক্রি কম হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার পোশাকের দাম কিছুটা বেশি। এই দামে ক্রেতারা নিতে চায় না। তাদের হাতে টাকাও কম। তবে এই মার্কেটে আরও কমেও পোশাক পাওয়া যায়।
যে যার সাধ্যমতো কেনে। সাউদিয়া গার্মেন্টের মারুফ বলেন, দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা দামাদামি করে বেশি। একদামে বিক্রি করলে কেউ নিতে চায় না। অল্প লাভ হলেই এবার পোশাক ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। বিউটি শাড়িঘরের মুকুল হাসান বলেন, আমাদের এখানে সবধরনের কোয়ালিটির পোশাক আছে। তবে বেশি চলছে একটু কম দামের পোশাকগুলো। নিম্নআয়ের মানুষই বেশি এই মার্কেটে। মৌচাক এলাকার ফরচুন, আয়েশা ও মৌচাক শপিংমলের চিত্রও একই। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের পছন্দের মার্কেট এটি। রোজার শেষ মুহূর্তে কিছুটা বিক্রি বাড়লেও তাকে জমজমাট বলছেন না বিক্রেতারা। তারা বলেন, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ ঘিরে এই সময়ে দোকানে ক্রেতাদের যে চাপ থাকার প্রত্যাশা ছিল সেটা নেই।
একে তো বৈশাখের বাজারটা হারাতে হয়েছে, দ্বিতীয়তো ঈদেও মানুষ কম কিনছে। মৌচাকে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রি হয় সোলমেট কাপল নামের দোকানে। বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, শুক্রবার চেয়ারে বসার সুযোগ থাকে না। তাও ঈদের আগে শেষ শুক্রবার। যে ক্রেতা আগে ২-৩টা ড্রেস নিতো সে এখন একটা নিচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনটা হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর যে কয়জন স্টাফ রেখেছিলাম তাদের দিয়ে দোকান সামাল দেয়া কঠিন ছিল। কিন্তু এ বছর মনে হচ্ছে এক্সট্রা লোক না নিলেও হতো। ফরচুন শপিংমলের তৃতীয় তলায় বুটিক্সের থ্রিপিস বিক্রি হয় নাবিল নামের একটি দোকানে। বিক্রেতা রাসেল বলেন, ক্রেতার পকেটে টাকা না থাকলে সেল কীভাবে হবে। এবার আগের চেয়ে ৪০-৫০ শতাংশ বিক্রি কম হচ্ছে। আগে দোকানে ফিক্সড দামে বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন মানুষ ফিক্সড দাম বললে কিনে না। তাই দামাদামি করে বিক্রি করছি। অনেকের ড্রেস পছন্দ হলেও নিতে পারে না দামের কারণে। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। আমরা ১০০-১৫০ টাকা লাভ হলেই বিক্রি করে দেই। পাঞ্জাবি বিক্রেতা ইমরান বলেন, এবার পাঞ্জাবির বিক্রিটা বেশি হচ্ছে। অন্য শার্ট বা প্যান্টের চাহিদা কম। ঈদের দিন কমবেশি সবাই পাঞ্জাবি পড়তে পছন্দ করে।
অন্ন সংস্থান না থাকলে শখের বস্ত্র কিনা যায় না ।