খেলা
অজুহাত দিতে চান না শান্ত
স্পোর্টস রিপোর্টার
৪ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার৫১১ রানের লক্ষ্য। হাতে প্রায় দুই দিন বাকি। এরপরও চট্টগ্রাম টেস্ট ১৯২ রানে হার বরণ করে নিলো বাংলাদেশ। হ্যাঁ, বরণ করে নেয়ার কথা বললে ভুল হওয়ার নয়। ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিং তিন বিভাগেই বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ভুলে ভরা। চট্টগ্রাম টেস্টে হাতছাড়া হয় ৯টি ক্যাচ। আর দারুণ ব্যাটিং উইকেটে যেখানে লঙ্কানরা ছয়টি ফিফটি হাঁকিয়ে ৫শ রান করে সেখানে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ দল প্রথম ইনিংসে আউট হয় মাত্র ১৭৮ রানে! অবশেষে ৫ ইনিংস পর টাইগাররা টেস্ট ক্রিকেটে ৩’শর রান করতে পেরেছে। তাও দুই স্বীকৃত বোলার মেহেদী হাসান মিরাজের ফিফটি ও তাইজুল ইসলামের ১৪ রানে ভর করে। দলের টপ অর্ডারের ৭ ব্যাটার দুই অংক ছুঁয়েও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন বাজে শটে। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও স্বীকার করে নিয়েছেন ব্যাটিং ও ফিল্ডিংয়ে হতাশার কথা। তিনি বলেন, ‘ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে বলব যে সবাই যথেষ্ট অনুশীলন করে। সবাই অনুশীলনে প্রত্যেকটা ক্যাচও ধরে। কেন হয়েছে এটার আন্সার নাই। কিন্তু ক্যাচগুলো আমরা ধরতে পারি নাই। পুরা সিরিজে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি। এখানে অজুহাত দেওয়ার কোনো অপশন নেই যে এই কারণে হইসে ওই কারণে হইসে।
দল হিসেবে পুরা সিরিজে ৪টা ইনিংসে আমরা ভালো ব্যাটিং করিনি।’ শেষ তিন টেস্টের পাঁচ ইনিংসেই বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ২শ’র নিচে। লঙ্কার বিপক্ষে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শেষ মুহূর্তে মিরাজের ৮১ রানের ইনিংস বাঁচিয়েছে দলের মান। দলের ব্যাটিংয়ের যোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে তখন অধিনায়ক মনে করেন যতটা খারাপ হয়েছে ততোটা খারাপ ব্যাটার তারা নন। তবে এও স্বীকার করেছেন যে তাদের উন্নতিরও প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিং নিয়ে অবশ্যই দীর্ঘ পরিসরে কাজ করার দরকার আছে। প্রথমে আমি বলব যে দুইটা ম্যাচে ওরা যেরকমভাবে ব্যাটিং করেছে আমরা এত খারাপ ব্যাটার না। আমাদের সামর্থ্য এর থেকে আরও বেটার আমার কাছে মনে হয়। এর সাথে যোগ করতে চাই টেকনিক্যালি, মেন্টালি আরও বেশি উন্নতির জায়গা আছে।’ ২৫ বছরে বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলেছে মাত্র ১৪২টি। যা অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। বছরে খুব বেশি টেস্ট খেলার সুযোগ হয় না। যে কারণে টেস্টে নিজেদেরকে মেলে ধরার খুব বেশি সুযোগও হয় না। সাদা পোশাকে দলের খারাপ করার পিছনে এই কারণটাকেও বড় মানেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘এটা একটা কারণ হতে পারে কিন্তু এই কথাটা আমি বলতে চাই না। কারণ বর্তমান সময়ে যেরকম খেলা চলছে আমাদের এগুলো এডজাস্ট করেই খেলতে হবে। হ্যাঁ যারা তিন ফরম্যাট খেলে না তাদের হয়ত প্রস্তুতি একটু হয়ত নেওয়ার সুযোগ থাকে। এখন সামনে যত খেলাই আছে আমাদের এভাবেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এভাবেই আমরা তিন ফরম্যাট একসাথে কীভাবে এডজাস্ট করে খেলতে পারি অইটা চিন্তা করে অনুশীলন, প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।’
দলের তরুণ ব্যাটাররা ব্যর্থ, এমনকি অধিনায়ক নিজেও। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ফর্ম হারানো লিটন দাসকে নিয়ে। তবে অধিনায়ক এই ব্যাটারের পাশেই অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি কোনো প্লেয়ারকে আলাদাভাবে দেখি না। প্রত্যেকটা প্লেয়ারের কাছ থেকে আমার চাওয়াটা একইরকম থাকে। যার যে রোল আছে সবাই সেই অনুযায়ী যেন খেলে। এখানে যে কয়টা প্লেয়ার আছে সবার সামর্থ্য আছে। কারও অভিজ্ঞতা একটু বেশি কারও একটু কম। লিটন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার। গত ২ বছর আমার মনে হয় যেভাবে টেস্ট ক্রিকেটটা খেলেছে সে খুবই ভালো করেছে। দলকে ভালো অবস্থান তৈরি করেছে। ৪টা ইনিংস ভালো যায়নি। আমি আশা করব সে সামনে কামব্যাক করবে।’
তবে লঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বোলাররা দারুণ করেছে, বিশেষ করে পেসাররা। চট্টগ্রাম টেস্টে একাই ৬ উইকেট নেন অভিষিক্ত তরুণ হাসান মাহমুদ। পেসারদের এমন উন্নতিতে শান্ত বলেন, ‘অবশ্যই পেসাররা ৩-৪ বছর আগেও মনে হয় এরকম ছিল না। এখন টেস্টে এরকম পিচে উইকেট নিচ্ছে। হাসান প্রথম ম্যাচে, আগের ম্যাচে শরিফুল। এর আগে তাসকিন যখন খেলত, খালেদ দুর্দান্ত বল করেছে দুই ম্যাচে। প্রত্যেক বোলার এখন খেলতে চাচ্ছে যেকোনো কন্ডিশনে এবং দলকে ভালো কিছু দেওয়ার আগ্রহটা আছে যেটা খুবই ভালো দিক।’
প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরা সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স কেমন ছিল? প্রথম ইনিংসে ৩৭ ওভার বল করে ৩ উইকেট নেওয়া সাকিবই ছিলেন দলের সেরা বোলার। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে অবশ্য বেশি কিছু করতে পারেননি। ২৩ বল খেলে ১৫ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে সাকিবের শিকার ১ উইকেট, ব্যাটিংয়ে ৫৩ বলে ৩৬ রানে থেমেছেন। সব মিলিয়ে সাকিবের পারফরম্যান্স নিয়ে সন্তুষ্ট অধিনায়ক নাজমুল। বলেন, ‘উনি (সাকিব) অনেক দিন পর খেললেন, আমার মনে হয়নি ৩৭ বছর বয়সী একজন খেলছেন, প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলছেন। ৩৭ ওভার বল করেছেন প্রথম ইনিংসে। ৩ উইকেটও নিলেন। ব্যাটিংটা যেভাবে করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে, যতটুকু আশা করেছিলাম, তার থেকে বেশি পেয়েছি তার কাছ থেকে। সত্যি কথা হলো, টেস্ট ক্রিকেটে এমন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় থাকলে অনেক সুবিধা হয়। মাঠে বিভিন্ন ধরনের ফিডব্যাকও দিয়েছেন।’