শেষের পাতা
‘ঈদের কেনাকাটা হামাকেরে ভাগ্যত নাই’
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবারসেহরি শেষ। ফজরের নামাজ পড়ে আর ঘুমানোর সুযোগ হয় না গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। সূর্যের তীব্রতা শুরু হওয়ার আগেই অর্ধেক কাজ শেষ করতে হয়। রোজার মাস চলছে। দুপুরের পর মাঠে টিকে থাকা দায় হয়ে ওঠে। এজন্যই সুবহে সাদিককেই বেছে নেয়া হয় কাজের সময় হিসেবে। উত্তর জনপদের পাথারে পাথারে এখন ধানের গাছ সবুজ হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ জমিতেই ধান। তবে বগুড়া অঞ্চলের বেশকিছু অংশজুড়ে সবজির আবাদ চলমান।
একই এলাকার হযরত আলী, অনেকটা বিষণ্নতা নিয়ে বলেই ফেললেন, ‘বাবা হামাকে আল্লাহ্ লাতি লাতনি দিয়েছে। ঈদে তাদের জন্য কিছুই কিনতে পারমু না বলে তাদের মুখের আগোত যাবার পারিচ্চিনে। খুব অভাবে আচি। গত দশ বচর লাতি-লাতনিদের ঈদে সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে দিছি। এবার হামি একেবারে অপারগ। সবকিছুর দাম হামাকেরে নাগালের বাইরে’। খুব কষ্ট লাগিচ্ছে। জিল্লুর রহমান, সবুজ মিয়ার মাধ্যেও একই ঈদ নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই। তাদেরও একই অবস্থা। দিন এনে দিনে খাওয়া সংসার। ঈদ উপলক্ষে কেনা কাটার সাধ্য কোথায়?
ঈদ রমজান এলেই বরাবরের মত নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে বাংলাদেশি বাজারে। কোনো কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা দ্বিগুণ চারগুণ দাম বৃদ্ধি করে। ফলে বিপাকে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষ। স্বল্প বেতনের চাকরিজীবীরাও চোখে অন্ধকার দেখেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে হাবুডুবু খেতে হয় অনেককে। এবারের পরিস্থিতি আরও করুণ। বেশির ভাগ মানুষের পকেট ফাঁকা। ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জাম কেনা অথবা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে লাচ্ছা সেমাই-চিনি পাঠানো সবকিছু নিয়েই মাথা ভারি হয়ে আছে নিম্নববিত্ত মধ্যেবিত্ত এবং সাধারণ মানুষদের।
কথা হয় নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার টুলার বাঁউল গ্রামের দিনমজুর রবিউল এবং পানের দোকানদার মশিউর রহমানের সঙ্গে। তাদের কাছেও জানতে চাওয়া হয় ঈদ কেনাকাটা নিয়ে। তাদের উত্তরও একই ধাঁচের। ঈদ নিয়ে তেমন আনন্দ-উৎসাহ কাজ করছে না তাদের ভেতরে। সংসারে নিত্যদিনের খরচের জোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা সেখানে ঈদ নিয়ে বাড়তি চিন্তা মাথায় নিতে পারছেন না। আশপাশের মানুষের যেভাবে কাটবে সেভাবেই ঈদ কাটাবেন তারা। স্ত্রী-সন্তানদের চাহিদা থাকলেও এবার মেটানো একেবারেই সম্ভব হচ্ছে না তাদের।
নাটোরের সিংড়া উপজেলার মালকুড় গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, এখনো ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ভাবতে পারিনি। আরও কয়েকদিন যাক। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপর ভিত্তি করে কেনাকাটা করা হবে অথবা হবে না। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঈদ শহরের জন্য। গ্রামে ঈদ নেই। প্রায় মানুষ এখানে ঋণ করে চলছে। সংসার চালাতেই ঘাম ঝরছে সেখানে ঈদ নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে অলস সময় কাটাচ্ছেন। বেচা-কেনা একেবারেই নেই বললেই চলে।