শেষের পাতা
সিলেট আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব বিভক্তি যে কারণে চরমে
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৭ মার্চ ২০২৪, বুধবারসিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা না পাওয়ার বেদনায় ভুগছেন বেশি। নগর ভবন, সিলেট ওয়াসা, সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সহ নানা জায়গায় নেতাদের ঠাঁই হচ্ছে না। বরং সেসব জায়গায় এসে জুড়ে নিচ্ছেন অন্যরা। এই হা-হুতাশের মধ্যে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে ফের দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। দুই কর্নারে বসে এই বিভক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন দুই নেতা। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, এমপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান। তাদের দুই নেতার অবস্থান দীর্ঘদিন ধরে দুই মেরুতে। একই বৃত্তের রাজনীতির মাঠে তারা একে অন্যের প্রতিপক্ষ। এর রেশ এসে পড়েছে সিলেট আওয়ামী লীগে। এ কারণে দলের ভেতরে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
নেতারা জানিয়েছেন- সিলেট আওয়ামী লীগে বিবদমান দু’অংশের নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে সিলেটের দ্বন্দ্বে পড়ে সবচেয়ে বিতর্কিত হচ্ছেন সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান। নগর পরিচালনায় তিনি দলের সব অংশের একক সমর্থন পাচ্ছেন না। তবে যুবলীগে ও ছাত্রলীগে নিজের শক্তি বাড়াতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিরলস কাজ করছেন। ফলে জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে তার অবস্থান সুসংহত না হলেও তেমন অসুবিধা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠজনেরা। যুবলীগ ও ছাত্রলীগ দিয়ে সেটি পুষিয়ে নিচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন- বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র হতে নগর ও জেলার একডজন নেতা প্রার্থী ছিলেন। তারা দীর্ঘ দিন ধরে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের জীবদ্দশায় কেউ সিটির মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন নি। তবে তার মৃত্যুর পর অনেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। তবে দলের প্রধানের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে নিয়ে আসা হয় সিলেটে। পরবর্তীতে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়। নৌকার প্রার্থী হওয়ায় সবাই নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু সিলেটের রাজনীতিতে অভিষিক্ত হওয়া আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র হওয়ার পরপরই ফের জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এ কারণে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর সঙ্গে বলয় গড়ে তোলেন মেয়র। এতে জেলার সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান সহ অন্যরা অবস্থান নেন বিপরীত মেরুতে।
এ ছাড়া সিলেট ওয়াসার চেয়ারম্যানের পদটি কেড়ে নিয়েছে মন্ত্রী পরিবার। ওই পরিবারের ভগ্নিপতি সিলেটের নামকরা চিকিৎসক ডা. হাফিজকে করা হয়েছে ওয়াসার চেয়ারম্যান। এ নিয়ে সিলেট আওয়ামী লীগে হতাশা বিরাজ করছে। মহিলা এমপি’র পদে সিলেটের নেত্রীরা হয়েছেন বঞ্চিত। দলীয় বিভক্তি ও কোন্দলের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নেতারা। আর পিছিয়ে পড়ছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। তবে; এবারের মন্ত্রিসভায় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এতে কিছুটা স্বস্তি আওয়ামী লীগে। আর শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় শক্তি বেড়েছে জেলা ও নগর বলয়ের নেতাদের। মেয়রের অবস্থান বিপরীত দিকে থাকলেও মন্ত্রী রয়েছেন তাদের বলয়ে। এতে করে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়রও একে অপরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছেন। এই অবস্থায় শক্তি সমান করতে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা চাচ্ছেন মেয়র আনোয়ারও। এ ব্যাপারে তার পক্ষ থেকে জোরালো লবিং চলছে ঢাকায়। এখনো প্রতিমন্ত্রীর সুখবর আসেনি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর কাছে। এ খবরের অপেক্ষায় তার অংশের নেতারা রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠজনরা।