ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন তামাক পণ্যে কার্যকর করারোপ

অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল (রিজভী)

(১ মাস আগে) ২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন

mzamin

আমরা অবগত ধূমপান ক্ষতিকর একটি অভ্যাস; যা শুধুমাত্র ধূমপায়ীকেই নয় তাদের আশেপাশের মানুষদেরও ক্ষতি করে। পাশাপাশি ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (জিএটিএস) ২০১৭ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ধোঁয়াযুক্ত (সিগারেট, বিড়ি ইত্যাদি) এবং ধোঁয়াবিহীন (জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি) তামাক সেবন করেন। তামাক পণ্য ব্যবহারকারীর অনুপাতের বিচারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে এবং বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের একটি। এর অন্যতম কারণ, দেশে তামাক পণ্যে সহজলভ্য ও সস্তা। তামাক পণ্যের ব্যবহার কমাতে বিভিন্ন মুখি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে কার্যকর করারোপ একটি স্বীকৃত পন্থা।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে তামাক পণ্যের কর হার অনেক কম এবং চার স্তর বিশিষ্ট; যা তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমাতে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। কারণ তামাক পণ্যের দাম কম হওয়ায় সহজেই নিম্ন আয় তথা সাধারণ মানুষ তামাক পণ্য সহজেই ক্রয় করতে পারছেন। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশ করেছে, তরুণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ধূমপানের হার কমাতে হলে অবশ্যই তামাক কর বৃদ্ধি করতে হবে।

এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) অনুচ্ছেদ ৬-এ সামগ্রিক জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির একটি অংশ হিসেবে তামাক কর নীতিমালা গ্রহণ এবং তামাকের ব্যবহার কমাতে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১৬ সালে ‘ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার স্পীকার্স সামিট’-এ প্রধানমন্ত্রী তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহণ করার ঘোষণা দেন।

বিজ্ঞাপন
তিনি বলেছিলেন, এর উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং একই সঙ্গে এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা।

এজন্য তামাকের মতো ঘাতক পণ্যের বাজার সংকুচিত করতে জনগণের চাহিদা কমানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর বাজারে এই পণ্যের চাহিদা তৈরির ক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের গ্রাহকদেরই বেশি টার্গেট করা হয়। তাই তামাক পণ্যের চাহিদা কমাতে হলে এই পণ্যগুলোর উপর কার্যকর পদ্ধতিতে করারোপ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে পারছে না; উপরন্তু বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সিগারেটের চারটি স্তর থাকার ফলে সিগারেট ব্যবহারকারী সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে কমদামি সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আবার নিম্নস্তরের সিগারেট সহজলভ্য হওয়ার তরুণ ও স্বল্প আয়ের মানুষ সহজেই তামাকপণ্যে আসক্ত হচ্ছে। তাই সরকারকে সমন্বিত ও কার্যকর তামাক কর নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। কর নীতিমালায় সরকারকে, বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আরও সক্রিয় হতে হবে। কার্যকর করারোপ করা হলে দেশে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করা যেমন সম্ভব হবে তেমনি সরকারের রাজস্বও উল্লেখযোগ্যহারে বাড়বে। যার ফলস্বরূপ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব হবে। 

এমতাবস্থায়, তামাকের নেতিবাচক প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার নিমিত্ত আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশসহ তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে- প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের নিম্ন স্তরের মূল্য ৬০ টাকা, মধ্যম স্তরের মূল্য ৮০ টাকা, উচ্চ স্তরের মূল্য ১৩০ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের সিগারেটের মূল্য ১৭০ টাকা র্নির্ধারণ করা এবং অন্যান্য স্তরের মত নিম্নস্তরের সিগারেটের উপরও ৬৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; সিগারেটের চারটি স্তর বিলুপ্ত করে একক স্তর প্রচলন, এবং সুনিদ্দিষ্ট করারোপ করা; ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা ও প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা ৫৫ টাকা, এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে কেবল সিগারেট খাত থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে, প্রায় ১৫ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১০ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে। এটি সুস্পষ্টভাবে সরকার ও জনগণ উভয়ের জন্যই লাভজনক। সর্বোপরি, এটি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

লেখক: প্রেসিডেন্ট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status