অর্থ-বাণিজ্য
শেয়ারবাজারে বড় দরপতন, তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন সূচক
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবারভয়াবহ দরপতনের মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। পতন গড়ালো সপ্তম দিনে। কমেছে বাজারের সব মূল্যসূচক। এর পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে বাজারে। বিনিয়োগকারীরা হারাচ্ছেন তাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি। তীব্র পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গত কয়েক কার্যদিবসের মতো সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবারও শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। ঢালাওভাবে সব থেকে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান পতনের মধ্যে পড়েছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।
মূল্যসূচকের বড় পতনের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতিও। ডিএসইতে ৫০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমেছে। ফলে সবক’টি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা সাত কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো। আর শেষ ২৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২০ কার্যদিবসেই দরপতন দেখতে হলো বিনিয়োগকারীদের।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হয়। এতে একই সপ্তাহেই ডিএসই’র বাজার মূলধন ৪৯ হাজার কোটি টাকার উপরে কমে যায়। আর টানা চার সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমে ৭০ হাজার কোটি টাকার উপরে।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসই’র প্রধান সূচক ২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকায় লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে বাজারের চিত্র বদলে যেতে থাকে। ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে বড় ধরনের ধস নামে শেয়ারবাজারে। সব খাতের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় এক পর্যায়ে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৭৮ পয়েন্ট কমে যায়। শেষদিকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মাত্রা কমায় সূচকের পতন কিছুটা কমে। এরপরও সবক’টি সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩৪টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩০টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৮৯৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ২৫শে মে’র পর সূচকটি সর্বনিম্ন অবস্থানে অবস্থান করছে। ২০২১ সালের ২৫শে মে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৫ হাজার ৮৮৪ পয়েন্ট ছিল। এরপর সূচকটি আর এত নিচে নামেনি।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবক’টি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণ কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে গোল্ডেন সনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং সিরামিকের ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো।
এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-লাভেলো আইসক্রিম, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, বেস্ট হোল্ডিং, এস এস স্টিল, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং আফতাব অটোমোবাইল। অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৬১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৭টির এবং ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।