শরীর ও মন
কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বোঝার উপায়
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
৩ জুলাই ২০২২, রবিবারআজকাল সারা বিশ্বেই কোলোরেক্টাল ক্যান্সার একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণায় উঠে এসেছে সারা বিশ্বে এটি তৃতীয় সর্বাধিক নির্ণয় করা ক্যান্সার এবং বিশ্বব্যাপী ক্যান্সারে আক্রান্ত মৃত্যুর চতুর্থতম কারণ। কোলন হলো পরিপাকতন্ত্রের শেষের অংশ। আর কোলনের শেষ অংশ হলো রেকটাম বা মলাশয়। কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হলো কোলন ও রেকটামের ক্যান্সার। কোলন ক্যান্সার সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়ে থাকে। যদিও এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। কোলনের ভেতর ছোট কোষের গুচ্ছ বা পলিপ হওয়ার মাধ্যমে এ ক্যান্সার তৈরি হওয়া শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই পলিপ কোলন ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। পলিপ ছোট হতে পারে এবং অল্প কিছু উপসর্গ তৈরি করতে পারে।
লক্ষণসমূহ কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ও উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য মলের প্রকৃতির পরিবর্তন মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন মলের সঙ্গে রক্ত, মিউকাস যাওয়া দুর্বলতা, পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা অন্ত্র সম্পূর্ণরূপে খালি না হওয়ার অনুভূতি, ঘন ঘন মলত্যাগ করা ওজন কমে যাওয়া। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেকেরই রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে।
ঝুঁকির কারণ: কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এমন কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
বয়স: কোলন ক্যান্সার যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের বয়স ৫০ বছরের বেশি। ৫০ বছরের কম বয়সী লোকদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের হার বাড়ছে।
কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বা পলিপের ইতিহাস: যদি ইতিমধ্যেই কোলন ক্যান্সার বা নন-ক্যান্সারাস কোলন পলিপ হয়ে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। প্রদাহজনক অন্ত্রের অবস্থা: কোলনের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত রোগ, যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রোনস ডিজিজ কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সিনড্রোম: কিছু জিন মিউটেশন পরিবারের কয়েক প্রজন্মের মধ্যদিয়ে গেলে তা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মাত্র অল্প শতাংশ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জিনের সঙ্গে যুক্ত। সবচেয়ে সাধারণ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সিনড্রোম যা কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় তা হলো- ফ্যামিলিয়াল অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (এফএপি) এবং লিঞ্চ সিনড্রোম। এগুলো বংশগত ননপলিপোসিস কোলোরেক্টাল ক্যান্সার (এইচএনপিসিসি) নামে পরিচিত।
কোলন ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস: এই রোগে আক্রান্ত নিকটাত্মীয় থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। পরিবারের একাধিক সদস্যের কোলন ক্যান্সার বা রেকটাল ক্যান্সার থাকলেও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি থাকে।
কম আঁশ ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাদ্য: কোলন ক্যান্সার এবং রেকটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কম আঁশ ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যারা লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত মাংস বেশি খান তাদের মধ্যে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়তা ও ডায়াবেটিস: যারা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় অর্থাৎ শারীরিক কাজকর্ম বা ব্যয়াম করেন না তাদের কোলন ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম রয়েছে, তাদেরও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
স্থূলতা: স্থূল ব্যক্তিদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং সাধারণ ওজন হিসেবে বিবেচিত মানুষদের তুলনায় কোলন ক্যান্সারে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ধূমপান ও মদ্যপান: যারা ধূমপান ও মদ্যপান করেন তাদের কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
বিকিরণ থেরাপি: পূর্ববর্তী ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য পেটে রেডিয়েশন থেরাপি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, লেপারোস্কোপিক ও জেনারেল সার্জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। চেম্বার: ১৯ গ্রীন রোড, এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা। ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯