শেষের পাতা
সতর্ক মুদ্রানীতি ঘোষণা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১ জুলাই ২০২২, শুক্রবারঅর্থের জোগান কমিয়ে মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) সুদহার আরও এক দফা বাড়িয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি (মনিটরি পলিসি স্টেটমেন্ট) ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রবৃদ্ধি অর্জন দু’টি দিক সামনে রেখেই দেয়া হয়েছে নতুন মুদ্রানীতি। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির। এটি তার শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণা। আগামী ৩রা জুলাই গভর্নর হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করে বিদায় নিচ্ছেন তিনি। গভর্নর বলেন, এবার সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ভঙ্গি অনুসরণ করা হয়েছে, যা কিছুটা সংকোচনমুখী। অনুষ্ঠানে উপ?স্থিত ছি?লেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও নির্বাহী পরিচালকরা। এক সময় ৬ মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হলেও গভর্নর ফজলে কবির ১ বছরের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার প্রচলন করেন। এর আগে করোনার কারণে গত দুই বছর শুধু ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করা হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতোটুকু বাড়বে বা কমবে এর একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু উপকরণ ব্যবহার ছাড়া তেমন কোনো করণীয় নেই। যে কয়েকটি উপকরণ রয়েছে, তার অন্যতম প্রধান হলো- টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ বেসরকারি খাতে কম হারে ঋণ দেয়া। এজন্য আগামী অর্থ বছরের জন্য মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারিখাতে ঋণ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪.১ শতাংশ। চলতি বছর যা ছিল ১৪.৮০ শতাংশ। একই সময়ে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬.৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ ধরা হয়েছে ১২.১ শতাংশ যা কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফিতির সিলিং-এর সমষ্টির তুলনায় কিছুটা কম। করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়া সাপেক্ষে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার হওয়ায় চলতি অর্থবছরে অর্থের আয় গতি বাড়বে বলে আশাবাদী বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার সতর্কতামূলক মুদ্রানীতি ভঙ্গি অনুসরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, টাকার অভ্যন্তরীণ বাহ্যিক মান, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা হবে নতুন অর্থবছরের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ। গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি হার হিসেবে বিবেচিত রেপো সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থে?কে ব্যাংকগুলো জরুরি প্রয়োজনে অর্থ নিলে গুণতে হবে অতিরিক্ত সুদ। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে ৫.৬ শতাংশে রাখার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি গিয়ে ঠেকেছে ৭.৪২ শতাংশে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে রেকর্ড। সরকার বাজেটে যে নীতি ও উন্নয়ন কর্মসূচি ঠিক করে, তা বাস্তবায়নের জন্য সহায়ক আর্থিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখাই মুদ্রানীতির লক্ষ্য। এমনভাবে এই নীতি সাজানো হয় যাতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে বছরের পুরো সময়টায় বাজারে অর্থপ্রবাহ ও আঙ্গিক কেমন হবে, তাও মুদ্রানীতিতে ঠিক করে দেয়া হয়।