ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

বিশ্বজমিন

মিয়ানমার সংঘাত

নতুন করে বৈশ্বিক ফোকাসের প্রয়োজন

মানবজমিন ডিজিটাল
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, রবিবারmzamin

মিয়ানমারকে ভুলে গেলে চলবে না। যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাগুলো এখন খবরের শিরোনামে এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ তার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে পা রাখছে, তাই বিশ্বের অন্যত্র ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বৈশ্বিক ফোকাসের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।  মিয়ানমারে আসন্ন পরিবর্তনের দিকে এবার  নজর দেবার সময় এসেছে। দেশের মধ্যে সংঘাত  যেহেতু একটি জটিল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে, তাই  মধ্যস্থতার ওপর বিশ্বব্যাপী ফোকাস সফল হওয়ার একটি ভালো সুযোগ রয়েছে। বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্বারা একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা ফলাফলের উন্নতি ঘটাতে পারে, যা মিয়ানমার এবং তার প্রতিবেশী উভয়ের জন্যই ফলপ্রসূ হবে। আর তাই এক্ষেত্রে বৈদেশিক নীতি এবং কূটনীতিকে সমানভাবে কাজে লাগাতে হবে।

বৈশ্বিক মিডিয়া  এবং নীতিনির্ধারকরা মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন এবং অন্যত্র যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করেছেন, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা কম মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সামরিক অভ্যুত্থানের তিন বছর পর জান্তা-নেতৃত্বাধীন স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল  (ঝঅঈ) এবং এর বিরোধীদের মধ্যে বিরোধের সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই যা দেশকে আরও একটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অচলাবস্থা এবং নিরাপত্তাহীনতার  দিকে ঠেলে দিয়েছে। সামরিক স্থাপিত সরকার এবং জান্তার বিরোধিতাকারী একটি সশস্ত্র বিদ্রোহের মধ্যে লড়াই ২০২৩ সালের অক্টোবরে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বেসামরিক মৃত্যু এবং বড় আকারের বাস্তুচ্যুতি ঘটে। বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ঊঅঙং)- পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (চউঋ)সহ  জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার, সামরিক-স্থাপিত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান  আরও জোরদার করেছে।  সামপ্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন  মিয়ানমারের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে অভিযান পরিচালনা করেছে এবং ১০০টিরও বেশি সামরিক অবস্থান দখল করেছে বলে দাবি করেছে। সামরিক বাহিনী  উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুুখীন হয়েও বিরোধীদের দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং কামান ও বিমান হামলার মাধ্যমে প্রতিশোধ নিয়েছে।

চীন দ্বারা সমঝোতাকৃত একটি যুদ্ধবিরতি স্বল্পস্থায়ী ছিল। অং সান সু চির (যিনি এখন কারাগারে) নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর গত জানুয়ারিতে জান্তার ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিল জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরও ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় অনুসারে মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুতির হার এখন রেকর্ড পর্যায়ে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ২.৬ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ বৃদ্ধির পর থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ বিমান ও কামান হামলা, মৃত্যুদণ্ড, নির্যাতন এবং আটক থেকে বাঁচতে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

আনুমানিক ১৮.৬ মিলিয়ন লোকের সহায়তার প্রয়োজনের সঙ্গে মানবিক পরিস্থিতিও সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সামরিক বাহিনী মানবিক সহায়তা প্রদানে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে এবং প্রয়োজনে তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টাকারী সংস্থাগুলোর জন্য আমলাতান্ত্রিক বাধা তৈরি করছে।

নিরাপত্তা উদ্বেগ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও  ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ মিয়ানমারের অশান্ত রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে সীমান্তে তার বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে। ভারত তার নিরাপত্তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে মিয়ানমারের সঙ্গে ফ্রি মুভমেন্ট শাসন স্থগিত করেছে। থাইল্যান্ড সংঘাতের আরেকটি ‘ফ্রন্টলাইন’ রাষ্ট্র, তারা  মিয়ানমারের সঙ্গে ২৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত ভাগ করে এবং মানবিক সহায়তার জন্য একটি স্বীকৃত ট্রান্সমিশন পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সামরিক বাহিনীর ওপর এবং জান্তার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

বৃটিশ সরকার ১লা ফেব্রুয়ারি গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বেসামরিক লোকদের নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত সামরিক ইউনিটের ওপর তার সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে নিষেধাজ্ঞার ব্যবস্থা কঠোর করার জন্য একটি সমন্বিত পন্থা অবলম্বন করতে হবে, পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান), জাতিসংঘ (ইউএন) এবং মূল আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সঙ্গে কার্যকর সমাধানের অনুসন্ধান করতে হবে। মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নতুন বিশেষ দূত নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি আনতে হবে।  যে পদটি ২০২৩ সালের জুনে নোলিন হেইজার চলে যাওয়ার পর থেকে শূন্য রয়েছে।  এই পদক্ষেপ  জাতিসংঘকে মিয়ানমারের সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়মিতভাবে সম্পৃক্ত  হতে এবং আসিয়ানের প্রতিপক্ষ আলুনকিও কিত্তিখুনকে সমর্থন করতে সহায়তা করবে। সংঘর্ষে জড়িত পক্ষগুলোকে  আলোচনার দিকে চাপ দিতে পশ্চিমারাও এগিয়ে  এসে  একটি অ্যাডহক গ্রুপ তৈরি করতে পারে, যা সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেবে এবং একটি নতুন বেসামরিক সরকারের পথ খুলে দেবে।

যদি সংঘাতের অবসান না করা যায় তবে বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকবে এবং মানবিক পরিস্থিতি- যা ইতিমধ্যেই ভয়াবহ, তা আরও খারাপের দিকে যাবে। মিয়ানমারের জনগণের সামনে  শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এবং টেকসই শান্তির জন্য সমাধান পাওয়া না গেলে বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বিরাজ করবে অস্থিতিশীলতা।

সূত্র: টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status