বাংলারজমিন
শান্তা’র মেডিকেলে পড়া হবে কী!
হুমায়ুন কবীর রিন্টু, নড়াইল প্রতিনিধি
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, বৃহস্পতিবার
কোনো কিছুতেই আটকাতে পারেনি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। চরম দরিদ্রাতা ও প্রতিকূল পরিবেশকে চ্যালেঞ্জ করে মেডিকেলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে শান্তা সেন। তবে অর্থাভাবে তার ভর্তি ও পড়াশোনা হুমকির মুখে পড়েছে। সে পাবনা মেডিকেল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। সে নড়াইল সদর উপজেলার বড় মিতনা গ্রামের দিনমজুর শিবুপদ সেন ও গৃহিণী শিবানী সেনের একমাত্র মেয়ে। নিভৃত পল্লীর অত্যন্ত দরিদ্র ঘরে জন্ম নেয়া শান্তা সেন ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি খুবই মনোযোগী। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী করেছে বড় মিতনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চাঁচড়া নফেল উদ্দিন বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেছে। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি পাস করেছে। প্রত্যেকটি পরীক্ষাতে সে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। এরপর খুলনার ডিএমসি স্কলার-এ ৪ মাস কোচিং করেছে। মায়ের দুধ বিক্রির টাকা এবং বিভিন্ন সমিতি (এনজিও) হতে নেয়া ঋণের টাকায় চলছিল তার এতদিনের পড়াশোনা।
শান্তা সেন জানায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার পর ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করার কথা মাথায় আসে। বাবা গরিব হওয়ায় প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি। হাইস্কুলে পড়াকালে মিতনা গ্রামের দেবাশীষ বিশ্বাস তাকে মাঝে মধ্যে একটু দেখিয়ে দিতেন। তিনি তাকে ভালো করে পড়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। চাঁচড়া নফেল উদ্দিন বিশ্বাস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুণ্ডরিক বিশ্বাস তাকে পড়াশোনার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। ভালো করে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখাতেন। তার উৎসাহে এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি। এরপর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াকালে পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক আরিফুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় পড়াশোনার গতি আরও বেড়ে যায়। অদম্য ইচ্ছাশক্তি নিয়ে চলে নিজেকে তৈরির অবিরাম প্রচেষ্টা। মেডিকেল ভর্তির ফলাফল জানার পরেই বোঝা গেছে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকমণ্ডলীর সহযোগিতা, বাবা-মায়ের হাড়ভাঙা খাটুনির টাকা, আর নিজের পরিশ্রম কাজে লেগেছে। এখন একটাই স্বপ্ন ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে মানুষকে সেবা দেয়া। শান্তা সেনের মা শিবানী সেন বলেন, গ্রামের বিভিন্ন লোকের বাড়ি হতে দুধ জোগাড় করে শহরে নিয়ে বিক্রি করি। এ কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করায়। মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় তিনি বেজায় খুশি। তবে তার ভর্তি ও পড়াশোনার ব্যয়ভার কীভাবে বহন করবেন, এ নিয়ে খুবই চিন্তিত বলে তিনি জানান।
শান্তা সেনের বাবা শিবুপদ সেন বলেন, তাদের বসতভিটা ছাড়া খুব সামান্য জমি ছিল। ছেলে সমীরণ সেন ও মেয়ে শান্তা সেনকে পড়াতে গিয়ে কিছু জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। আর যৎসামান্য জমি ছিল, তা বন্ধক দিয়েছেন। নিজে দিনমজুরি করেন। আর স্ত্রী দুধ বিক্রি করেন। তাদের সামান্য আয়ে সন্তানদের পড়াশোনা এবং অন্যান্য খরচ চালাতে গিয়ে ইতিমধ্যে অনেক দেনা হয়ে গেছেন। ছেলে সমীরণ গণিত বিষয়ে অনার্স পড়ে। আর মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। তাদের পড়াশোনা শেষ হলে হয়তো দেনা পরিশোধ হতে পারবেন। বন্ধক দেয়া জমিটুকু ছাড়িয়ে নিয়ে চাষাবাদ করতে পারবেন। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, মেয়েকে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকার জোগাড় করতে পারেননি। এরপর প্রতি মাসের টাকা কীভাবে দিবেন? এমন নানা ধরনের কথা বলার সময় তার চোখে জল ছলছল করতে থাকে। কারও সহযোগিতা পেলে নিবেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কে দিবে সাহায্য? কার কাছে যাবো? আমি তো লেখাপড়া মোটেই জানি না। গরিব মানুষ। কেউ তো আমার কথা শুনতেও চাইবে না। আপনারা যদি একটু কাউকে বলে ব্যবস্থা করে দিতে পারতেন!
পাঠকের মতামত
যোগাযোগের নম্বর দরকার ছিল,তার ভর্তির বেপারে সাহায্যে করার চেষ্টা করব।
How can I contact her family