শেষের পাতা
অধিক সংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে তেল আমদানির অনুমতি দেয়ার সুপারিশ
আল-আমিন
৩০ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার
দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম লাগাম ছাড়া। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার কারণ ও কমানোর জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমদানিকারক ৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২টি প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ৪টি প্রতিষ্ঠান বোতলজাত তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সরকার তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আমদানিকারক, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবং অসাধু কার্যকলাপের কারণে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বছরে ভোজ্য তেলের মোট চাহিদা প্রায় ২১.৭ লাখ টন। যার প্রায় ২০ লাখ টনই আমদানি করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে প্রতি লিটার বোতল ১০৮ টাকা ৭৫ পয়সা, ২০১৯ সালে ১০৪ টাকা ৩০ পয়সা, ২০২০ সালে ১১৩ টাকা ৭৫ পয়সা, ২০২১ সালে ১৪৫ টাকা, ২০২২ সালের মার্চে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর পূর্বে ১৬৭ টাকা এবং ২০২২ সালের মে মাসে ১৯৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে দাম বৃদ্ধির হার ২.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি শুরু হয়ে ২০২২ সালের মার্চে ২২.৬৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর ২৮শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেকো উইদাদো এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়া থেকে সকল ধরনের পাম তেলের রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেন। এতে সারা বিশ্বে তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের প্রায় ২০ হাজার টন পাম তেল আমদানি প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এতে দেশে ভোজ্য তেলের ঘাটতি ও অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ে ৬টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে সয়াবিন তেল আমদানি করে। ভোজ্য তেল নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটি সরকারের কাছে ১০টি সুপারিশ করেছে। তা হলো: সরকার নির্ধারিত মূল্যে পরিশোধিত সয়াবিন ও পরিশোধিত পাম তেল সুপার তেল বিক্রয় নিশ্চিত করা। চলমান তেল সংকট নিরসনে দ্রুত বিকল্প দেশ থেকে তেল আমদানির ব্যবস্থা করা। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহে অধিক মুনাফার আশায় যাতে তেল মজুত করে রাখতে না পারে এ জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা। যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ অবৈধ লাভের আশায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির লক্ষ্যে তেল মজুত রেখেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি নিশ্চিত করা।
আমদানিনির্ভরতা কমাতে দেশীয় সয়াবিন তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করা ও সয়াবিন তেলের বিকল্প ভোজ্য তেল যেমন- সরিষার তেল, অলিভ অয়েল, সূর্যমুখী তেল, নারিকেল তেল ও চিনাবাদাম তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি করা। তেলের মূল্য বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী কোনো পক্ষ যাতে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ থাকা। দেশের ভোজ্য তেলের সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে রিফাইনারিগুলোতে কী পরিমাণ ভোজ্য তেল মজুত রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে ভোজ্য তেল সরবরাহ করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহের জন্য সকল কারখানায় একই সময়ে অভিযান পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা প্রদান করা এবং উক্ত প্রতিষ্ঠান সমূহের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানি তেল, উক্ত তেলের মজুত, সরবরাহ সংক্রান্ত যাবতীয় হিসাব সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা। ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও অধিক সংখ্যক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে বিদেশ থেকে তেল আমদানির সুযোগ দেয়া এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ প্রদান করা। জনবিভ্রান্তি রোধে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির সংবাদ জনগণের কাছে ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রকাশ করা।