প্রথম পাতা
স্বার্থের জন্যই নিষেধাজ্ঞা
তাদের ভেতর বাহিরের রূপ ভিন্ন
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৯ জুন ২০২২, বুধবারপররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিদেশিরা কিছু বললেই সেটা সত্য নয়, তারা অনেক সময় ফন্দি-ফিকিরের কারণে নানা কাণ্ড করে। স্যাংশন বা নিষেধাজ্ঞা তাদের স্বার্থের জন্যই- এমন মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, পাবলিকলি তাদের অবস্থান এক, আর প্রাইভেটলি তাদের অবস্থান আরেক। লন্ডন সফরে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার কড়া সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের প্যাঁচে ফেলতে চেয়েছিল, নিচে ফেলার চেষ্টা করেছিল, অপবাদ দিয়েছিল। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির মধ্য দিয়ে আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, গৌরবের সেই সেতু তৈরির মধ্য দিয়ে আমরা অপবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছি।
পদ্মা সেতুর পরিকল্পনায় যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং ঘুষ গ্রহণের অপবাদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক সেইসব ব্যক্তিত্ব এবং জাতি হিসেবে বাংলাদেশের কাছে তাদের নিজে থেকে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানকে বড় ভাই আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মসি ভাই এবং সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়ার মতো ক্লিন মানুষদের বিরুদ্ধে তারা অপবাদ দিয়েছে। যাদের আমরা বহু বছর ধরে চিনি। সবাই ক্লিন এটা বলছি না, কিন্তু এই দু’জন যে দুর্নীতি মুক্ত সেটা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। সুতরাং তাদের সম্মানহানির জন্য বিশ্বব্যাংকের উচিত নিজে থেকে ক্ষমা চাওয়া।
আমাদের বহু পণ্ডিত বিদেশিদের কথায় লাফালাফি করে। সেইসব পণ্ডিতকে জ্ঞানপাপী আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের বোধহয় এখন উপলব্ধির সময় এসেছে যে, বিদেশিদের কথায় লাফালাফি করা ঠিক নয়। তাদের চিন্তার পরিধি বাড়ানোরও পরামর্শ দেন মন্ত্রী। ড. মোমেন বলেন, আমাদের দেশের জন্য যেটা মঙ্গল, আমাদের জনগণের জন্য যেটা শুভ- সেটাই সরকার করে। পদ্মা সেতুকে ঐতিহাসিক অর্জন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের আত্মমর্যাদার প্রতীক। অর্থনৈতিকভাবে এটি আমাদের অর্জন তো বটেই, কিন্তু তার চেয়েও বড় অর্জন হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে আমরা যে সেই আত্মবিশ্বাসের স্বাক্ষর রেখেছি। আমরা যে অপমান সহ্য করতে পারি না- গৌরবের সেই সেতু তৈরির মধ্য দিয়ে আমরা তা প্রমাণ করেছি। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপ জাতিকে অনেক ওপরে নিয়ে গেছে। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি তার (প্রধানমন্ত্রীর) সিদ্ধান্ত সঠিক। পদ্মা সেতু জাতিকে সম্মান দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সারা পৃথিবীকে জানান দিতে চাই বাঙালি পারে। আমার দেশ পারে। আমরা গরিব হতে পারি, আমাদের সম্পদের অপ্রতুলতা থাকতে পারে, আমরা থেমে থাকি না।
বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক উক্তি স্মরণ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বঙ্গবন্ধু বাঙালিকে যেমন চিনেছিলেন এবং সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি এটি উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার কন্যা শেখ হাসিনার তুলনা করে ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাঙালি জাতিকে দাবাইয়া রাখতে পারবা না। তার ঔরসজাত কন্যা প্রধানমন্ত্রী সেটা আবারও প্রমাণ করেছেন। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের দুর্লভ অর্জন আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের গৌরবের অর্জন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এবং ফরেন সার্ভিস একোডেমির রেক্টর আসাদ আলম সিয়াম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পদে পদে ষড়যন্ত্র এবং বিরোধিতা উপেক্ষা করে সরকার যেভাবে পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন করেছে তা নিয়ে একটি বই বের করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন, শিগগির এর মোড়ক উন্মোচন হবে।