ঢাকা, ১৯ মে ২০২৪, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে মন্ত্রীকে দেখাতে লাইনে ‘ডামি’ ভোটার

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৮ জানুয়ারি ২০২৪, সোমবার
mzamin

সিলেটের দুর্গাকুমার পাঠশালা ভোটকেন্দ্র। জাতীয় নির্বাচন এলেই এ কেন্দ্রের দিকে নজর থাকে সবার। এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কারণ- এ কেন্দ্রের ভোটার সিলেট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। সকাল থেকে দুর্গা কুমার পাঠশালা কেন্দ্রে সাংবাদিকদের ভিড় ছিল। কিন্তু সে অনুপাতে ভোটার আসেনি কেন্দ্রে। দু’একজন করে এসে ভোট দিয়ে চলে গেছেন। ভোটারের সারি কখনোই লক্ষ্য করা যায়নি। তবে মন্ত্রী আসার আগে কেন্দ্রে অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। সকাল ৯টার একটু পর সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শতাধিক নার্সের একটি বহর এসে অবস্থান নেন মধুবন সুপার মার্কেটের সামনে।

বিজ্ঞাপন
তাদের সঙ্গে ব্যস্ত ছিলেন হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক। কী করতে হবে- সে ব্রিফও করছিলেন। 

এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যেও কৌতুহল দেখা দেয়। সকাল ১০টায় কেন্দ্রেভোট দিতে আসবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এটি পূর্বের নির্ধারিত সময়সূচি। মন্ত্রী আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা। আসেন সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। ঠিক ১০ মিনিট আগে হঠাৎ করে নিয়ে আসা শতাধিক নার্সকে কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকানো হয়। এরপর সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ভোটারের লাইনে। তারা যখন দাঁড়ানো ছিলেন তখনই মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এসে ঢোকেন কেন্দ্রে। সঙ্গে তার নির্বাচন পরিচালনাকারী নেতারা। মন্ত্রী আসায় কেন্দ্রে হুলস্থুল পড়ে যায়। কেন্দ্রের নির্বাচনী কর্মকর্তারা এবং সাংবাদিকরা ব্যস্ত হয়ে উঠেন। মন্ত্রী কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ভোট দেন। প্রায় ৫ মিনিট পর বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি ভোটের পরিবেশ ও ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হরতাল ডাকায় বিএনপি’র সমালোচনাও করেন। 

মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি’র হরতাল ঢংঢাং। মিডিয়াতে বলার জন্য বলা। আজকে বন্ধের দিন, ভোটের দিন, উৎসবের দিন। দেশে খুব সুন্দর পরিবেশ বিরাজমান। কোথাও জোর-জবরদস্তি নেই। আমাদের ভোট দিলে জনগণের মঙ্গল হয়। টানা ৩ দিনের ছুটির কারণে ভোটার উপস্থিতিতে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান মন্ত্রী। ভোটার উপস্থিতির হার প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমেরিকাতেও কখনো চুয়াল্লিশ, কখনো তেত্রিশ শতাংশ ভোট হয়। এ ছাড়াও মোট ভোটারদের এক তৃতীয়াংশ তরুণ ভোটারদের নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 

মন্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর সাংবাদিকরা লাইনে দাঁড়ানো ভোটারের পরিচয় শনাক্ত করতে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় কয়েকজন ভোটার জানান, তারা ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স। তাদের এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের নির্দেশে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তারা ওই কেন্দ্রের ভোটার না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় অনেক নারী ভোটার ভয়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান। পরে একে একে সবাই কেন্দ্রের ভেতর থেকে বেরিয়ে যান। ৫ মিনিটের মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় পুরো কেন্দ্র। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স রত্না, সুর্বণা, অঞ্জনা ও সুলতানা নিজেদেরকে বারুদখানার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু বাসার ঠিকানা বলতে পারেননি। এদিকে এমন ঘটনায় মন্ত্রী কেন্দ্র থাকাকালেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ দেখান। নার্সদের কেন লাইনে আনা হয়েছে এর কারণও জানতে চান তারা। এতে মন্ত্রী নিজেও বিতর্কিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। কিন্তু তাদের এই প্রশ্নের সদুত্তর দেননি কেউ। এ বিষয়ে হাসপাতালের নার্সেস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেককে সাংবাদিকরা বারবার প্রশ্ন করলেও কোনো সদুত্তর পাননি। তিনি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মৃন্ময় দাশ ঝুটন মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রীকে নিয়ে তিনি ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। ওই সময় বাইরে কী ঘটেছে সেটি তিনি বলতে পারেননি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এ আসনের ভোট নিরুত্তাপই হয়েছে। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া কেন্দ্রে অন্য কারও উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। শান্তিপূর্ণভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ভোট। সকালে মাদ্রাসা, পাইলট স্কুল, কাজিটুলা, মদনমোহন কলেজসহ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে ভোটারের উপস্থিতি কম। কেন্দ্রে দু’একজন করে ভোটার যাচ্ছেন। ভোট দিয়ে চলে আসছেন। কোনো জটলাও নেই। বাইরের পরিস্থিতিও ছিল একই রকম। দুপুরে নগরীর পাঠানটুলা এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাঠানটুলা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবার আলী শেখ। তিনি জানান, প্রায় ১০০-১২০ জন দুর্বৃত্ত একটি গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে পাঠানটুলা দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status